টুডেনিউজ বিডি ডটনেট
ফ্রিল্যান্সিং হলো একটি মুক্ত পেশা—যেখানে কাজ করতে কারো কোনো হস্তক্ষেপ বা বাধা নেই। আমাদের সমাজে যেমন চুক্তির মাধ্যমে একজন অন্যজনের কাছ থেকে কোনো কাজ করিয়ে তার পারিশ্রমিক দেয়, ঠিক তেমনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে সব কাজ করা হয় এবং তার বিনিময়ে যে অর্থ উপার্জন হয়, সেটাই ফ্রিল্যান্সিং নামে পরিচিত।
এই প্ল্যাটফর্মে হাজার হাজার ধরনের কাজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে কেউ যদি শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ বা হালাল পন্থায় শর্ত মেনে উপার্জন করে, তাহলে নিঃসন্দেহে সেটি হালাল। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন:
“নিজের হাতের উপার্জন থেকে উত্তম খাবার কেউ কখনও খায়নি। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ২০৭২)
তবে সব সময় মনে রাখতে হবে—কাজটি হালাল না হারাম, তা বুঝে নেওয়া জরুরি। সন্দেহজনক ও হারাম কাজ থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ। রাসূল ﷺ বলেন:
“নিশ্চয়ই হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এই দুয়ের মাঝখানে কিছু বিষয় আছে যা সন্দেহপূর্ণ, যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি এই সন্দেহপূর্ণ বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকবে, সে তার দ্বীন ও সম্মান রক্ষা করবে। আর যে এগুলোর মধ্যে জড়িয়ে পড়বে, সে হারামে জড়িয়ে পড়বে।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫২)
ইসলামী শরীয়তে সেবার বিনিময়ে অর্থ নেওয়াকে ‘ইজারাহ’ বলা হয়। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে এই ইজারাহ চুক্তিরই একটি আধুনিক রূপ। এখানে ফ্রিল্যান্সার হলেন একজন কর্মচারীর মতো, আর ক্লায়েন্ট হলেন ভাড়াটের মতো। তাই এদের মধ্যে হওয়া চুক্তিতে ইজারাহর সব শর্ত মানা জরুরি।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে যদি এমন কোনো সেবা দেওয়া হয়, যাতে কোনো হারাম বিষয় নেই—যেমন: হারাম কিছু প্রচার নয়, সঙ্গীত বা অশ্লীলতা নেই, প্রাণীর ছবি বা নিষিদ্ধ কিছু নেই—তাহলে এমন সেবার বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করা শরীয়তসম্মত বা জায়েয। তবে এসব হারাম উপাদান থাকলে, সেই আয় বৈধ হবে না।
• বিন্নুরি টাউনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে:
“ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে গ্রাফিক ডিজাইন বা ওয়েবসাইট তৈরি করে বিক্রি করা এবং এর মাধ্যমে উপার্জন করা জায়েয—শর্ত হলো, তাতে কোনো প্রাণীর ছবি, অবৈধ বিজ্ঞাপন বা সঙ্গীত না থাকে।”
(ফতোয়া নম্বর : ১৪৪২১০২০১১০৮)
• দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে:
‘ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে অমুসলিম ক্লায়েন্টদের কাজ করে তাদের কাছ থেকে মজুরি গ্রহণ করা জায়েয কি না?”
উত্তরে বলা হয়েছে—যদি কাজটি বৈধ হয়, তাহলে নির্দিষ্ট ফি নিয়ে তা করা জায়েয।
-যদি ক্লায়েন্ট অমুসলিম হন, তাহলে মনে রাখতে হবে—নির্ভরযোগ্য মতানুসারে অমুসলিমরা শরীয়তের শাখাগত বিধান মানার বাধ্যবাধকতায় নেই। সেহেতু সুদ ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থও তাদের জন্য হারাম নয়। ফলে চুরি বা প্রতারণা ব্যতীত তাদের বৈধ উপার্জন থেকে ফ্রিল্যান্সার মুসলিম হিসেবে পারিশ্রমিক নেওয়া বৈধ।
(ফাতাওয়ায়ে রাশিদিয়া: ৩২৭, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ: ১৭/৩৬৬)
-আর যদি ক্লায়েন্ট মুসলিম হন, তাহলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্ভরযোগ্য আলেমদের মতে, তার অর্থ হালাল না হারাম, তা যাচাই করা জরুরি নয়। ক্লায়েন্ট যেই অর্থ দেন, তা নির্দ্বিধায় গ্রহণ করা যেতে পারে। (ফতোয়া নম্বর: ৬০০২১৪)




