ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার বিচারকার্য নিয়ে জটিলতা আরো বেড়েছে।
ইসরাইলের চ্যানেল ১২-এর খবরে জানানো হয়েছে, আগামী সপ্তাহে নির্ধারিত নেতানিয়াহুর বিচারের অধিবেশন বাতিল করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এসেছে জেরুজালেম জেলা আদালতে একটি গোপন অধিবেশনে নেতানিয়াহুর অংশগ্রহণের পরপরই।
এদিকে, ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’র বলেছেন, জাতীয় ও জনস্বার্থে বর্তমানে এই বিচারের অধিবেশন স্থগিত করা উচিত। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সরকার পক্ষ থেকে বিচারের বিলম্বকে সমর্থন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গোপন ওই অধিবেশনের প্রেক্ষাপটেও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তাজনিত দিক। ইসরাইলি ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন এক নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজের অনুরোধে আদালতের বিচারকদের কাছে একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন। এর আগে হারেৎজ জানিয়েছিল, নেতানিয়াহু তার সাক্ষ্য বাতিলের অনুরোধ আদালত কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর গোপন ওই অধিবেশনে উপস্থিত হন।
এদিকে, বিচারের এই স্থগিতাদেশের পেছনে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এদিন সকালে তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে নেতানিয়াহুর বিচার বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি লেখেন, ‘এই নিয়ন্ত্রণহীন প্রসিকিউটররা নেতানিয়াহুর সাথে যা করছেন, তা পাগলামি।’ তিনি দাবি করেন, চলমান আইনি প্রক্রিয়া নেতানিয়াহুর হামাস এবং ইরানের সাথে আলোচনা চালানোর ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
ট্রাম্প আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে, যা ইসরাইলকে রক্ষা ও সমর্থনকারী অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি। আমরা এটা সহ্য করব না।’ এ বক্তব্যে তিনি ইসরাইলকে সহায়তা স্থগিত করার হুমকিও দেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এটি প্রথমবার নয় যে ট্রাম্প নেতানিয়াহুর বিচারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেছিলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে বাঁচাবে, ঠিক যেমনটি ইসরাইলকে বাঁচিয়েছিল’ এবং যোগ করেন, ‘নেতানিয়াহুর বিচার অবিলম্বে বাতিল করা উচিত অথবা তাকে ক্ষমা করা উচিত।’
রয়টার্স জানিয়েছে, ২০১৯ সালে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি এবং বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়, যেগুলো তিনি বরাবর অস্বীকার করে আসছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে তিনটি ফৌজদারি মামলায় ২০২০ সালে বিচার শুরু হয়। এছাড়া গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তাকে ওয়ান্টেড তালিকায় রেখেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, নেতানিয়াহুর বিচার স্থগিতের সিদ্ধান্ত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
সূত্র : আল জাজিরা