ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন

বিজেপির ‘এক দেশ এক ধর্ম’ বাস্তবায়নে চরম সঙ্কটে মুসলিমরা

আসামে বিজেপির ‘এক দেশ এক ধর্ম’ বাস্তবায়নে চরম সঙ্কটে মুসলিমরা। সম্প্রতি মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) মুসলিমবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আসামে ভয়াবহ দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।

বিজেপির ‘এক দেশ এক ধর্ম’ বাস্তবায়নে চরম সঙ্কটে মুসলিমরা

আসামের বিরোধীদলীয় নেতা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য রিপন বোড়া বলেন, বিজেপির লক্ষ্য ‘এক দেশ, এক ধর্ম’। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তারা সারা ভারতে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ‘ক্র্যাকডাউনের’ নামে মুসলিমদের বাড়িঘর, মসজিদ ও মাদরাসা ভেঙে দিচ্ছেন, নির্বিচারে গণগ্রেফতার করছেন এবং হাজার হাজার মানুষকে আটক কেন্দ্রে বন্দি করে রাখছেন। বন্দিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর বর্ণবাদী ভাষ্য ও বাস্তুচ্যুতির ভয়াবহ চিত্র

তথ্যচিত্রে দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বারবার মুসলিমদের ‘বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এমনকি তাকে বলতে শোনা গেছে, “বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিমরা আসাম দখল করে নেবে।”

এই নীতির বাস্তব ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ। যেসব এলাকায় মুসলিমদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে, সেখানকার মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে বিভিন্ন অস্থায়ী শিবিরে।

বন্দি স্বামীর খোঁজে স্ত্রীর আর্তনাদ : বিষ খাওয়ার হুমকি

আসিয়া খাতুন নামের এক নারী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে। তার সাথে দেখা করতে গেছিলাম, ছাড়ানোর চেষ্টা করেছি, তারা ছাড়েনি। আর দু’য়েক দিন দেখব, তাকে না ছাড়লে আগে বেডিরে বিষ খাওয়ামু, পরে নিজে খামু।”

এমন আর্তনাদ শুধু আসিয়ার নয়। আরও অনেক মুসলিম নারীই একই রকম দুর্দশায় ভুগছেন। মোটকথা, আসামে বিজেপির ‘এক দেশ এক ধর্ম’ বাস্তবায়নে চরম সঙ্কটে মুসলিমরা।

ফরিদা বেগম বলেন, “এইখানে আমার বড় ঘর ছিল, এইখানে আমি ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকতাম। এখন আর কিছুই নেই। শিবিরে আমরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি।”

ভারতের নন্দনগরে মুসলিম নিধন, শহরের সর্বশেষ মুসলিম দম্পতির নিদারুণ লড়াই

সালেহা বলেন, “৪০ বছর ধরে এই এলাকায় আছি। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সবই আছে। তবু আমাদের বাড়িঘর ভেঙে তাড়িয়ে দিয়েছে।”

বিজেপির ভোট কৌশলে ইসলামোফোবিয়া?

অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)-এর মুখপাত্র আমিনুল ইসলাম বলেন, ভারতে সংখ্যালঘুরা সবসময় নির্যাতিত।

তিনি বলেন, “যদি আপনি মুসলিমদের নির্যাতন করেন, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের সমর্থন আপনার দিকে আসবে। মুসলিমদের বাংলাদেশি বা বিদেশি হিসেবে তুলে ধরলে নির্বাচনে ৩৪ শতাংশ ভোট না থাকলেও বিজেপি সহজেই বাকি ভোট পাবে।”

প্রতিবেদকের ভাষ্যমতে, ইসলামোফোবিক আক্রমণের সংখ্যা ভারতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালের রাজ্য নির্বাচনে বিজেপির সাফল্য নিশ্চিত করতেই মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, “আমরা দেখেছি, মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর দমন-পীড়ন চালাতে কিভাবে আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।”

কেবল আসাম নয়, সহিংসতা ছড়িয়েছে উত্তরাখণ্ডেও

শুধু আসামে নয়—উত্তরাখণ্ডের নন্দ নগরেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এক মুসলিম নাপিতের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগকে কেন্দ্র করে দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। পরে তা ভয়াবহ রূপ নেয়, যেখানে মুসলিমদের বাড়িঘর, দোকানপাট ও উপাসনালয় আক্রমণের শিকার হয়।

বেশিরভাগ মুসলিম পরিবার শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তবে আহমেদ হাসান নামের এক ব্যবসায়ী এখনো সেখানেই শিকড় আঁকড়ে পড়ে আছেন।

আরো পড়ুন : উত্তরাখণ্ডে ১৭০টির বেশি মাদরাসা সিলগালা

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top