দিপ্র হাসান
গভীরে যেতে না পারলে হেরে যেতে হবে।
আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্থাৎ ৭১ এর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে শাসন ছিল ওইটা। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ওই সাড়ে তিন বছরে আওয়ামী লীগ নিজেদের একটি ব্যর্থ, অথর্ব, লুটেরা, খু*নী এবং ধর্ষ*ক দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করে।
অমন একটি শাসন উপহার দেয়ার পর ওই দলের আর কখনও বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় আসার কথা ছিল না। তবু এসেছিল কেন? এই কারণটা যদি আপনারা বুঝতে ব্যর্থ হন তাহলে আবারও বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে।
৭৫ সালে আওয়ামী লীগের পতন হলেও আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীদের পতন হয়নি। ৭১ সালে পাকিস্তানিদের তাড়ানোর পর এক শ্রেণীর মানুষ রাতারাতি অনেক সম্পদের মালিক বনে যায়। নয়া বাংলাদেশে এরাই হয়ে ওঠে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক। এই লোকগুলো আজও আওয়ামী লীগের রক্ষাকবচ।
পাকিস্তানি আমলে বাংলাদেশে মুসলিম কালচারের বিপরীতে আওয়ামী ও বাম রাজনীতির হাত ধরে একটি সেকু-হিন্দুয়ানি কালচার গড়ে ওঠে। যেই কালচারের দেবতা পুরুষ ছিল রবীন্দ্রনাথ। এরা শান্তি নিকেতনকে অনুসরণ করে বাংলাদেশের কালচারকে নয়া সেপ দিতে থাকে। বিশেষ করে ছায়ানট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এরা বাংলাদেশের কালচারাল অঙ্গনে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের কালচার পুরোপুরি এই শ্রেণীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ৭৫ এর পট পরিবর্তনেও কালচারের উপর এদের নিয়ন্ত্রণ এতটুকু শিথিল হয়নি। এরাই আজ দেশের কালচারাল ফ্যাসিবাদের নিয়ন্ত্রক।
৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় শ্লোগান ছিল সোনার বাংলা। সে সময় এই শ্লোগান সব মানুষের মুখে মুখে ছিল। পরবর্তীতে এই শ্লোগানকে ধারণ করে এমন একটি গানকে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত করা হয়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের দলীয় শ্লোগানকেই জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের পতন হলেও তাদের দলীয় শ্লোগান আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে রয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে তাদের প্রতি মানুষের সফট কর্ণার তৈরি হতে থাকে।
মুজিবের পর যতদিন শহীদ জিয়ার শাসন ছিল ততদিন আওয়ামী রাজনীতির কোনও সম্ভাবনা ছিল না। বিষয়টা বুঝতে পেরেই ভারতীয় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে শহীদ জিয়াকে সরিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে আসে এরশাদের অথর্ব শাসন। এই অপশাসনে পিষ্ট জনতার মাঝে মুজিবামলে ধনী হওয়া লোক আর কালচারাল ফ্রন্টের লোকদের প্রত্যক্ষ মদদে ধীরে ধীরে আওয়ামী রাজনীতি ফিরতে শুরু করে।
মুজিবের অপশাসন নিয়ে বাংলাদেশে খুব একটা লিটারেচার তৈরি হয়নি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে মুজিবের মুক্তিযুদ্ধের আগের ইমেজ ব্যবহৃত হতে থাকে। আন্দোলনকারীরাও আন্দোলনের স্বার্থে সেই সব ইমেজকে প্রচার করতে থাকে। ফলে একজন দানব ধীরে ধীরে মহামানব হয়ে ওঠে। একই সাথে দানব বধ কাহিনী হয়ে ওঠে পিতৃহত্যার ষড়যন্ত্র।
আর এভাবেই ইতিহাসের জঘন্যতম শাসন উপহার দিয়েও বাংলাদেশের ক্ষমতায় আবারও আওয়ামী লীগ ফিরে আসে।
আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের লুটতরাজের ফলেও এক শ্রেণীর নয়া ধনি গড়ে উঠেছে। নয়া বাংলাদেশের উচিত শুরুতেই এদের এবং মুক্তিযুদ্ধের পর যারা জবরদখল করে সম্পদ ও প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছিল তাদের সম্পদ ও প্রতিষ্ঠান আগের মালিকদের হাতে ফিরিয়ে দেয়া। মালিকরা যদি বাংলাদেশের বাসিন্দা না হয় তাহলে সরকারি মালিকানায় নিয়ে দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশপন্থী কাউকে দিয়ে দেয়া।
গত পনের বছরে রাষ্ট্রের প্রতিটা উন্নয়ন প্রকল্প ছিল লুটপাটের সোনার ডিম। এসব লুটপাটের ফলে প্রচুর লোকের হাতে অগাধ সম্পদ এসেছে। এই লোকগুলো বেঁচে থাকলে আবারও যে কোন মূল্যে আওয়ামী লীগের শাসন ফেরত আনতে চাইবে। কারণ এমন বাধাহীন লুটপাটের সুযোগ আর কোন সরকার এদেরকে দিবে না। এদেরকে শুধু সম্পদচ্যুত করে লাভ হবে না। এদেরকে বাকি জীবন জেলখানায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশকে স্থিতিশীল রাখতে চাইলে আওয়ামী অর্থনীতির বিষবাস্প থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে সবার আগে। আর এই জন্য আলাদা একটি কমিশন গঠন করে আওয়ামী লোকজনের সম্পদ ও প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করতে হবে। যদিও ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেকেই অনেকভাবে এসব আওয়ামী লোকজনকে পুনর্বাসিত করে চলেছে। এভাবে চললে আওয়ামী লীগ ফিরবেই।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি এখনও আওয়ামীপন্থী লোকজনের নিয়ন্ত্রণে। সংস্কৃতিকে সেকু-হিন্দুয়ানি লোকজনের হাতে রাখার চেষ্টা এখনও বিদ্যমান। ফলে জুলাই জনযুদ্ধের সংস্কৃতি তৈরির চেষ্টা খুব একটা হালে পানি পাচ্ছে না।
উচিত ছিল বিপ্লব পরবর্তী সময়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশপন্থী লোক বসিয়ে বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী সংস্কৃতি কর্মীদের চিরতরে উৎখাত করা। কিন্তু সেখানে যাদের বসানো হয়েছে তারা বরং আওয়ামী রাজনীতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
গত পনের বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু লোকাল মাফিয়া গড়ে উঠেছে। আর্মিরা এদের খবর না রাখলেও পুলিশ এদেরকে চিনে। এরা রাতারাতি বিএনপি বা অন্য দলে যোগ দিলেও এরা চিরকাল আওয়ামী লীগের প্রতিই কৃতজ্ঞ থাকবে। এদের সম্পূর্ণভাবে এলিমিনেট না করলে বাংলাদেশের আন্ডারওয়ার্ল্ড সব সময়ই আওয়ামীপন্থী থেকে যাবে।
নয়া বাংলাদেশে চব্বিশের গণহত্যাকারী এবং তাদের সাপোর্টারদের সমন্বয়ে নয়া এক জামাত শিবির তৈরি হইছে। জামাত শিবিরের সাথে যেই আচরণ করা হইছে এদের সাথেও সেইম আচরণ করলে যে লাভ হবে না তা জামায়াত শিবিরের বর্তমান অবস্থা দেখেই বোঝা যায়। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ লক্ষ হত্যার দায় জামায়াতের উপর চাপিয়েও লাভ হয়নি। তাই নয়া জামাত শিবির তথা আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে আমাদের ডিনাজিফিকেশন এর মত করেই ডিআওয়ামিফিকেশন কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। নইলে এরা আবারও ফিরে আসবে।
সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হল সুশাসন। মানুষ সুখে থাকলে, আনন্দে থাকলে সরকার পরিবর্তন করতে চাইবে না। তাই নয়া বাংলাদেশে যারাই রাজনীতি করুক তারা যদি দেশে সুশাসন উপহার দিতে পারে তাহলে আর কোনও মুজিব বা হাসিনা বাংলাদেশে খুন, ধর্ষণ এবং লুটপাটের শাসন কায়েম করতে পারবে না।
লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া