নারী কমিশন, নারী সংস্কার কমিশন

নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে কেন এতো সমালোচনা

নারী সংস্কার কমিশন গঠন যথাযথ প্রতিনিধিত্বপূর্ণ ছিল না বলে মনে করেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া।

নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে কেন এতো সমালোচনা

এ বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কমিশনে ৪০ বছরের বেশি বয়সী নারীর আধিক্য রয়েছে এবং তরুণ প্রজন্মের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের প্রতিনিধিত্ব যথেষ্ট নয়। এছাড়া, সদস্যদের মধ্যে পেশাগত বৈচিত্র্য ছিল না, প্রায় সবাই উন্নয়ন খাতের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক কোনো সদস্য ছিলেন না, যা আজকের দিনে নারী উন্নয়নে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞের অভাবও ছিল, কারণ কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ ধর্মীয় বিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি আরও বলেন, ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্যান্য ধর্মের প্রতিনিধিত্বও ছিল না।

উত্তরাধিকার বণ্টন নিয়ে তিনি বলেন, নারীর জন্য সমান সম্পত্তি বণ্টন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে বাস্তবতায় নারীরা প্রাপ্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ইসলাম অনুযায়ী, পিতা-মাতা, স্ত্রী এবং সন্তানদের সবার অংশ রয়েছে, কিন্তু নারীরা পিতা বা স্বামীর উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তার মতে, এখানে ধর্মীয় বিধানে হস্তক্ষেপ নয়, নারীদের প্রাপ্য সম্পত্তি পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া উচিত।

অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন বিষয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক এবং পরিবারকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ এবং আদিবাসী ধর্মীয় অনুসরণে পারিবারিক জীবন পরিচালনা করেন, তাই ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে পারিবারিক আইন প্রণয়ন হওয়া উচিত। ধর্মকে বাদ দিয়ে আইন প্রণয়ন করলে পারিবারিক মূল্যবোধে সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে অধিকাংশ যৌনকর্মী দরিদ্র পরিবারের সদস্য এবং তারা চাকরি, প্রেম বা বিয়ের ফাঁদে পড়ে এই পেশায় আসেন। তাদের অধিকাংশই এই পেশা ত্যাগ করতে চান। তিনি বলেন, শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তাদের অন্যায়-অবিচারের সাপ্লাই চেইনকে বৈধতা দেওয়া হবে, যা ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। পুনর্বাসন অত্যন্ত জরুরি এবং এ ক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

বিয়ে বিচ্ছেদের পর নারীদের ক্ষতিপূরণের প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, স্ত্রী তার প্রাপ্য মোহরানা পাবেন, তবে বিচ্ছেদের পর নারীর জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ প্রয়োজনীয় নয়। তিনি ইরানের মতো ব্যবস্থা প্রস্তাব করেছেন, যেখানে বিচ্ছেদের পর স্ত্রীরা আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। তবে তিনি বলছেন, এমন ব্যবস্থা সমাজে বিয়ের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে তিনি মনে করেন, এটি একটি অতিরঞ্জিত সমস্যা। তিনি প্রশ্ন করেন, এখন পর্যন্ত কয়জন নারী বৈবাহিক ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন? তার মতে, পরিবারের মধ্যে সমস্যা সমাধানে সালিশ বা কাউন্সেলিং মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে এবং প্রয়োজনীয় হলে তালাকের সুযোগ রয়েছে।

সংসদীয় আসন বৃদ্ধি এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন নিয়ে তিনি বলেন, নারীদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। কিছু আসন সংরক্ষিত রাখতে পারেন, তবে অর্ধেক আসন সংরক্ষণ করা ন্যায়সংগত নয়।

নারী কমিশনের কিছু প্রস্তাবনা : ইসলামবিরোধী অবস্থান

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top