ডিসেম্বরের মধ্যে ৪২টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন চায় বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ড. ইউনূস দেশের কৃতি সন্তান। আমরা সব রাজনৈতিক দল তাকে সমর্থন দিয়েছি, ভবিষ্যতেও দেব। কিন্তু তিনি আমাদের আশাহত করেছেন। বিশেষ করে উনি যে অসত্য কথা বলবেন, এটা আমরা কল্পনাও করিনি। তাও বলেছেন বিদেশে। জাপানে গিয়ে তিনি বলেছেন, একটিমাত্র দল -বিএনপি- যারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। এটা কি সত্য? ৪২টি দল তার সামনে গিয়ে বলেছেন, আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই। ফেব্রুয়ারি মাসের সব রাজনৈতিক দলের সাথে একটি আলোচনায় তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) নিজেই বলেছেন, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। কিন্তু দুই তিন দিন পরে সেটা পরিবর্তন হয়ে গেল।
রোববার (১ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ দলের উদ্যোগে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
‘লড়াকু ছাত্রদেরকে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ ভুল পথে পরিচালিত করছে’ অভিযোগ করে মেজর হাফিজ বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে মন্ত্রীর মর্যাদায় তিনজন যে ছাত্র উপদেষ্টা রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। চেয়ারে বসার পর থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা লাইসেন্স পেতে শুরু করেছে। এতে দেশের ক্ষতি হলো, ক্ষতি হলো তাদের। সেজন্য ছাত্রদেরকে উপদেষ্টা করা হয়েছে এক বিরাট ভুল।
তিনি আরো বলেন, আমাদের যে ছাত্রসমাজ আছে, তাদের উচিত আগে লেখাপড়া শেষ করা। এরপর নিজেদের পেশায় আত্মনিয়োগ করা। আপনাদের জন্য রাজনীতির দরজা উন্মুক্ত। তবে সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন; তারপর রাজনীতি করুন। আপনারা আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্ট হোন। কিন্তু বারবার তদবির করে, মবক্রেসি করে, সচিবালয়ে হাজির হয়ে, অটো পাশের দাবিতে হুমকি দেয়া আপনাদের জন্য সম্মানজনক নয়।
হাফিজ বলেন, ছাত্ররা যে রাজনৈতিক দলটা গড়েছে এটি আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হতে পারতো। তারা যদি দল সৃষ্টি করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো, রাজনীতিতে সুবাতাস বইয়ে দেয়ার চেষ্টা করতো, তাহলে তাদের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হতো। কিন্তু অল্প বয়সে মন্ত্রী পরিষদে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদেরকে নষ্ট করে দেয়া হলো।
তিনি আরো বলেন, হাসিনার শাসনামলে এই দেশটি ভারতের রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। আমি এই দেশের ছাত্রদের এবং সাধারণ নাগরিকদের অভিনন্দন জানাই। দেড় হাজার ছাত্র-যুবক-সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আবার মুক্ত হয়েছি। এই যুদ্ধে প্রতিটি মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। অথচ একটি নবগঠিত রাজনৈতিক দল বলার চেষ্টা করছে যে তারা এ দেশকে আবার নতুন করে স্বাধীন করেছে। আবার অন্য একটি রাজনৈতিক দল যারা একাত্তরের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, তারা বলতে চায় যে একাত্তরে আমরা নাকি ভুল করেছিলাম। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে ৭১-এ ভুল করেছিলাম, এই ধরনের কথার মুখোমুখি হব বলে কখনো চিন্তাও করিনি। যেই বীরেরা ৭১ সালে বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছে, যারা যুদ্ধের মাঠে ছিল না, তারা তো সেটি অবলোকন করেনি; বুঝতেও পারেনি। তাই আজকে এই ধরনের কথা বলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ ভালো লাগে না, তাই সেকেন্ড রিপাবলিকের কথা বলে বেড়াচ্ছে। ৭২-এর সংবিধান ছুঁড়ে ফেলার কথা বলছে। সংবিধান তো যেকোনো নির্বাচিত সরকারই পরিবর্তন করতে পারে। আমূল পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু একাত্তরের গন্ধ আছে, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধারা এর সাথে জড়িত ছিল, এজন্য একাত্তরের কোনো কিছুই এখন অনেকের ভালো লাগে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে এখন একদল মতলববাজ খেলছে। আমরা শুনতে পাচ্ছি যে বাইরের পৃথিবীর একটি পরাশক্তি বার্মায় এক্সপোর্টাইজড করেছে। ফলে আমাদের দেশে মানবিক করিডরের নামে কিছু অংশ আমাদের বেহাত হয়ে যাবে। শুনতে পাচ্ছি আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং আশেপাশের অঞ্চল নিয়ে খ্রিস্টান কাম ইহুদি রাষ্ট্র গঠিত হবে। এসব নতুন নতুন থিওরি কারা দিচ্ছে? এতদিন বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু একদিন শুনলাম যে আমাদের বর্তমান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তিনি বলেছেন, এখানে মানবিক করিডোর দেয়া হবে। পরে যখন জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ধুমায়িত হয়ে ওঠে, তখন আরেক উপদেষ্টা বলে যে এই ব্যাপারে এখনো আলাপ আলোচনা হয়নি।
মেজর হাফিজ বলেন, যার যতগুলো পিএইচডি ডিগ্রিই থাকুক, জনগণের সম্মতি ছাড়া এখানে কোরো ধরনের যুদ্ধে বাংলাদেশকে লিপ্ত করা যাবে না। এখানে যা কিছু হবে, যা কিছু সংস্কার হবে, নির্বাচন পার্লামেন্ট করবে। দ্রুত নির্বাচন দেন, এই দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই দেশের সকল সংস্কার করবে।
এ সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টার আশপাশের লোকজনের বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়! তার যে কয়েকটা উপদেষ্টা আছে, প্রেসসচিব আছে, বিভিন্ন সচিব কিংবা যাকে আশেপাশে রেখেছেন, এরা তো মনে হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার থেকেও বেশি রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ক।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির চেয়ারপারসন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, এবি পার্টি সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।