ইবনুল কালাম
পাকিস্তান-আ/ফ/গানি.স্তান দুটি মুসলিম দেশ। তাদের মাঝে সঙ্ঘাত কোনো মুসলমানই কামনা করতে পারে না। তথাপি গোটা মুসলিম বিশ্বকে দুই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশের মাঝে সঙ্ঘাত দেখতে হচ্ছে। কিন্তু কেন তাদের মাঝে এতো সঙ্ঘাত? এর নেপথ্যে কী আছে যে এই দুই দেশ একে অন্যের সাথে বুক মেলাতে পারে না?
এক্ষেত্রে মৌলিকভাবে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে। সংক্ষেপে যদি তা উল্লেখ করি, তাহলে-
এক.
সম্প্রতি আ/ফ/গান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাকিস্তান সফর করার কথা ছিল। কিন্তু ওয়াশিংটন থেকে ফিরে এসে জাতিসঙ্ঘের দোহাই দিয়ে তা বাতিল করে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। এর বিপরীতে তা/লে/বানবিরোধী নর্দার্ন অ্যালায়েন্স ও আইএসকে ডেকে এনে সংলাপ করে তারা। এরপর আ/ফ/গান সীমান্ত এলাকায় তাদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। এই বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি আ/ফ/গানি.স্তান। একদিকে বন্ধুত্বের হাত গুটিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে বিরোধীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে লেলিয়ে দিচ্ছে। সেজন্য এমনিতেই টানাপোড়েন চলছে। এরই মধ্যে ভুয়া অজুহাতে রাজধানী কাবুলসহ আরো কয়েক জায়গায় হামলা করে পাকিস্তান। ফলে এর জবাব দেয়াটা অনিবার্য হয়ে পড়ে তা/লে/বানের।
তবে এই জবাবটা কূটনৈতিকভাবে দিলেই বোধ হয় বেশি ভালো হতো। কিন্তু যে জাতি কারো সাথে লিয়াজোঁ করে চলে না, তারা কেন বারবার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন মেনে নেবে? বিশেষ করে যখন বন্ধুত্বের জন্য হাত বাড়িয়েও সমর্থন পাওয়া যায়নি। সেজন্য তাদের এই হামলাকে অসমর্থন করা যায় না। তবুও যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশের জন্য সঙ্ঘর্ষে জড়িয়ে অর্থ খরচ করার আগে বিকল্প ভেবে দেখা খারাপ হতো না।
দুই.
সম্প্রতি শুল্কনীতিতে হাত থেকে অনেকটা ফস্কে গেছে ভারত। পাকিস্তানকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কারণেও নয়াদিল্লি অসন্তুষ্ট। এছাড়া চীনকে মোকাবেলার জন্য গেরুয়া শক্তির উপর আস্থাও রাখা যাচ্ছে না। সব বিবেচনায় চীন-রাশিয়া বলয়কে নজরদারির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দু’টি বেস্ট অপশন রয়েছে। একটি আ/ফ/গানি.স্তানের বাগরাম ঘাঁটি। এর মাধ্যমে মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ার উপর নজরদারি সম্ভব। আরেকটি অপশন হলো বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন।
তো বাগরাম ঘাঁটি দখলের জন্য ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হাইপও তুলেছে। কিন্তু ২০ বছরের যুদ্ধের গ্লানি টেনে নতুনভাবে এই গোরস্থানে আসার সাহস হচ্ছে না তাদের। সেজন্য পাকিস্তানকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন আ/ফ/গানরা তো স্বাধীনচেতা জাতি। তাদেরকে বশে আনা সম্ভব নয়। সেজন্য তা/লে/বানের বিরোধী পক্ষকে উস্কে দিয়ে বাগরাম দখলের পায়তারা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র পাকিস্তান।
কিন্তু তাদের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তা/লে/বান প্রশাসন সচেতন। সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই চুলকানির জবাব দিয়ে বুঝাতে চাইলো যে আমরা এখনো আগের মতোই স্বাধীনতার বিষয়ে আপোষহীন। সুতরাং যেকোনো পদক্ষেপে সাবধান।
তিন.
আ/ফ/গানি.স্তান ও পাকিস্তানের একটি সঙ্ঘাতপূর্ণ বিষয় হলো ডুর্যান্ড লাইন। এটি ১৮৯৩ সালে ব্রিটেন নির্ধারিত ভারত-আ/ফ/গানি.স্তান সীমানা। এই সীমানা তখন থেকেই মানে না আ/ফ/গানি.স্তান। এখন তা/লে/বান সমাধানের প্রস্তাবনা দিয়ে রেখেছে এমন যে এই বিতর্কিত অংশে যেকোনো অ্যাক্টিভিটির জন্য উভয় দেশের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু পাকিস্তান এটিকে তাদের অংশ দাবি করে আ/ফ/গানি.স্তান অস্বীকার করে। সেজন্য সঙ্ঘাত চলমান।
এক্ষেত্রে সমস্যা হলো, ডুর্যান্ড লাইনের দুই পাশে যে জনগোষ্ঠী রয়েছে, তারা উভয় পক্ষই পশতু। এই বিভাজনের পরেও উভয় পক্ষ নিজেদের পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ধরে রেখেছে। এখন পাকিস্তানি ডিপ স্টেটের কাছে পশতুরা বড় অবহেলিত। সেজন্য পাকিস্তানের প্রতি তাদের তেমন আগ্রহ নেই। এদিকে, আ/ফ/গানের সাথে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ আছে। সেজন্য এই বিষয়টি সহজে মিটমাট করা যাচ্ছে না।
এগুলো হলো মৌলিক কারণ। এর বাইরে আরো কিছু হিসাব-নিকাশ আছে। যেজন্য উভয় দেশের মাঝে একটা দেয়াল রয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বড় দেয়ালটি হলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এরা নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য নানা অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে দেশটিকে নিতে চায়।
লেখক : শিক্ষক ও সাংবাদিক




