কাশ্মীরের পহেলগামে ২২ এপ্রিল সংঘটিত বন্দুকধারীদের হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউটিউবে একটি নতুন মুসলিমবিদ্বেষী গান প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ভারতের মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে।
‘পেহলে ধরম পুছা’ শিরোনামের এই গানে দাবি করা হয়েছে, মুসলিমরা হিন্দুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। গানটি ইতিমধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি বার দেখা হয়েছে।
ইসরাইল যেভাবে গাজাকে শেষ করেছে, আমরাও ওদের শেষ করব : বিজেপি নেতা শুভেন্দু
ভারতে গানে গানে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিম বিদ্বেষ
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ ধরনের অন্তত ২০টি মুসলিমবিদ্বেষী গান অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে, যেগুলোতে ইসলাম নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে এবং ঘৃণার বার্তা দেওয়া হচ্ছে।
এই গানগুলোতে ধারাবাহিকভাবে মুসলিমদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। পহেলগাঁও হামলার সময় একজন মুসলিম ঘোড়াচালক প্রাণ হারালেও, এবং আহত পর্যটকদের উদ্ধারেও স্থানীয় মুসলিমরা সাহায্য করলেও, এই গানে বলা হচ্ছে ভারতীয় মুসলিমদের আর বিশ্বাস করা যায় না। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক কিছু গানে পাকিস্তানকে পারমাণবিক হামলায় ধ্বংস করার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং পহেলগাঁওয়ের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে বলা হয়েছে।
বিজেপির ‘এক দেশ এক ধর্ম’ বাস্তবায়নে চরম সঙ্কটে মুসলিমরা
উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো এসব মুসলিমবিদ্বেষী গান ছড়িয়ে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বার্তাপ্রেরণ অ্যাপগুলোর মাধ্যমে। এগুলোকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়, ঘৃণা ও বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর বাস্তব পরিণতিও দেখা যাচ্ছে; ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের ঘরবাড়িতে হামলা, হুমকি এবং সহিংসতা বাড়ছে। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও উত্তরাখণ্ডে কাশ্মীরি মুসলিমদের উচ্ছেদ, হকারদের মারধর এবং চিকিৎসা না দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ভারতে প্রকাশ্যে মুসলিম নারীর হিজাব খুলে নিলো উগ্রবাদীরা
গত শুক্রবার উত্তর প্রদেশের আগ্রায় এক মুসলিম ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়, এবং এক উগ্র হিন্দুত্ববাদী ব্যক্তি এই হত্যার দায় স্বীকার করে বলেন, তিনি পহেলগাঁওয়ের ঘটনার প্রতিশোধ নিয়েছেন। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে হামলার দৃশ্যের ভিডিও ও ছবি তৈরি করে ছড়ানো হচ্ছে, যা মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণাকে আরও উসকে দিচ্ছে।
ভারতের নন্দনগরে মুসলিম নিধন, শহরের সর্বশেষ মুসলিম দম্পতির নিদারুণ লড়াই
এই অনলাইন ঘৃণার সুর একধরনের—পহেলগাঁওয়ে হামলাকে হিন্দু ধর্মের ওপর আঘাত হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে এবং মুসলিমদের হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে হিন্দুদের ‘একজোট’ হতে বলা হচ্ছে। ‘জাগো হিন্দু জাগো’ নামের একটি গানে মুসলিমদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলা হয়েছে, যেটি ১ লাখ ২৮ হাজারের বেশি বার দেখা হয়েছে। ‘মোদি জি আব মহা যুধ হো জানে দো’ শিরোনামের অন্য একটি গানে ভারতীয় মুসলিমদের ‘সাপ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং হিন্দুদের হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পোস্টে পহেলগাঁও হামলাকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইলে চালানো হামলার সঙ্গে তুলনা করে ভারত সরকারকে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। ইসরাইলের সেই প্রতিক্রিয়ায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৫২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ধ্বংস করা হয়েছে হাসপাতালসহ অধিকাংশ স্থাপনা।
উত্তর প্রদেশের লক্ষাধিক ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ রাজ্য সরকারের
পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের বিভিন্ন স্থানে কাশ্মীরি মুসলিমদের লক্ষ্য করে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। দ্য অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস (এপিসিআর) জানিয়েছে, ২২ এপ্রিলের পর থেকে ভারতজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অন্তত ২১টি ঘৃণা, ভয়ভীতি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে কাশ্মীরি নারী ও শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হয়েছেন।
সূত্র : আল জাজিরা