তালাক

তাফয়ীযে তালাকের বিধান

শায়খ ইবনুল কালাম

স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের অধিকার প্রদান করাকে শরীয়তের পরিভাষায় তাফয়ীযে তালাক বলা হয়। শরীয়ত সাধারণ অবস্থায় নারীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেয় না। তবে ক্ষেত্রবিশেষ যেহেতু তার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার্য, সেজন্য নারীর তালাক গ্রহণের পথ খোলা রাখা হয়েছে। সুতরাং স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের অনুমতি দেয়, তাহলে স্ত্রী তালাক গ্রহণ করতে পারবে।

নারীকে তালাক গ্রহণের অধিকার দেয়ার জন্য শরীয়ত স্বামীকে কোনো ধরনের উৎসাহ দেয় না। আবার তাকে নিরুৎসাহিতও করে না। সেজন্য বাস্তবতা উপলব্ধি করে এবং বিস্তর ফিকির করে এই পথে অগ্রসর হতে হবে।

একবার যদি স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের অধিকার দিয়ে দেয়া হয়, সেটি আর ফিরিয়ে নেয়া যায় না। এরপর ওই অধিকার বলে যদি স্ত্রী তালাক গ্রহণ করে ফেলে, তাহলে দাম্পত্য সম্পন্ন আর বাকি থাকবে না।

সাধারণ অবস্থায় স্ত্রীকে তালাকের অধিকার না দেয়াই শ্রেয়। একান্ত যদি অধিকার দিতেই হয়, তাহলে উচিৎ হলো শর্ত সাপেক্ষে তাফয়ীজের অধিকার দেয়া। যেমন ‘সে বলবে যে আমি এক তালাকে রজয়ীর অধিকার দিলাম। তবে আমার স্ত্রী এই শর্তে তালাক গ্রহণের অধিকার পাবে যে যদি আমি তাকে শারীরীক বা মানসিক কোনো নির্যাতন করি, কিংবা নিরুদ্দেশ হয়ে যাই, অথবা আমার স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দিতে না পারি এবং এই বিষয়টি উভয় পক্ষের তিনজন করে ছয়জন মুরুব্বি সত্যায়ন করে, তাহলে আমার স্ত্রী এক তালাকে রাজয়ী গ্রহণের অধিকার পাবে।’ এভাবে স্ত্রীকে লিখিত আকারে তালাকের অধিকার অর্পণ করবে। তিন তালাকের অধিকার কখনোই দেবে না। (বানুরী টাউনের ওয়েবসাইট, ফাতাওয়া নম্বর : ১৪৪০১২২০০৫০৬)

কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে তালাকের অধিকার অর্পণ করলে স্ত্রী তালাক গ্রহণ করতে পারবেন। তবে সেজন্য তালাক গ্রহণের সময় তাকে বলতে হবে যে আমি অমুক থেকে তালাক গ্রহণ করলাম বা অমুক থেকে তালাক নিলাম। এভাবে বললে তালাক পতিত হবে। কিন্তু নারী যদি বলে, আমি অমুককে তালাক দিলাম, তাহলে তালাক পতিত হবে না। বরং দাম্পত্য সম্পর্ক অটুট থাকবে। তখন অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া সহিহ হবে না।

নারী যদি তাফয়ীযের অধিকার বলে তালাক গ্রহণ করে, তাহলে কত তালাক পতিত হবে, সেটি স্বামীর তালাকের অধিকার প্রদানের সময়কার নিয়তের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ স্বামী যখন তাফয়ীজের অধিকার দিয়েছে, তখন সে কত তালাকের অধিকার দিয়েছে। যদি এক তালাকের অধিকার দেয়, তাহলে এক তালাকই পতিত হবে। এর বেশি পতিত হবে না। আর যদি একাধিক তালাকের অধিকার দিয়ে থাকে, তাহলে একাধিক তালাকই পতিত হবে। সুতরাং তাফয়ীজের সময় কত তালাকের অধিকার দিচ্ছে, স্বামীকে তা সচেতনভাবে মনে রাখতে হবে। প্রয়োজনে লিখে রাখতে হবে কিংবা স্ত্রীকে জানিয়ে রাখতে হবে। যেন সঠিক সংখ্যা কখনোই ভুলে যাওয়ার অবকাশ না থাকে।

তবে হাঁ, তালাকের অধিকার দেয়ার সময় যদি কোনো সংখ্যারই নিয়ত না থাকে, তাহলে এক তালাকে তাফয়ীজের অধিকার সাব্যস্ত হবে।

তালাক কখন দিতে হয়
কেমন নারী বিয়ে করবেন
বাল্য বিবাহ, ইসলামী দৃষ্টিকোণ

লেখক : পরিচালক নদওয়াতুল হানাফিয়া বাংলাদেশ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top