প্রীতি
১.হাসপাতাল থেকে সিএনজিতে উঠেছি। আমার পাশে বসা ২৫-২৬ বছর বয়সের একটা আপু অঝোরে কাঁদছিলো।কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে,
“আমার এক্সরের রিপোর্ট দিসে, জামাইকে ফোন দিতেই ওপাশ থেকে গালা/গালি শুরু করছে, টাকা দিবে না। ”
২.হাসপাতালের সবচেয়ে অব/হেলিত প্রাণীটি মনে হয়, গ্রামের হাউজওয়াইফ। যার ভরণ পোষণ দেওয়াই তো অনেক।চিকিৎসা পাওয়া সেটা বিলাসিতা।।।চিকিৎসার খরচ চাইলে শুনতে হয়, বাপের বাড়ি থেকে কয় টাকা আনসো??
৩. বাড়ির এসএসসি পাশ বউটা সারাদিন কাজের বুয়ার মতো খাঁটে, সম্মান তো পায়ই না, উল্টো জোটে খোঁচার ওপর খোঁচা।
অন্যদিকে চাকরিজীবী বউটার জন্য শাশুড়ি রান্না করে রাখে।বউমা ছাড়া ডাকা যায় না।
৪.কলেজে থাকতে স্যার যদি বলতো কেন ডাক্তার হতে চাও? উত্তরে সবাই বলতো, সম্মান পাবো তাই। এদেশের বাবা মা ছোট থেকে তাদের মেয়েকে শেখায়, নিজের পায়ে না দাঁড়ালে সম্মান পাবা না, সারাজীবন শ্বশুরবাড়িতে খোঁটা শোনা লাগবে, কষ্ট করতে হবে।
সমাজের এই মাইন্ডসেটটা আমাদের উপকার করেছে? নাকি অপকার?এই মাইন্ডসেটের পেছনে কারা?
পুঁজিবাদের উত্থানের আগ পর্যন্ত পশ্চিমা দেশে হাউজওয়াইফকে অনেক সম্মানের চোখে দেখা হতো।পুঁজিবাদের সফলতায় দরকার ছিলো বাজার, কম মজুরিতে বেশি কাজ। তারা সুন্দর সুন্দর নাম দিয়ে নানা তত্ত্ব নিয়ে হাজির হলো।তেমনই এক তত্ত্ব women empowerment.
women empowerment এর নীতিতে শুধু রাজনৈতিক মুক্তি, অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক মুক্তির আলাপ।৷ পুরুষের নারীর ওপর দায়িত্বের আলাপ সেখানে নেই।
“যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে ” সুন্দর এই কথায় নারীর বোঝানো হলো হাজার হাজার কাজের বোঝা।
সব বই এ ছাপা হলো, সফল নারী মানে সফল পাইলট, সফল ব্যাংকার, সফল ডাক্তার।
অর্থাৎ নারীকে সফল প্রমাণ করতে হলে তাকে ঘরে বাইরে সমান তালে কাজ করতে হবে।তার শরীর সামলাতে পারুক আর না পারুক।
ফলশ্রুতিতে পরিসংখ্যানে আসলো কর্মজীবী নারীরা সবচেয়ে বেশি ডিপ্রেশনে ভোগে।শারীরিক সমস্যায় ভোগে।
সফল পুরুষ হতে হলে ক্যারিয়ার করলেই হয়। নারীকে কেন সফল হওয়ার জন্য ঘরে -বাইরে সমান ভাবে কাজ করতে হবে???
ছোট থেকে কেন বই এ সফল মা এর কথা আসলো না? কেন সফল স্ত্রী, সফল মেয়ের মাহাত্ম্যের গল্প আনা হলো না??
My life my rules বলে কেন সম্মান শুধু কর্মজীবী নারীর জন্যই রাখা হলো?মেয়েরা কেন হাউজওয়াইফ হওয়া পছন্দ করলে ছোট হতে হবে?
যদি সফল মা, সফল স্ত্রী, সফল পাইলট সবার গল্পই একসাথেই জায়গা পেতো, তাহলে মেয়েরা তাদের পছন্দ মতো জীবনযাপন করতো। ছেলেরাও হাউজওয়াইফকে সম্মানের চোখে দেখতো, টাকার খোঁটা দিতো না।
“আমি হাউজওয়াইফ হতে চাই” এই কথা শুনে সমাজ হাসতো না৷
কর্মজীবী নারীদের এত উপরে তুলে, নারীদের জীবনকে এত কঠিন করে, হাউজওয়াইফদের আমরা এতটা মাটিতে নামাতাম না।।।
Women Empowerment এর এই বুলি আসলেই কি নারীদের উপকার করেছে???
করেনি, তারা নারীদের জীবনকে করেছে কঠিন থেকে কঠিনতর।
মেয়েরা আসলেই মুক্তি চায়।এত কাজের বোঝা তারা চায় না।
অনেক মেয়েই আড়ালে বলে, সমাজ যদি হাউজওয়াইফদের তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতো, আমরা কখনোই এত কষ্ট করে চাকরিতে আসতাম না৷
নীতি নির্ধারকরা কার থেকে শুনে নারী অধিকারের কথা বলে? তারা কি গ্রামের সব নারীর কথা শুনেছে? অফিসের প্রেশারে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে রান্নাঘরে যাওয়া বউটার কথা শুনেছে কি তারা??
চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকা বউটার কথা কি শুনেছে??
শহরের চাকরিজীবী নারীদের বেতনের হিসাব করে Women empowerment এর সফলতার আলাপ আনলে তো হবে না।
এই উদ্ভ-ট মাইন্ডসেটের জন্য প্রতিটা বাড়িতে মেয়েদের, মায়েদের কত কষ্ট সহ্য করতে হয়, কত দূর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়, তার হিসেব এনে পরে দেখাতে হবে কোন তত্ত্ব কতটা সফল।
Myso/gynist আসলে কারা??
মিথ্যা আশা, বুলি বলে নারীদের জীবনকে কঠিন করলো কারা??
নারীদের আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ফেলছে কারা?
“পুরুষের দায়িত্বশীলতা” এই টার্ম টাকে সুকৌশলে সমাজ থেকে মুছে ফেলছে কারা?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজ নয়তো কাল আমাদের জানতেই হবে।
ফেসবুক পেইজ থেকে গৃহীত