বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের উপযুক্ত সময় ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিল। তবে তিনি শর্তসাপেক্ষে জানান, ফেব্রুয়ারির আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বিচার কার্যক্রমে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে নির্বাচন এপ্রিলের বাইরে যাওয়া উচিত হবে না।
শনিবার (৩ মে) রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে দলের জেলা ও মহানগরী আমির সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলন পরিচালনা করেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের নেতারা।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০১১ সালের পর প্রথমবারের মতো এমন বড় কর্মসূচির আয়োজন সম্ভব হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দল ও ইসলামপন্থীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে এবং অন্তত তিনটি গণহত্যা ঘটিয়েছে—পিলখানা, শাপলা চত্বর এবং ২০২3 সালের জুলাই-আগস্টে।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, এরপর দেশের জনগণ শান্তিপূর্ণ আচরণ করেছে। জামায়াত তখন থেকেই শহীদ পরিবার ও আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি মনে করেন, জাতীয় স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতির স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব রয়েছে এবং জামায়াত ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোতে চায়।
তিনি অপরাধীদের দৃশ্যমান বিচারের দাবি তুলে বলেন, ন্যায়বিচার ছাড়া বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। কালো টাকা ও পেশীশক্তিকে ঠেকাতে হলে বিচারিক কার্যক্রমে গতি আনতে হবে। এছাড়া তিনি নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালুর পক্ষে মত দেন, যা বিশ্বে বহু উন্নত দেশ অনুসরণ করছে।
নারীবিষয়ক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এসব সুপারিশ বিদ্যমান সংস্কৃতি ও ইসলামি বিধানের পরিপন্থী। এ ধরনের প্রস্তাব কোরআনের শিক্ষার বিরোধী বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গাজা পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক মুসলিম নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে চলমান নিপীড়নের অবসান হওয়া উচিত এবং ধর্মীয় আবেগকে উসকে দিয়ে জুলুমের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
অবশেষে তিনি জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জামায়াত প্রতিশোধে নয়, আইনগত প্রতিকারে বিশ্বাস করে। যারা দেশ থেকে অর্থ পাচার করেছে, তাদের সম্পদের শ্বেতপত্র প্রকাশ ও টাকা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, তারা যেন সাহসিকতার সঙ্গে সত্য তুলে ধরেন। একইসাথে তিনি আল্লাহর সাহায্য কামনা করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার আহ্বান জানান।