না দেখে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি আস্থা রাখাই ঈমান

শায়খ আবু তাসনিম

ঈমান মুমিনের অমূল্য সম্পদ। এটি দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার চাবিকাঠি। সেজন্য রাসূল সা. তার চাচা আবু তালেবকে মুমূর্ষাবস্থায়ও ঈমানের দাওয়াত দিয়ে ভুলেননি। তাই মুমিন মাত্রই ঈমানের ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে। ঈমানের উৎকর্ষ সাধনে সচেষ্ট থাকতে হবে।

ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ হচ্ছে, কোনো বিষয়কে না দেখে কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আস্থা রেখে সন্দেহাতীতভাবে মেনে নেয়া। এটি ঈমানের অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। আকিদা শাস্ত্রের ইমামগণ বলেন, কারো ঈমানে যদি এই বৈশিষ্ট্য ও অনুষঙ্গ না থাকে, তাহলে তার ঈমান ঈমান বলেই ধর্তব্য হবে না। সেজন্য এ বিষয়ে যত্নশীল থাকা আবশ্যক।

মুমিন তো শুধু জানতে চাইবে, এই বিষয়ে আল্লাহ তায়ালার হুকুম কী? ওই বিষয়ে রাসূল সা. এর আদর্শ কী? এই আয়াতের মর্ম ও অর্থ কী? যখন সে কোনো আহলে জিকির আলেমের মাধ্যমে জানতে পারবে যে এই হলো আল্লাহ তায়ালার বিধান। এই হলো রাসূলের আদর্শ। এই হলো আয়াত বা হাদিসের অর্থ ও মর্ম। তখন মুমিন সাথে সাথে ওই বিষয়টি মনেপ্রাণে মেনে নেবে। এখানে এই বিষয় তালাশ করবে না যে এটি বাস্তবতা সমর্থিত কিনা। এর পক্ষে কোনো যুক্তি আছে কিনা? কিংবা এই আদর্শ গ্রহণ করলে আমার সামাজিক অবস্থান ঠিক থাকবে কিনা? অথবা আমার পছন্দের কোনো দার্শনিক এটি মেনে নিয়েছেন কিনা?

মোটকথা, মুমিন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে ভিন্ন কিছু ভাববার সুযোগই নেই। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍۢ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَٰلًا مُّبِينًا

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়সালা দান করেন, তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর নিজেদের বিষয়ে কোনো এখতিয়ার বাকি থাকে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করলে সে তো সুস্পষ্ট গোমরাহিতে পতিত হলো। সূরা আহযাব, আয়াত : ৩৩

সুতরাং যখন জানা যাবে যে এটি আল্লাহর বিধান, তখন ভিন্ন কিছু ভাববার সুযোগ নেই। কেউ যদি ভিন্ন কিছু ভাবে বা তালাশ করে, বুঝতে হবে তার ঈমানে কমতি রয়েছে। তখন ঈমান মেরামতে মনোযোগ দিতে হবে।

তবে এখান থেকে এ কথা বুঝার সুযোগ নেই যে বাস্তবতা তালাশ করা যাবে না বা যুক্তি দেখা যাবে না মানে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেয়া বিধানে যুক্তি নেই। বরং শরীয়তের প্রতিটি বিধি-বিধানের পেছনে যুক্তি আছে। আছে বাস্তবতার যথার্থ সমর্থন। কিন্তু কেউ যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা জেনেও তা বিশ্বাস না করে, বরং বাস্তবতা কিংবা যুক্তি তালাশ করে, তাহলে সে তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে বিশ্বাস করলো না। বরং বাস্তবতা ও যুক্তিকে বিশ্বাস করলো। ঈমান তো বাস্তবতা ও যুক্তিকে বিশ্বাস করার নাম নয়। ঈমান হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আস্থা রাখার নাম।

আর এই বৈশিষ্ট্যটিই মুমিনকে দাহরিয়া ও যুক্তিপূজারী থেকে পৃথক করে দেয়। দাহরিয়ারা বলে, আমরা যতক্ষণ বিষয়টি স্বচক্ষে না দেখব, বিশ্বাস করব না। আর যুক্তিপূজারীরা বলে, আমাদের আকলে যতক্ষণ পর্যন্ত এর তাৎপর্য উদিত হবে না, আমরা তা মানব না। আর মুমিন বলে, সত্য সংবাদদাতার সংবাদ মেনে নেয়াই হলো সুস্থ বিবেকের ফায়সালা। সেজন্য মুমিনকে অবশ্যই না দেখে বিশ্বাসের বৈশিষ্ট্যে ভূষিত হতে হবে।

খুব ভালো করে মনে রাখতে হবে যে শরীয়তের কোনো বিষয় সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস করার জন্য যুক্তি, বাস্তবতা, সংবাদের যথার্থতা স্বচক্ষে দেখা কিংবা কোনো ইমজের সমর্থনের অপেক্ষা করা একজন মুমিনকে মুরতাদ বানিয়ে দেয়। আর কাফেরের কুফরীকে প্রলম্বিত করে। সেজন্য আহলে জিকির কোনো আলেম থেকে শরীয়তের কোনো বিষয় জানার পর কালক্ষেপন করা বিপজ্জনক। এক্ষেত্রে কালক্ষেপন করা কুফুরির অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলো হৃদয়াঙ্গম করে ঈমানের যথাযথ পরিচর্যা করার তাওফিক দান করেন। আমিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top