টুডেনিউজ বিডি ডটনেট
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শংকর সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, “ভারতের চাইতে বেশী কোনো দেশ বাংলাদেশের মঙ্গল চায় না।” এই মন্তব্যটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে, তবে প্রশ্ন ওঠে—একটি দেশের মঙ্গল অন্য একটি রাষ্ট্রের জন্য আদৌ কাম্য হতে পারে কি না? পিনাকি ভট্টাচার্জ, একজন বিশ্লেষক, তার বক্তব্যে বলছেন, পৃথিবীতে কোনো রাষ্ট্রের কাজ অন্য রাষ্ট্রের মঙ্গল চাওয়া নয়। এমনকি ভারত, বাংলাদেশের মঙ্গল চাওয়ার কথা বললেও, অতীতের ঘটনাগুলি সেই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে।
পিনাকি ভট্টাচার্জের মতে, ভারতের বাংলাদেশে যে “মঙ্গল” চাওয়ার দাবি করা হয়, তার পেছনে একাধিক বিতর্কিত এবং অপ্রিয় ঘটনা রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন:
১. বাংলাদেশের নাগরিকদের সীমান্তে হত্যার ঘটনা
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী গুলি চালানোর ঘটনা প্রায়ই সামনে আসে। এই ধরনের ঘটনার মধ্যে সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।
২. নদীর পানি বন্ধ করে দেয়া
ভারত বাংলাদেশের একাধিক নদী এবং এর পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, যার কারণে বাংলাদেশের কৃষি এবং জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নদীগুলির প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে পানি সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, যা বাংলাদেশের মঙ্গলবাদী আচরণের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
৩. কাঁটাতারের বেড়া এবং সীমান্তের অবরোধ
ভারত বাংলাদেশের সাথে দীর্ঘ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দেশটিকে ঘিরে রেখেছে। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এক ধরনের শর্তসাপেক্ষ ও কৃত্রিম সীমা তৈরি করছে।
৪. হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনকে সমর্থন
ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দৃষ্টি রেখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনকে সমর্থন দিয়েছে। পিনাকি ভট্টাচার্জের মতে, ভারত তাদের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসন টিকিয়ে রেখেছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
৫. ট্রানশিপমেন্টের নিষেধাজ্ঞা
ভারত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা ব্যাহত করার জন্য ট্রানশিপমেন্ট সেবা বন্ধ করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের ব্যবসা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
৬. বাঙালি জাতির প্রতি অবমাননা
ভারতের সাধারণ জনগণ বাংলাদেশের জনগণকে কটূক্তি করে “কাংলু” বলে ডাকে, যা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অবমাননা এবং disrespect হিসেবে বিবেচিত হয়।
৭. ফেন্সিডিলের কারখানা
ভারত সীমান্তে ফেন্সিডিলের কারখানা খুলে বাংলাদেশে মাদক প্রবাহের এক নতুন যুগ সৃষ্টি করেছে। এই মাদক বাংলাদেশের যুব সমাজকে বিপথগামী করছে এবং সমাজে অপরাধ বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই সব ঘটনায় স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মঙ্গল নিয়ে ভারতের দাবি অনেক সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পিনাকি ভট্টাচার্জের মতে, ভারতের মঙ্গল চাওয়ার চক্কর থেকে যদি বাংলাদেশ বের হয়ে আসতে পারে, তবে তা দেশের জন্য সত্যিকারের মুক্তির লক্ষ্যে একটি বিশাল পদক্ষেপ হবে।
ভারতের সাথে সম্পর্কের এই সূক্ষ্ম দিকগুলো পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে একটি আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে প্রশ্ন উঠছে—ভারত যখন “মঙ্গল” চাওয়ার কথা বলে, তখন তার কার্যক্রম কি বাংলাদেশে আসলেই মঙ্গল বয়ে আনছে? কিংবা, ভারত বাংলাদেশের প্রকৃত মুক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে?
এটাই হলো বাংলাদেশের ভবিষ্যতের পথ, যা একদিন হয়তো মুক্তির দিকে যাবে, যদি বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকারের মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে এসব বাস্তবতা অনুধাবন করে।