মেহেদি হাসান পলাশ
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরাইল- ইরান সমাধানের জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন। প্রশ্ন হল, বর্তমান হারে ইরান যদি আগামী ১৫ দিন ইসরাইলে বোমা নিক্ষেপ করতে থাকে, ইসরাইল গাজায় পরিণত হবে। এটা ট্রাম্প নিজেও জানেন। তবুও কেন এই পথ বেছে নিলেন?
১. ট্রাম্প ১৫ দিন সময় দিয়েছেন বলেই যে তিনি ১৫ দিন অপেক্ষা করবেন এমনটি নাও হতে পারে। তিনি আলোচনার ফাঁদে ইরানকে অপ্রস্তুত রেখে আক্রমণ করে বসতে পারেন। যেমনটা শুরুতে হয়েছিল। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা সমাপ্তির পূর্বেই ইসরাইল ইরানে আক্রমণ করে বসে। এটা ট্রাম্পের প্রতি এক ধরনের অপমানকর হলেও তিনি সে বিষয়টি নিয়ে নেতানিয়াহুকে প্রশ্নবিদ্ধ করেননি।
২. যুক্তরাষ্ট্র ইরান আক্রমণে ভয় পাচ্ছে। ইরান প্রমাণ দিয়েছে তার মিসাইলের সামনে মার্কিন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতটা অকার্যকর। এ অবস্থায় ইরান আক্রমণে গেলে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলো ও পেট্রোলিয়াম উৎপাদন স্থাপনাগুলো চরম বিপদে পড়বে। বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরে থাকা মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলো খুব সহজেই ইরানি আক্রমণের মুখে অসহায় হয়ে পড়বে। এ কারণে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে আসলে তার অর্জন করার কিছু নেই।
৩. মার্কিনী মিত্ররা ইরানের সাথে যুদ্ধে জড়াতে চাইছে না। এখন পর্যন্ত ব্রিটেন ছাড়া কেউই এই যুদ্ধে মার্কিনিদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্র কোথাও একক যুদ্ধ পরিচালনা করেন। ইরাক, আফগানিস্তান, ইউক্রেন- সর্বত্রই তারা মিত্রশক্তির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে যুদ্ধে গেছে। কিন্তু এখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নেটো জোটের বন্ধুরা যুদ্ধে জড়াতে চাইছে না।
৪. ইরানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে রাশিয়া ইউক্রেনে আরো অগ্রসর হতে পারে। চায়না তাইওয়ান দখলে নিতে পারে। অন্য অনেক মুসলিম দেশ ইরানের পাশে এসে দাঁড়াতে পারে। চায়না ও রাশিয়া প্রকাশ্যে ইরানের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারে। বিশ্বে ও রাজনীতি কৌশলগত ও সামরিক ক্ষেত্রে এরকম আরো কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে মার্কিন স্বার্থ ও শক্তিকে। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র একসাথে অনেকগুলো ফ্রন্টে মোকাবেলা করতে সক্ষম নাও হতে পারে।
৫. ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম স্লোগান ছিল- যুদ্ধ বিরোধীতা। ইতোমধ্যেই নিজ দেশের অধিকাংশ লোক ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জড়াতে সম্মতি দিচ্ছে না। ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন ট্যাক্স পেয়ারদের অর্থের সদ্ব্যবহার নিয়ে ট্রাম্প যে প্রচারণা চালিয়েছে নিজ দেশে, এখন সচেতন মার্কিনীরা তাদের অর্থ ইসরাইলের স্বার্থে ব্যবহৃত হতে দিতে রাজি নয়। এমনকি প্রভাবশালী রিপাবলিকানরাও এই দলে অবস্থান করছে। ফলে অভ্যন্তরীণভাবে তিনি বাধার মুখে পড়ছেন।
৬. ট্রাম্প পাকিস্তানি ফিল্ড মার্শাল আসিফ মনির কে রাষ্ট্রপতি মর্যাদায় ডেকে নিয়ে মূলত আফগান যুদ্ধে পাকিস্তানকে যেভাবে ব্যবহার করেছে সেই একই ভাবে ব্যবহারের ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকতে পারেন। কিন্তু আফগানিস্তান ও ইরান যে এক নয় সেটি আসিফ মুনির খুব ভালোভাবেই জানেন। তাছাড়া আফগানিস্তানে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এ ব্যাপারে পাকিস্তানকে সম্মত করা সম্ভব হবে না। সে কারণে আসিফ মনিরের সাথে বৈঠকের পরই ট্রাম্প ১৫ দিনের সময়সীমা ঘোষণা করেছেন।
৭. যুদ্ধ আসলে এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে যেখানে মধ্যস্ততা করার খুব কঠিন। কোন একটি পক্ষ দুর্বল না হলে এই যুদ্ধে কোন মধ্যস্ততাই কার্যকর হবে না। তবে পারমাণবিক আঘাত ছাড়া এই যুদ্ধে ইরানকে দুর্বল করা সম্ভব নয়। মোসাদবিরোধী ধরপাকড়ে এই যুদ্ধে ইসরাইলের প্রধান অস্ত্র ও পরীক্ষিত শক্তি ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তারা এখনো কতটা কার্যকর অবস্থায় রয়েছে তা বলা কঠিন।
অন্যদিকে আয়তন ও জনসংখ্যার সাইজের কারণে দীর্ঘদিন ইসরাইলের পক্ষে ইরানি মিসাইল সহ্য করে যাওয়া সম্ভব নয়। মরতে ভয় পাওয়া ইসরাইলিরা ইতিমধ্যেই ব্যাপকভাবে পালাতে শুরু করেছে। বিমানবন্দর ও সীমান্ত বন্ধ করেও তাদের আটকানো যাচ্ছে না। ফলে ইরান ছাড় না দিলে অপারমাণবিক যুদ্ধে ইজরাইলের জয় লাভের কোন সম্ভাবনাই নেই।
লেখক : অ্যাসিসট্যান্স এডিটর, ইনকিলাব