টুডেনিউজ বিডি ডটনেট
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বিপদের মধ্যে ডুবে গেছে। ফ্যাসিবাদী শক্তি উত্থিত হয়েছে, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ২৫০ বছরের পুরানো একটি জাতীয় অবকাঠামো এখন ধ্বংসের মুখে। এই ধ্বংসকে থামানোর কেউ নেই, এবং প্রতিরোধ যেন ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়।
ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এবং ট্রাস্টিরা সবাই ট্রাম্পের আইনসভায় পা বাড়াতে ভয় পাচ্ছেন। আইনি প্রতিষ্ঠানগুলো, এমনকি যখন তারা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে রায় দেয়, তখনও কোনো কার্যকরী প্রতিরোধ করতে পারছে না। অন্যদিকে, ট্রাম্পের ধনকুবের মিত্ররা নিজের লাভের স্বার্থে তার প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা বিদেশী ছাত্রদের আটক করা হচ্ছে, এমনকি তাদের নিখোঁজও করা হচ্ছে। ফেডারেল বিচার বিভাগও কার্যকরীভাবে প্রতিরোধ করতে পারছে না। তবে, অনেক আমেরিকান এখনও ট্রাম্পের অগ্রাধিকারকে সমর্থন করছে। যদিও তার কালো রাজপুত্র এলন মাস্কের মত কৌশলগত অস্বীকৃতির পরও, তার অনুমোদনের রেটিং এখনও স্থিতিশীল রয়েছে। প্রায় ৫৪ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, ট্রাম্প তার পূর্বসূরি জো বাইডেনের চেয়ে ভালো কাজ করেছেন।
ট্রাম্প এমন দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করেছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। তিনি গ্রিনল্যান্ড এবং কানাডাকে আক্রমণ করার এবং পানামা থেকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ রুটের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ট্রাম্প ঐতিহাসিক কূটনৈতিক চুক্তিগুলির পাশাপাশি বৈচিত্র্য, ন্যায্যতা এবং অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচি বাতিল করার চেষ্টা করেছেন।
মুক্তি দিবসের বিপর্যয়
তবে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধ্বংস করেছে। “মুক্তি দিবসে” তিনি বিদেশী আমদানির উপর শাস্তিমূলক কর আরোপ করেছেন, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। চীনা আমদানির উপর ৫৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে তিনি একাধিক দেশকে গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন করেছেন। এর ফলস্বরূপ, জানুয়ারি মাসের পর থেকে মার্কেটগুলো ১১ ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়েছে, ব্যবসায়ীরা একে “হত্যাকাণ্ড” হিসেবে বর্ণনা করছেন।
এই অর্থনৈতিক নীতি মূলত মার্কিন উৎপাদন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্দেশ্যে হলেও, এর মাধ্যমে বিদেশী এবং দেশীয় কোম্পানির পাশাপাশি পুরো অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণী, যারা বিদেশে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও চাকরি হারাচ্ছেন। গত মাসে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে ২৭৫,০০০ লোককে চাকরি ছাড়তে হয়েছে। এর বিপরীতে, ট্রাম্পের স্বাভাবিক মিত্রদের জন্য কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, বরং তারা বিশাল লাভ পাচ্ছে।
মার্কিন সামরিক জোটের পরিত্যাগ
ট্রাম্প এমন সামরিক জোটগুলো পরিত্যাগ করেছেন, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করছিল। তিনি রাশিয়ার হুমকির মুখে ইউরোপকে একা রেখে দিয়েছেন। তবে, ফেডারেল ক্ষমতার উপর নির্ভর করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হলেও, বিদেশী দেশগুলোর পক্ষে আমেরিকান কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সহজ নয়।
প্রতিরোধের প্রয়োজন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ট্রাম্পের আমেরিকান আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ট্রাম্পের শাসন বিশ্বব্যাপী ক্ষতির কারণ হতে পারে। কিছু দেশ হয়তো মনে করছে, তারা আত্মসমর্পণ করে চুক্তি বাতিল বা শুল্ক কমিয়ে লাভ পাবে। কিন্তু ট্রাম্পের উপর আস্থা রাখা একেবারে অবিশ্বস্ত একটি প্রস্তাব।
বয়কট, বিচ্ছিন্নতা এবং নিষেধাজ্ঞা (BDS)
বিশ্বকে যতদূর সম্ভব মার্কিন পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে একটি BDS (বয়কট, বিচ্ছিন্নতা, নিষেধাজ্ঞা) আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, যা আন্তর্জাতিক সঙ্গঠনগুলোকে একত্রিত করবে। ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য, বিদেশী সরকার, কোম্পানি এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলন দ্বারা ট্রাম্পকে তার অপরাধের জন্য দায়ী করা হবে।
বিশ্বকে ডলারের দাপট থেকে মুক্ত হতে হবে এবং বিকল্প আর্থিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে ডলারের প্রভাব কমিয়ে, একে একে আমেরিকান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। এই কাজের মাধ্যমে বিশ্ব নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম হবে।
নেতৃত্ব এবং সংকল্পের প্রয়োজন
বিশ্বকে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী করতে হবে। যদি বিশ্ব তার দমননীতি প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বিশ্বের অন্যান্য শক্তিগুলো একে একে তা করতে শুরু করবে, যেমন রাশিয়া করছে। এটি একটি অস্তিত্বের সংকট; এই সংকটের মোকাবিলা করতে নেতৃত্ব এবং সংকল্পের প্রয়োজন। যদি বিশ্ব তার পদক্ষেপে দেরি করে, তবে রাশিয়ান ট্যাঙ্কগুলি খুব শীঘ্রই ইউরোপে ঢুকে পড়বে, এবং ট্রাম্পের ধ্বংসযজ্ঞের প্রভাব ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ হতে পারে।
বিশ্বকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা কমিয়ে দিতে হবে এবং তাদের সেই আচরণ করতে হবে যা তারা প্রাপ্য। ট্রাম্পকে তার অপরাধের জন্য মূল্য দিতে হবে এবং বিশ্বের প্রতিরোধে একত্রিত হয়ে তাকে পরাস্ত করতে হবে।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই