ছোট্ট একটি শিশু- দেখতে মনে হয়, সম্ভ্রান্ত কোনো ঘরের। ক্ষুধার তাড়নায় মলিন তার মুখ। উত্তর গাজার পথ ধরে হাঁটছিল সে। পথিমধ্যে দেখা পায় এক ফেরিওয়ালার। কিসমিসসহ আরো কিছু খাবার বিক্রি করছেন তিনি। শিশুটি দাঁড়িয়ে যায় সেখানে। ক্ষুধার তাড়নায় একবার সামনে এগোয়। বিবেকের দংশনে আবার পিছে টেনে আনে পা। দীর্ঘ সময় দোলাচালে থেকে অবশেষে এগিয়ে গেল। তিনটি কিসমিস নিয়ে মুখে দিয়ে দিলো।
বিষয়টি দেখে ফেলেন ফেরিওয়ালা। অমনিতেই শিশুটি কাঁতরে ওঠে- আমি চোর না। আমি চোর না। আল্লাহর কসম, আমি চোর না। চোখের পানি ফেলে বলে ওঠে, খুব ক্ষুধা পেয়েছে। তাই মুখে দিয়েছি।
তার এ দৃশ্য দেখে ফেরিওয়ালার মন গলে যায়। তিনি শিশুটিকে কাছে ডাকতে সামনে অগ্রসর হন। ওমনিতেই ভয়ে দৌড় দিলো শিশুটি। ফেরিওয়ালা পিছু ছাড়েননি। দৌড়ে গিয়ে সামনে থেকে আগলে ধরেন। তাকে সরিয়ে কেটে পড়তে চায় শিশুটি। কিন্তু পাশ কাটতে গিয়ে লুটিয়ে পড়ে সে। ফেরিওয়ালা তুলতে গিয়ে দেখেন, অজ্ঞান হয়ে আছে। তিনি পানির ছিটা দেন। তাকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন।
কিছুক্ষণের চেষ্টায় জ্ঞান ফেরে শিশুটির। তখনো কিসমিস তিনটি তার মুখে; গিলতে পারেনি। এবার ফেরিওয়ালাকে বলে, আমাকে ক্ষমা করুন। আমার ভুল হয়ে গেছে। ক্ষুধার তাড়নায় নিয়ে নিয়েছি। ফেরিওয়ার চোখ ভিজে ওঠে। তিনি শিশুটির কপালে চুমু খান। এরপর বলেন, একটি শর্তে তোমাকে ক্ষমা করতে পারি। পারবে শর্তটি মানতে? অজানা শঙ্কায় মাথা দোলালো শিশুটি। ফেরিওয়ালা বলেন, তোমাকে আমার সাথে এবেলা পেট ভরে খেতে হবে। শিশুটি হেসে ওঠে। হেসে ওঠে পৃথিবী।
ফেরিওয়ালা তাকে জড়িয়ে ধরেন। শিশুটিও জাপটে ধরে ফেরিওয়ালাকে। এ সময় তার চোখে ছিল অশ্রু। ঠোটে ছিল মিটমিটে হাসি। উভয়ে গাড়ির পাশে বসে খেতে লাগলো। শিশুটিকে একটি চেয়ারে বসান ফেরিওয়ালা। পা দুলিয়ে পেট ভরে সে দু’মুঠো খায়। আর এমনভাবে হাসে- যেন গোটা গাজাবাসীর মাঝে তা বিলালেও শেষ হবে না।
গাজার সাংবাদিক আয়েশা গাজা মঙ্গলবার এক ফেসবুক পোস্টে এই ঘটনা শেয়ার করেন।