পিডিএফ তৈরি করে অনলাইনে প্রচারের বিধান

টুডেনিউজ বিডি ডটনেট

১. কোনো বইয়ের স্বত্ব লেখক বা প্রকাশক কর্তৃক সংরক্ষিত হওয়ার উদ্দেশ্য হল, ঐ বইয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনার সকল অধিকার লেখক বা প্রকাশকের। এভাবে স্বত্ব সংরক্ষণ করা জায়েয। এক্ষেত্রে লেখক বা প্রকাশকের অনুমতি ছাড়া উক্ত বইয়ের মুদ্রণ ও বাজারজাত করা জায়েয নেই। মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৫, ৩/২৫৮১; মাসিক আল কাউসার, প্রশ্ন : ৫৩২৪, ফেব্রুয়ারি ২০২১

২. যেসকল বইয়ের স্বত্ব লেখক/প্রকাশক কর্তৃক সংরক্ষিত কিংবা বইগুলো এখনো লেখক/প্রকাশক কর্তৃক ছাপা হচ্ছে সেগুলোর পিডিএফ তৈরি করে প্রচার করতে হলে লেখক/প্রকাশকের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে। কেননা এমন কাজ করা হলে বইয়ের বিক্রির উপর প্রভাব পড়তে পারে। তাই লেখক/প্রকাশকের অনুমতি ছাড়া দ্বীনী স্বার্থেও এজাতীয় বইপত্র পিডিএফ করে অ্যাপে দেওয়া বৈধ হবে না। মাসিক আল কাউসার, প্রশ্ন : ৫৭৮৬, আগস্ট ২০২২

৩. তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়া নিজ ব্যবহারের জন্য পিডিএফ বা ফটোকপি করা নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই কোনো বই দুষ্প্রাপ্য হওয়ার কারণে বা মূল বইয়ের দাম নিজের সাধ্যের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় কারো মালিকানাধীন কোনো বই তার অনুমতি নিয়ে নিজ ব্যবহারের জন্য ফটোকপি করা বা অন্য কোনোভাবে এর প্রতিলিপি তৈরি করে সংরক্ষণ করা নাজায়েয নয়। এটি লেখকের حقوق তথা স্বত্বের খেলাফ বলে ধর্তব্য হবে না। মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৫, ৩/২৫৮১; মাসিক আল কাউসার, প্রশ্ন : ৫৩২৪, ফেব্রুয়ারি ২০২১

৪. যে সকল বইয়ের স্বত্ব লেখক অথবা প্রকাশক কর্তৃক সংরক্ষিত নয়— বরং ব্যাপকভাবে অনুমতি দেওয়া আছে বা বিশেষভাবে অনুমতি নেওয়া হয়েছে, তাহলে সেগুলোর পিডিএফ তৈরি করে নিজেদের অ্যাপে দেওয়া যাবে। অন্য ওয়েবসাইট থেকে নিতে চাইলেও তাদের অনুমতি নিতে হবে।

৫. প্রকাশকের ক্ষতির উদ্দেশে যদি কোনো বইয়ের পিডিএফ তৈরি করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে তা বড় ধরনের গুনাহের কাজ হবে। যেমন একটি বেস্ট সেলার বইয়ের পিডিএফ ছেড়ে দেয়া হলো, যেন প্রকাশকের কাটতিতে তার প্রভাব পড়ে। তাহলে এটি সম্পূর্ণ হারাম হবে। এতে যদিও বাণিজ্যিক কোনো স্বার্থ নেই, কিন্তু অপরের ক্ষতি করা হচ্ছে। তাই জায়েজ নেই। (মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম হাফি. এর চুক্তিকোষ খণ্ড : ২ পৃষ্ঠা : ৫৩০ ভাব অবলম্বনে)

৬. অবশ্য বইটি যদি এতোই প্রাচীন হয় যে এখন আর তার প্রকাশকও নেই। প্রকাশকের উত্তরাধিকারীদেরও হদিস নেই, বইটির মুদ্রণও বাজারে নেই, তাহলে এক্ষেত্রে বইয়ের পিডিএফ ছাড়া যেতে পারে। সেটির পিডিএফ প্রচারের অনুমোদিত বলে গণ্য হবে। (মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম হাফি. এর চুক্তিকোষ খণ্ড : ২ পৃষ্ঠা : ৫৩২ ভাব অবলম্বনে)

৭. ইন্টারনেটে থাকা পিডিএফ কিতাবগুলো ডাউনলোড করে পাঠ করা কিংবা প্রয়োজনীয় অংশ প্রিন্ট করে উপকৃত হতে কোন আপত্তি নেই। কেননা এ কিতাবগুলো দুই অবস্থা থেকে মুক্ত নয়।

-কিতাবগুলো মালিকের বা লেখকের অনুমতি সাপেক্ষে ইন্টারনেটে রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে কিতাবের মালিক বা লেখকের ইলমের প্রচার-প্রসার ও সাওয়াবের প্রত্যাশায় কিতাব অনলাইনে প্রকাশ করে থাকেন।

-অথবা প্রকাশনী বা মালিকের অনুমতি ছাড়াই ইন্টারনেটে আপলোড করা হয়েছে। তার পরেও সেগুলো ডাউনলোড করে পাঠ করা কিংবা ব্যক্তিগত উপকৃত হওয়া দোষনীয় নয়। তবে সেগুলো ব্যবসায়িক কাজে লাগানো যাবে না। কেননা এতে প্রকাশনী বা মালিকের ক্ষতি হয়ে যাবে।

বই ফটোকপি করার বিধান
বই ফটোকপি করা এবং পিডিএফ করার বিধান প্রায় একই রকম। সুতরাং যদি ব্যক্তিগত পড়াশোনা বা গবেষণার স্বার্থে হয় এবং বাণিজ্যিক কোনো উদ্দেশ্য না থাকে, পাশাপাশি প্রকাশক বা লেখকের ক্ষতি করাও উদ্দেশ্য না হয়, তাহলে বই ফটোকপি করে ব্যবহার করা যাবে। এই বই অন্যকে পড়তেও দেয়া যাবে। বুহুস ফি কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসারা, খ. ১, পৃ.১১৮; ইতরে হিদায়া, পৃ. ৩৪২; কাতারের ওয়াকফ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দাওয়া ও ইরশাদ বিভাগের অধীনে পরিচালিত জাতীয় ফতোয়া বোর্ড মারকাযুল ফাতাওয়ার ফাতাওয়া সাইট ইসলাম ওয়েব, ফতোয়া নং : ৪২৩৫১; কিতাবুন নাওয়াযেল, খ.১১, পৃ.৫৩।

বিদেশী বই প্রকাশকের অনুমতি ছাড়া ফটোকপি করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয় করা জায়েজ নেই। এটি শরীয়তের দৃষ্টিতে খেয়ানত এবং সাধারণ আইনেও স্বীকৃত নয়। কারণ, এখন যোগাযোগ মাধ্যমের অগ্রগতির কারণে পুরো বিশ্ব একটি গ্রামের মতো। তাই যেকোনো জায়গায় ফটোকপি করে ব্যবসা করলে মূল প্রকাশকের কাটতিতে প্রভাব পড়বে। সেজন্য বিদেশী বইও বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা জায়েজ হবে না। এমনকি জেনে বুঝে এমন প্রতারক প্রকাশক থেকে এ ধরনের বই ক্রয় করাও বৈধ নয়। কারণ এতে পাপ কাজে সহযোগিতা হয়। (মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম হাফি. এর চুক্তিকোষ খণ্ড : ২ পৃষ্ঠা : ৫৩২ ভাব অবলম্বনে)

একটি ভুল ধারণা ও তার অপনোদন

কেউ কেউ মনে করেন যে পড়ার জন্য বই ফটোকপি করা জায়েজ নয়। এটি ভুল ধারণা। কারণ, একটি বই কেনার দাবি হলো, এটি নিজে পড়তে পারব। অন্যকে পড়ার জন্য দিতে পারব। আবার প্রয়োজনে ফটোকপি করাও ক্রয় অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। এর দ্বারা প্রকাশকের রয়্যালিটি কমলেও সমস্যা নেই। কারণ, প্রকাশকের কাটতিতে প্রভাব ফেলা নিষেধ হওয়ার অর্থ হলো বাণিজ্যিকভাবে কাটতিতে প্রভাব ফেলা নিষেধ। (মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম হাফি. এর চুক্তিকোষ খণ্ড : ২ পৃষ্ঠা : ৫৩০ ভাব অবলম্বনে)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top