ফিলিস্তিন, আর্জেন্টিনা

ফিলিস্তিনি পরিবারকে ঢুকতে দিলো না আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে ছুটি কাটাতে এসে একটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে জোরপূর্বক বহিষ্কার করা হয়েছে। বৈধ ভ্রমণের কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও এই পরিবারকে এজেইজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনা সম্পর্কে মঙ্গলবার (১ জুলাই) আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম প্যাগিনা-১২ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

অধিকৃত পশ্চিমতীরের বেতেলহেম থেকে আসা খ্রিস্টান ফিলিস্তিনি এই পরিবারটি ১৬ জুন ছুটি কাটাতে আর্জেন্টিনায় আসে এবং ২৫ জুন ফেরত যাওয়ার টিকিট ছিল। তবে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তাদের একাধিক ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে একটি স্প্যানিশ ভাষায় লেখা নথিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়, যেটিকে একটি রেস্তোরাঁয় প্রবেশের অনুমতি হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। অনুবাদক চেয়েও তারা পাননি।

পরিবারটি পরে বুঝতে পারে, তারা যে নথিতে স্বাক্ষর করেছে, তা একটি নির্বাসন আদেশ, যেখানে তাদের ‘ভুয়া পর্যটক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবারের এক সদস্য স্যান্ডি বাসাম হান্না আবু ফারহা জানান, ‘অফিসার আমাদের মিথ্যা বলেছে এবং আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে।’

আবু ফারহা পরিবার অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে একটি পর্যটন ব্যবসা পরিচালনা করেন। তাদের রয়েছে বেতেলহেমের অন্যতম বড় স্যুভেনির দোকান এবং হেবরনসহ পবিত্র স্থানগুলোতে পর্যটক গাইডের ব্যবস্থা।

পরিবারটি অভিযোগ করেছে, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় খাবার ও ওষুধ ছাড়াই আটক রাখে। স্থানীয় পরিচিতরা তাদের অবস্থান জানতে না পেরে উদ্বিগ্ন হয়ে আইনি সহায়তা চায়। কিন্তু এক আইনজীবীকে ওই পরিবারের সাথে কথা বলতে বাধা দেয়া হয়। আরেক আইনজীবী উরিয়েল বিওন্ডি একটি হেবিয়াস কর্পাস আবেদন দাখিল করেন।

পরিবারটি জানিয়েছে, তারা তেল আবিবে অবস্থিত আর্জেন্টিনা দূতাবাস থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভিসা পেয়েছিল, যার মধ্যে ছিল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, চিকিৎসা বীমা, রাউন্ড-ট্রিপ টিকিট এবং হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণ রয়েছে।

তবুও আর্জেন্টিনার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ নির্বাসনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে। পরে আর্জেন্টিনা সরকার জানায়, পরিবারের প্রধান বাসাম হান্না ইসা আবু ফারহার বিরুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিক সতর্কতা’র ভিত্তিতে নির্বাসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। পরিবারটির দাবি, এটি ভুল পরিচয়ের একটি পুরনো সমস্যা, যা অনেক আগেই সমাধান হয়েছে।

স্যান্ডি বলেন, ‘তারা যা চেয়েছিল, আমরা তা দিয়েছি।’ পরিবারের নথিপত্রে অতীত বিভ্রান্তি ব্যাখ্যা করে একটি চিঠিও ছিল। আবু ফারহা এর আগে ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নিরবিচারে ভ্রমণ করেছেন।

এই ঘটনাটি আর্জেন্টিনার অভিবাসন নীতিতে সাম্প্রতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ঘটেছে বলে সমালোচকরা মনে করছেন। মে মাসে প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলি এক নির্বাহী আদেশে অভিবাসন নিয়ম কঠোর করেন। এতে বিদেশীদের প্রবেশ ও বহিষ্কারে সরকারের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়। এই পরিবর্তন অনেকের মতে, আর্জেন্টিনার দীর্ঘদিনের অভিবাসীবান্ধব নীতির বিপরীত।

আর্জেন্টিনার আবাসিক মুখপাত্র ম্যানুয়েল অ্যাডর্ন বলেন, ‘কিছুদিন ধরে আমাদের এমন নিয়ম ছিল, যা অনেক সুবিধাবাদীদের অপব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। এখন সময় এসেছে আর্জেন্টিনাকে আবার মহান করার।’

সূত্র : টিআরটি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top