ইসলামী দলগুলো, ইসলামি দলগুলো, জোট রাজনীতি, আসন্ন নির্বাচন, হেফাজতে ইসলাম

নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর শীর্ষ নেতারা কে কোথায় লড়বেন

টুডে ডেস্ক

দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বাড়ছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো তফসিল ঘোষণা না হলেও সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলগুলো। অন্যান্য দলের পাশাপাশি ইসলামি দলগুলোর তৎপরতাও এবার চোখে পড়ার মতো।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার ইসলামি দলগুলোর জন্য রাজনৈতিক পরিবেশ তুলনামূলক অনুকূল। ফলে দলগুলো নির্বিঘ্নে প্রস্তুতিপর্ব সারতে পারছে।

এবার ইসলামি দলগুলোর একটি বৃহৎ জোট গঠনের উদ্যোগ চলছে। জামায়াতে ইসলামীর মতো উল্লেখযোগ্য ইসলামি দল এই আলোচনায় রয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত এই জোট বাস্তবে রূপ নেবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে, তবে দলগুলো আশা করছে অন্তত একটি নির্বাচনী সমঝোতায় তারা পৌঁছাতে পারবে।

জোট গঠনের আলোচনা চলার পাশাপাশি ইসলামি দলগুলো নিজেরাও প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজে নেমে পড়েছে। কোনো কোনো দল ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, আবার কেউ কেউ প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশও করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই তৎপরতা এখনো অনেকটা রাজনৈতিক অবস্থান জানানোর কৌশল হিসেবেই দেখা যেতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে ইসলামি দলগুলোর শীর্ষ নেতারা কে কোথায় থেকে প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে দলীয় কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। ভোটব্যাংক ও সাংগঠনিক সক্ষমতার বিচারে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী এখনো সবচেয়ে এগিয়ে। দলটি ইতোমধ্যে ২৯৬টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এবারো ঢাকা-১৫ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ২০১৮ সালে এই আসন থেকে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে ৩৯ হাজারের কিছু বেশি ভোট পান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তখন বিপুল ভোটে জয়ী হলেও এবার ক্ষমতাসীন দলের অংশগ্রহণ না থাকায় জামায়াত এখানে সম্ভাবনা দেখছে। তবে বিএনপির প্রার্থী থাকলে লড়াই কঠিন হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) এবারের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না বলে জানা গেছে। তবে তার ছোট ভাই এবং দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বরিশাল-৫ আসনে প্রার্থী হবেন। ২০২৩ সালের সিটি নির্বাচনে আলোচিত এই প্রার্থী এবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। যদিও এই আসনটি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক সিলেট-৫ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন এবং শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এবার একই আসনে জামায়াত হাফেজ আনোয়ার হোসেন খানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ইসলামী আন্দোলন থেকেও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মুফতি রেজাউল করীম আবরারের নাম আলোচনায় রয়েছে। ফলে এই আসনে একটি ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক নির্বাচন করবেন কিনা তা এখনো চূড়ান্ত নয়। যদিও বিএনপি ও জামায়াত উভয় জোটই তাঁকে নিজেদের দলে চাচ্ছে বলে জানা গেছে। বিএনপি থেকে তাকে ঢাকা-১৩ কিংবা ঢাকা-৭ আসনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে জামায়াতের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাসেত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের দু’জনেই হবিগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। আমির সম্ভাব্য প্রার্থী হবিগঞ্জ-২ আসনে, আর মহাসচিব হবিগঞ্জ-৪ আসনে। যদিও আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থানের কারণে এই আসনে জয়ের সম্ভাবনা আগে খুবই সীমিত ছিল। এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ অংশ না নিলে বিএনপি জোটের সহায়তায় সুযোগ তৈরি হতে পারে।

এর বাইরে ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত আন্দোলন রয়েছে। তবে নিবন্ধন ও সাংগঠনিক জটিলতার কারণে এসব দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি এখনো দৃশ্যমান নয়। খেলাফত আন্দোলন আবার দু’টি ভাগে বিভক্ত হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অবস্থান তৈরি করতে পারছে না।

সার্বিকভাবে ইসলামি দলগুলোর জন্য এবারের নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হতে যাচ্ছে। যদি তারা পারস্পরিক সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে এবং যৌথভাবে ভোটের ময়দানে নামতে পারে, তাহলে কিছু আসনে কার্যকর ফল অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জোট বাস্তবায়ন, প্রার্থী বাছাই ও রাজনৈতিক কৌশল এসব বিষয়েই নির্ভর করছে তাদের সাফল্যের ভবিষ্যৎ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top