পাকিস্তান, ইরান, ইসরাইল, পারমাণবিক অস্ত্র,

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরকারকে যুদ্ধের উস্কানি ইসরাইলিদের

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের চলমান সামরিক আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের অবস্থান নিয়ে ইসরাইলি প্ল্যাটফর্মগুলোতে একটি সুপরিকল্পিত উস্কানিমূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে। এই প্রচারণায় পাকিস্তানকে আক্রমণাত্মক ও বিপজ্জনক রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও এর কোনো প্রামাণ্য ভিত্তি নেই।

আল জাজিরার নিউজ ভেরিফিকেশন ইউনিট সানাদ এ সংক্রান্ত ইসরাইলি কথোপকথন পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, হিব্রু এবং আরবি ভাষায় কথিত একাধিক ইসরাইলি সাংবাদিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মিথ্যা দাবি ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং ইসরাইলি সরকারকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগাম পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ভুয়া তথ্য ছড়ানোর কৌশল

উস্কানিমূলক প্রচারণায় অংশ নেয়া একাধিক অ্যাকাউন্ট পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে ইরানের প্রতি সংহতি প্রকাশকারী বিবৃতি শেয়ার করে দাবি করেছে যে পাকিস্তান ইসরাইলের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছে। কিছু অ্যাকাউন্ট আরো দাবি করেছে, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সকে জানিয়েছে যে যদি তারা ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে, তবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেবে।

সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর ছিল পাকিস্তান থেকে ইরানে ৭৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো হয়েছে এমন ভুয়া তথ্যের প্রচার। এই দাবির সাথে পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্রের ছবিও সংযুক্ত করা হয়, যা আগেও বিভিন্ন সময়ে অন্য প্রসঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। ইসরাইলি সামরিক ওয়েবসাইট ‘নাজিফ’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে দাবি করা হয়, পাকিস্তানের সামরিক সহায়তার মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও থাকতে পারে, যার ভিত্তি নাকি ইরানি গণমাধ্যম।

তথ্য যাচাইয়ের পর স্পষ্ট বিভ্রান্তি

তথ্য যাচাইয়ে দেখা যায়, ৭৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র স্থানান্তরের খবর সম্পূর্ণ বানোয়াট। পাকিস্তান সরকার ইরানকে সামরিক সহায়তার কোনো ঘোষণা দেয়নি এবং তেহরানও এমন কোনো সহায়তা পাওয়ার কথা স্বীকার করেনি। ইরানের আকাশসীমায় পাকিস্তান থেকে কোনো সামরিক সরঞ্জাম স্থানান্তরের কার্যক্রম কিংবা নেভিগেশনাল রেকর্ড কোনো কিছুই উন্মুক্ত উৎসে মেলেনি।

এছাড়া পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বা ঘোষণাও নেই। দেশটির কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও এমন মন্তব্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

পাকিস্তান সরকারের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটের সামনে এক বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, এই ধরনের সব দাবি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। তিনি স্পষ্ট করেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কেবলমাত্র আত্মরক্ষামূলক উদ্দেশ্যে। তিনি আরো বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কোনো হুমকি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স নিশ্চিত করেছে যে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এমন কোনো হুমকি তারা পায়নি। ফলে এই দাবি যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তা আরো স্পষ্ট হয়েছে।

প্রকৃত অবস্থান

পাকিস্তান ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা করে একটি সরকারি বিবৃতি জারি করেছে। বিবৃতিতে ইরানি জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসঙ্ঘকে এই আগ্রাসন থামাতে এবং ইসরাইলকে জবাবদিহি করাতে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রেক্ষাপট

গত শুক্রবার ভোর থেকে আমেরিকার সমর্থনে ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। এতে পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং সামরিক নেতা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে এখন পর্যন্ত ২২৪ জন নিহত এবং ১,২৭৭ জন আহত হয়েছে। এর জবাবে তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে পাল্টা হামলা চালিয়েছে, যাতে প্রায় ২৪ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের নীতিগত অবস্থানকে বিকৃত করে ইসরাইলি প্ল্যাটফর্মে চালানো প্রচারণা স্পষ্টতই একটি মিথ্যাচার এবং আন্তর্জাতিক স্তরে উস্কানিমূলক বিভ্রান্তি তৈরির প্রচেষ্টা।

সূত্র : আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top