ট্রাম্প ও এরদোগানের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ

ড. সাঈদ আল হাজ

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের মার্কিন সফর আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। এই সফর দুই দেশের সম্পর্কের নতুন দিক নির্দেশ করছে।

প্রেক্ষাপট
জো বাইডেনের শাসনামলে তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ছিল শীতল। এরদোগান তখন ওয়াশিংটন সফর করেননি, পরিকল্পিত সফরও বাতিল হয়েছিল। কিন্তু হাকান ফিদানের সাম্প্রতিক সফর সেই তুলনায় দ্রুততর।

এই সফরের সময়সূচি নির্ধারণে বেশ কিছু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঘটনা ভূমিকা রেখেছে। প্রথমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে ইউক্রেনের সমালোচনা করেছেন। আঙ্কারার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সুনাম রয়েছে, যা তাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলা, লেবানন-সিরিয়ার অস্থিরতা, ইয়েমেনে মার্কিন হামলা ও ইরানের হুমকি এই অঞ্চলের বড় ইস্যু। যদিও গাজার প্রশ্নে ওয়াশিংটন ও আঙ্কারা ভিন্ন অবস্থানে, তুরস্কের ভূমিকা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

সিরিয়ায় পরিবর্তন তুরস্কের জন্য বড় অর্জন। তবে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হল সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (SDF), যাদের প্রতি মার্কিন সমর্থন আঙ্কারার জন্য অস্বস্তিকর।

স্থানীয় প্রেক্ষাপট
সফরের আগে তুরস্কের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। পিকেকে-র ঐতিহাসিক নেতার দল ভেঙে অস্ত্র সমর্পণের ঘোষণা। সরকার এটিকে “সন্ত্রাসবাদমুক্ত তুরস্ক” বলছে। দুর্নীতির অভিযোগে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তার, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়েছে।

নতুন দিক
ফিদান এই সফরের মাধ্যমে আঙ্কারার কৌশলগত অবস্থান আরও শক্তিশালী করেছেন। মার্কিন চাপে রাশিয়ার প্রভাব প্রতিহত করা, সিরিয়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রতিরোধ করা এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কৌশল এতে প্রকাশ পেয়েছে।

ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক বার্তা এসেছে। ট্রাম্প ও এরদোগানের ফোনালাপকে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ “চমৎকার” বলেছেন। ট্রাম্প তুরস্ককে F-35 যুদ্ধবিমান বিক্রির ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং রাশিয়ান S-400 কেনার কারণে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথাও বিবেচনা করছেন।

আলোচনার বিষয়বস্তু
হাকান ফিদানের আলোচনায় অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, সিরিয়া ও গাজা পরিস্থিতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডায় ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইরান ও সিরিয়ার সংকট।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ফিদান ও মার্কো রুবিও নিরাপত্তা ও বাণিজ্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তুরস্কের আইসিস-বিরোধী লড়াইকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

তুর্কি সূত্র বলছে, দুই মন্ত্রী এরদোগান-ট্রাম্প আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন এবং আসন্ন রাষ্ট্রপতি সফর নিয়ে আলোচনা করেছেন। সিরিয়ার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার বিষয়েও একমত হয়েছেন।

ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত
ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এটিকে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

এই সফরের তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল দেখা এখনও সময়সাপেক্ষ, তবে ইতিবাচক সংকেত মিলছে। ট্রাম্পের তুরস্ক-নীতি বাইডেনের তুলনায় ভিন্ন। আঙ্কারাও আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে।

তুর্কি রাষ্ট্রপতির আসন্ন ওয়াশিংটন সফরই হবে এই নতুন সম্পর্কের প্রথম বাস্তব পরীক্ষা।

সূত্র : আল জাজিরা নেট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top