ভারতীয় হামলার আশঙ্কায় পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরের সকল মাদরাসা ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানি কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি ভারতীয় কাশ্মিরে পর্যটকদের উপর এক হামলার পর এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ ভারতীয় প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।
ইসলামাবাদ দাবি করেছে, তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে ভারত শিগগিরই সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পর্যটকদের উপর ওই হামলায় পাকিস্তান-শাসিত অঞ্চল থেকে পরিচালিত ইসলামী সংগঠনের সাথে কিছু সদস্যের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
পাকিস্তানি কাশ্মিরের ধর্ম বিষয়ক বিভাগের পরিচালক হাফিজ নাজির আহমেদ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানান, নিরাপত্তা বাহিনী আশঙ্কা করছে যে ভারতীয় বাহিনী মাদরাসাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। এরপর সেগুলোকে উগ্রবাদী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বলে উপস্থাপন করতে পারে।
তবে ৩০ এপ্রিল জারি করা এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে মাদরাসা বন্ধের কারণ হিসেবে কেবল তাপপ্রবাহের উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে হাফিজ নাজির আহমেদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা দুই ধরণের তাপের মুখোমুখি। একটি আবহাওয়ার কারণে এবং অন্যটি (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) মোদির কারণে।’ তিনি আরো জানান, আতঙ্ক এড়াতেই বিজ্ঞপ্তিতে হামলার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। অতীতেও ভারত পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি ইসলামপন্থী উগ্রবাদী ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
আহমেদ বলেন, ‘গতকাল আমরা একটি বৈঠক করেছি, যেখানে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে নিরীহ শিশুদের ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না।’ পাকিস্তানি কাশ্মিরের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ও নিশ্চিত করেছে যে সতর্কতামূলক কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ধর্মবিষয়ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরে বর্তমানে ৪৪৫টি নিবন্ধিত মাদরাসা রয়েছে, যেখানে ২৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। স্থানীয়ভাবে মাদরাসা নামে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানগুলো ধর্মীয় সংগঠন দ্বারা পরিচালিত এবং প্রথাগত বিদ্যালয়ের সাশ্রয়ী, এমনকি প্রায়ই বিনামূল্যে শিক্ষা দেয়ার কাজ করে।
ভারত যদি কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পাকিস্তান ‘নিশ্চিত ও সিদ্ধান্তমূলক’ জবাব দেবে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। এ ধরনের সঙ্ঘাত পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে।
উল্লেখ্য, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হিমালয় অঞ্চলের কাশ্মির অঞ্চলটি সম্পূর্ণভাবে দাবি করে ভারত ও পাকিস্তান। যদিও এর একটি অংশ ভারতের এবং অন্য একটি অংশ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই অঞ্চলকে ঘিরেই দুই দেশ দু’টি যুদ্ধ এবং একাধিক সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে।
১৯৮৯ সাল থেকে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিদ্রোহ চলছে। অঞ্চলটিতে ভারতের কঠোর শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ বিরাজমান। বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে সেখানে ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে এবং সহিংসতায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
ভারত নিয়মিতভাবে অভিযোগ করে আসছে যে পাকিস্তান উগ্রবাদীদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তবে ইসলামাবাদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, তারা কেবল কাশ্মির ইস্যুতে নৈতিক ও কূটনৈতিক সহায়তা প্রদান করে। পাশাপাশি ইসলামী চরমপন্থার দিকে তরুণদের টেনে নেয়ার জন্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মাঝেমধ্যে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
এই পরিস্থিতিতে মাদরাসাগুলো সাময়িক বন্ধের সিদ্ধান্তকে দুই দেশের তীব্র উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সূত্র : রয়টার্স