মাহদি হাসান
দিল্লিকেন্দ্রিক খলিজ সালতানাতের অন্যতম শক্তিশালী শাসক আলাউদ্দিন খলজি শুধু তার সামরিক কৌশল কিংবা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার জন্যই পরিচিত নন। বরং তার অর্থনৈতিক সংস্কারও সমানভাবে আলোচিত। বিশেষ করে, খাদ্যশস্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে তার গৃহীত নীতি আজও অর্থনীতি ও প্রশাসন নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাজারব্যবস্থা ও মূল্যনিয়ন্ত্রণে তিনি যেসব নীতি গ্রহণ করেছিলেন,
১. দেশের সমস্ত খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীকে যমুনা নদীর তীরে একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় বাজারে গুদাম তৈরি করতে বাধ্য করা হয়।
২. সেখান থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাদ্যশস্য বিক্রি করতে হতো, যাতে দামের ওপর ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া কারসাজি চলতে না পারে।
৩. পণ্য পরিবহনের সমস্ত খরচ বহন করতো সরকার, যাতে দূরবর্তী অঞ্চলে খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে না বাড়ে।
৪. বাজারে পণ্যের সরকার নির্ধারিত মূল্যতালিকা প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে দেয়া হতো এবং এর থেকে এক পয়সাও বেশি নেয়া ছিল নিষিদ্ধ।
৫. ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নেয়া হতো যে তারা অবৈধ মুনাফা, মজুদদারি বা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করবে না।
৬. বাজার তদারকির জন্য বিশেষ গোপন পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছিল, যারা নিয়মিত বাজারে নজর রাখত।
৭. যারা নিয়ম ভাঙত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি এবং সম্পদ বাজেয়াপ্তির বিধান ছিল।
এই সময়েও এই নীতি অনুসরন করে যা সম্ভব,
দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা: বর্তমান সময়ে অনেক দেশেই খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে চরম অস্থিরতা তৈরি করে। আলাউদ্দিনের মতো রাষ্ট্রের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজার নজরদারি থাকলে মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হতে পারে।
মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো: আধুনিক যুগেও পাইকারি থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত অসংখ্য হাত বদল হয়, যা দর বৃদ্ধির প্রধান কারণ। কেন্দ্রীয় গুদাম ও সরাসরি বিক্রয় কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করলে এ ধরনের কারসাজি বন্ধ করা সম্ভব।
কালোবাজারি ও মজুদদারি প্রতিরোধ: আলাউদ্দিন খলজির কঠোর নজরদারির মতো ব্যবস্থা থাকলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দরবৃদ্ধি করার প্রবণতা কমে আসতে পারে।
দ্রুত ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত: সরকার নিজেই যখন মূল্য নির্ধারণ করে এবং বাজার তদারকি করে, তখন সাধারণ মানুষ দ্রুত ও ন্যায্য মূল্যে খাদ্য সংগ্রহের সুযোগ পায়।
লেখকের ফেসবুক পেইজ থেকে গৃহীত