মুফতি খাইরুল ইসলাম
শিক্ষকতা এক মহান ও সম্মানজনক পেশা। তবে নিজের স্কুলের ছাত্রদের প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে ইসলাম সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। এতে পক্ষপাত, স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও ঘুষের আশঙ্কা থাকে—যা আমানতের খিলাফ।
যদিও ইনসাফ বজায় রেখে স্বচ্ছভাবে পড়ালে তা সরাসরি হারাম নয়, তবে অধিক নিরাপদ ও তাকওয়াপূর্ণ পথ হলো—নিজের প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের প্রাইভেট পড়ানো থেকে বিরত থাকা।
কারণ, একজন শিক্ষকের আসল মর্যাদা তাঁর নিরপেক্ষতা, সততা ও আমানতদারিতেই নিহিত।
ইসলামী শরীয়াহ মতে একজন শিক্ষক যদি নিম্নোক্ত শর্ত পূরণ করে নিজের স্কুলের ছাত্রদের প্রাইভেট পড়ান, তাহলে তা জায়েয হবে :
১. ক্লাসে যথাযথ পাঠদান:
শিক্ষক যদি ক্লাসে সঠিকভাবে পাঠদান করেন, কিন্তু কোনো ছাত্রের দুর্বলতা বা বিষয়ের জটিলতার কারণে অতিরিক্ত সহায়তার প্রয়োজন হয়, তাহলে প্রাইভেট পড়ানো জায়েয।
২. সুবিধা-অসুবিধায় সমতা:
প্রাইভেট পড়ালেও পরীক্ষা বা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সেই ছাত্রকে অন্য ছাত্রদের চেয়ে বেশি সুবিধা দেওয়া যাবে না। ন্যায়বিচার বজায় রাখতে হবে।
৩. অবৈধ সুবিধা না দেওয়া:
প্রাইভেট পড়ানোর বিনিময়ে ক্লাসে বা পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস করা, অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া বা অন্য কোনো অবৈধ সুবিধা প্রদান করা যাবে না।
কখন প্রাইভেট পড়ানো হারাম?
নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রাইভেট পড়ানো ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ এবং তা ঘুষের শামিল হবে:
১. ইচ্ছাকৃতভাবে ক্লাসে দুর্বল পাঠদান:
যদি শিক্ষক ইচ্ছাকৃতভাবে ক্লাসে ঠিকমতো না পড়ান, যাতে ছাত্রদের বাধ্য করা যায় প্রাইভেট নিতে, তাহলে এটি সম্পূর্ণ হারাম হবে।
২. বৈষম্যমূলক সুবিধা প্রদান:
প্রাইভেট নেওয়া ছাত্রদের পরীক্ষায় অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া, প্রশ্ন আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া বা অন্য কোনো পক্ষপাতিত্ব করা নিষেধ।
৩. সরকারি বা প্রতিষ্ঠানের নিষেধাজ্ঞা:
যদি স্কুল বা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ হয়, তবে তা মান্য করা আবশ্যক।
সারকথা, যদি শিক্ষক ইনসাফ বজায় রাখেন এবং উপরোক্ত শর্তগুলো পূরণ করেন, তাহলে প্রাইভেট পড়ানো জায়েয।
তবে ফকীহদের মতে, নিজের স্কুলের ছাত্রদের প্রাইভেট না পড়ানোই উত্তম, কারণ এতে ঘুষ বা অন্যায়ের আশঙ্কা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকা যায়। বিশেষ করে, যেসব ছাত্রের ক্লাস তিনি নিজেই নেন, তাদের প্রাইভেট পড়ানো থেকে বিরত থাকাই ভালো।
লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে গৃহীত