টুডেনিউজ বিডি ডটনেট
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন (USCIRF) ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগে ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগজনক’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর এসব সুপারিশের কথা সামনে এসেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিদেশের মাটিতে ভারতের শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যাকাণ্ডের পেছনে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা র’য়ের হাত রয়েছে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে এই পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। ভারতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ভারতের পাশাপাশি ভিয়েতনামকেও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, দেশটিতে ধর্মীয় ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বাড়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে এই সুপারিশের বাস্তবায়ন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। যদিও ভারত ও ভিয়েতনাম উভয় দেশই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
বিশ্লেষকদের মতে, চীনের প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে ভারতকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাই মানবাধিকার বিষয়গুলোতে ওয়াশিংটন ততটা কঠোর অবস্থান নেয় না। ফলে র’য়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনাও কম।
২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ভারতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ওয়াশিংটন-দিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এক শিখ নেতাকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টায় ভারতের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের জড়িত থাকার অভিযোগ আনে ওয়াশিংটন, যদিও ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মার্কিন ওই কমিশনের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত বছরজুড়ে ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও বৈষম্য বেড়েছে।
গত নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দেশটির মুসলিম জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও অপতথ্য ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে মোদি মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ‘মুসলিমরা বেশি সন্তান জন্ম দেয়’— এমন মন্তব্য করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা-বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিবেদনে ভারতে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের তথ্য উঠে এসেছে। তবে এসব প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে মোদি বলেছেন, তার সরকার সব সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
অপরদিকে, সম্প্রতি একটি ডিক্রি জারি করে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অর্থের হিসাব চেয়েছে ভিয়েতনাম প্রশাসন। একে ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন ওই কমিশন। ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করার দায়ে প্রায় ৮০ জন বন্দীর তথ্য প্রকাশ করেছে কমিশন, যাদের সাজা দিয়েছে ভিয়েতনাম সরকার। এসব কারণে ভিয়েতনামকেও ‘বিশেষ উদ্বেগজনক’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এই সুপারিশের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ভারত ও ভিয়েতনামের দূতাবাস।
