এবার পুরো গাজা দখল করার পরিকল্পনা করছে ইসরাইল। সেজন্য তারা গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকের অস্ত্র হিসেবে গ্রহণের চেষ্টা করছে। সোমবার (৫ মে) কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এবার বিপুলসংখ্যক রিজার্ভ সৈন্য নামাবে ইসরাইল
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা দখল এবং সেখানে মানবিক সহায়তার দায়িত্ব গ্রহণের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। পরিকল্পনার আওতায় রিজার্ভ সৈন্য মোতায়েন, গাজা দখল এবং স্থানীয় জনগণকে দক্ষিণে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব রয়েছে। এতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি নিরাপত্তা ঠিকাদারদের মাধ্যমে খাদ্য বিতরণে নিরাপত্তা প্রদান করবে।
গাজায় স্থল অভিযানে বন্দীদের মৃত্যু ঝুঁকি, নেতানিয়াহুকে সেনাপ্রধানের সতর্কতা
নেতানিয়াহু গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছা প্রস্থানের ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ইসরাইল সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে এবং গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। যদিও সরকার বলছে সেখানে খাদ্য মজুত পর্যাপ্ত। এই প্রেক্ষাপটে গাজার পরিবারে খাদ্য বিতরণের জন্য একটি মানবিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই পরিকল্পনা নিয়ে রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সেনাপ্রধান ইয়াল জামির সতর্ক করেছেন যে গাজায় পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ চালালে বন্দীরা নিহত হতে পারে এবং ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে পড়তে পারে। বিরোধী নেতারা অভিযানের উদ্দেশ্য ও সৈন্য মোতায়েন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এটিকে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার কৌশল হিসেবে দেখছেন।
গাজা যুদ্ধ থামবে কবে, জানালেন ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী
অতি-ডানপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির গাজায় খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ ও গুদামে বোমা হামলার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে জামির তার বক্তব্যকে বিপজ্জনক ও আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী বলে সমালোচনা করেছেন। একইসাথে, জাতিসঙ্ঘের হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম সতর্ক করেছে যে ইসরাইলের পরিকল্পনা মানবিক নীতিমালার লঙ্ঘন এবং সাহায্যকে সামরিক কৌশলে পরিণত করার প্রচেষ্টা।
জাতিসঙ্ঘ এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো ইসরাইলের পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে। কারণ এটি আন্তর্জাতিক মানবিক নীতিমালা—মানবতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার—পরিপন্থী। সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তারা গাজায় অবস্থান করছে এবং খাদ্য, পানি, চিকিৎসা, পুষ্টি ও সুরক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত। তারা বিশ্ব নেতাদের প্রতি অবরোধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। যাতে সীমান্তে অপেক্ষমাণ বিপুল সাহায্য সরবরাহ সম্ভব হয়।
দাবানলের সাথে প্রচণ্ড বালুঝড়ের কবলেও ইসরাইল
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাজায় খাদ্য সংগ্রহ করতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়। যেটি “ময়দা হত্যাকাণ্ড” নামে পরিচিত। এই ঘটনার সময় জাতিসঙ্ঘ বা অভিজ্ঞ মানবিক সংস্থার পরিবর্তে ইসরাইল সেনাবাহিনী বেসরকারি ঠিকাদারদের মাধ্যমে কনভয় পরিচালনা করেছিল। একই বছর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র গাজায় সহায়তা পৌঁছাতে একটি ২৩০ মিলিয়ন ডলারের ভাসমান ঘাট নির্মাণ করলেও তা সামান্য পরিমাণ খাদ্য পৌঁছানোর পর বন্ধ করে দেয়া হয়।
গাজা যুদ্ধ থামবে কবে, জানালেন ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী
এছাড়া, মার্চ মাসে আকাশপথে সহায়তা পাঠানোর সময় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়। মানবিক সংস্থাগুলো জানায় যে বিমান থেকে খাদ্য ফেলা ২০ লক্ষ মানুষের প্রয়োজন মেটাতে একেবারেই অপ্রতুল।
সূত্র : আল জাজিরা