পশ্চিমতীর, ইসরাইল, বসতি স্থাপনকারী, আল-মালিহাত সম্প্রদায়

পশ্চিমতীর থেকে ৭০ ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদ করল ইসরাইল

পশ্চিমতীর থেকে ৭০টি ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদ করেছে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা। ওই পরিবারের অন্তত ৫০০ জন সদস্য রয়েছে। পূর্ব পশ্চিমতীরের জেরিকোর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত আরব আল-মালিহাত এলাকা থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। এই পরিবারগুলো অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সেখানে বসবাস করে আসছে।

বেদুইন অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ‘আল-বায়দার’র সাধারণ সম্পাদক হাসান মালিহাত আল জাজিরা নেটকে বলেন, ‘অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা আরব আল-মালিহাত সম্প্রদায়ের প্রায় ৭০টি পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলেছে। তারা এখন জিনিসপত্র গুছিয়ে অজানা গন্তব্যে চলে গেছে। কেউ চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ তিনি জানান, বাস্তুচ্যুত পরিবারের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। তারা জেরিকোর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে।

তিনি আরো জানান, ১৯৭০ সাল থেকে এই সম্প্রদায় সেখানে বসবাস করছে। গত ২২ মাসে তারা নানাবিধ অবহেলা ও নিপীড়নের সম্মুখীন হয়েছে।

গত দুই বছর সম্প্রদায়টির ওপর বারবার বসতি স্থাপনকারীরা হামলা করেছে। কখনো বাসিন্দাদের ওপর আক্রমণ, কখনো বাড়িতে অভিযান কিংবা পশুখাদ্য চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি ঘরবাড়ির পাশেই একটি নতুন বসতি স্থাপন কার্যক্রম চলছে।

মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, গত মাসে জেরিকো ও রামাল্লার মধ্যবর্তী আল-মুআরজাত এলাকায় ছয়টি বসতি স্থাপন ফাঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

শুক্রবার আল-বায়দার এক বিবৃতিতে জানায়, সম্প্রদায়টির ওপর যা ঘটেছে তা বসতি স্থাপনকারীদের নেতৃত্বাধীন দখলদার বাহিনীর একটি পরিকল্পিত হামলা। এতে কোনো সরকারি আদেশ বা সিদ্ধান্ত ছিল না। বরং অস্ত্রের মুখে ও সরাসরি হুমকির মাধ্যমে বাসিন্দাদের জমি থেকে উৎখাত করা হয়েছে। এটি স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধ এবং আগ্রাসনের শামিল।’

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘আরব আল-মালিহাতে যা ঘটছে তা জর্ডান উপত্যকা এবং পশ্চিমতীরের অন্যান্য অঞ্চলে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির ধারাই পুনরাবৃত্তি।’ তারা একটি কার্যকর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে, যা শুধু মৌখিক নিন্দায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দখলদার ও বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাসিন্দাদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেবে।

আল-বায়দার আরেক বিবৃতিতে বলেছে, এসব পরিবারকে উচ্ছেদ করা এবং নতুন বসতি ফাঁড়ি স্থাপন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে- এখানে একটি নতুন বসতি ব্লক তৈরি করা, যা কার্যত উত্তর ও দক্ষিণ পশ্চিমতীরকে সংযুক্তকারী গুরুত্বপূর্ণ করিডোর নিয়ন্ত্রণ করবে। জেরিকোকে কেন্দ্রীয় পশ্চিমতীর থেকে বিচ্ছিন্ন করবে এবং জর্ডান উপত্যকা থেকে রামাল্লা হাইটস পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের চলাচল সীমিত করবে।

সংস্থাটি আল-মুআরজাতে ঘটে চলা ঘটনাগুলোকে নীরব নাকবা বলে আখ্যা দিয়েছে। যেখানে প্রকাশ্যে বুলডোজার কিংবা জোরপূর্বক উচ্ছেদ হচ্ছে না। বরং ফিলিস্তিনিদের, বিশেষত বেদুইনদের এলাকা সি থেকে সরিয়ে জনসংখ্যা সীমিত করে ফেলার মাধ্যমে ঘটানো হচ্ছে। এটি বৃহত্তর ইসরাইলি নীতিরই অংশ।’

উল্লেখ্য, অসলো চুক্তি অনুসারে, এলাকা সি পশ্চিমতীরের প্রায় ৬০ শতাংশ এবং তা পুরোপুরি ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণাধীন।

ওয়াল অ্যান্ড সেটেলমেন্ট রেজিস্ট্যান্স কমিশনের ডকুমেন্টেশন অ্যান্ড পাবলিকেশনের মহাপরিচালক আমির দাউদ জানান, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে পশ্চিমতীরে ৩২টি ফিলিস্তিনি সম্প্রদায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর সংখ্যা বর্তমানে ৩৪৫ ছাড়িয়েছে, যাদের সদস্য সংখ্যা হাজারেরও বেশি।

কমিশনের প্রধান মুয়াইয়াদ শাবান আল জাজিরা নেট-কে বলেন, ‘আরব আল-মালিহাত থেকে পরিবারগুলোকে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে একটি পরিকল্পিত ঔপনিবেশিক প্রকল্পের অংশ হিসেবে, যার লক্ষ্য হলো অঞ্চলটির ইহুদিকরণ।’

তিনি জানান, ‘সশস্ত্র বসতি স্থাপনকারীদের চাপ ও ভয়ভীতি এবং দখলদার সেনাবাহিনীর সুরক্ষার মাধ্যমে পরিবারগুলোকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।’

কমিশনের নথি অনুসারে, গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপনকারীরা ৫ হাজারের বেশি আক্রমণ চালিয়েছে, যার মধ্যে ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসেই ছিল প্রায় ১,৬০০টি। এছাড়া একই সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনী প্রায় ৫,৬০০টি অভিযান চালিয়েছে। এসব হামলায় ফিলিস্তিনিদের জীবন, সম্পদ, বাসস্থান, নিরাপত্তা এবং চলাচল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কমিশন অনুমান করছে, জেরুজালেমসহ পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৭০ হাজার। এই বসতি গঠিত হয়েছে ১৮০টি বৈধ ও ২৫৬টি অননুমোদিত ফাঁড়ির মাধ্যমে, যার মধ্যে ১৩৮টি পশুপালন ও কৃষির জন্য ব্যবহৃত হয়।

সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top