পহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এমন সময় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে ভারত বড় ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—চীন কী করবে? পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন কি এবারো তাদের পাশেই থাকবে?
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসাক দারের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি দুই দেশকেই সংযত থাকার আহ্বান জানান এবং পহেলগামের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের পক্ষে অবস্থান নেন। চীন হামলার নিন্দা জানালেও ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে প্রতিরক্ষা, কূটনীতি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা রয়েছে। চীন থেকে পাকিস্তান অস্ত্র আমদানির দিক থেকেও শীর্ষে। গত পাঁচ বছরে পাকিস্তানের ৮১ শতাংশ অস্ত্রই এসেছে চীন থেকে। ‘সিপেক’ প্রকল্পের মাধ্যমে চীন পাকিস্তানে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এসব কারণেই চীনের কাছে পাকিস্তান একটি কৌশলগত অংশীদার।
তবে যুদ্ধ বাধলে চীন সরাসরি পাকিস্তানের পাশে সামরিকভাবে দাঁড়াবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন নিজে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে ব্যস্ত, ফলে ভারতকে চাপে ফেলার জন্য দ্বিতীয় কোনও ফ্রন্ট খোলার ঝুঁকি নিতে চাইবে না। ভারতও চীনের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার।
তবু চীন কৌশলে পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যেমন, তারা বলেছে, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রচেষ্টাকে তারা সমর্থন করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি এক ধরনের পরোক্ষ বার্তা, যেন ভারত কোনও পদক্ষেপ নিতে গেলে সেটা যেন সীমিত থাকে।
যুদ্ধ শুরু হলে চীন সরাসরি সামরিক সহায়তা দেবে না, কিন্তু স্যাটেলাইট তথ্য, গোয়েন্দা সহায়তা এবং অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে সহায়তা করতে পারে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির ওপর এখন চীন-নির্ভর।
সবশেষে, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চীন মোটেই বাড়াতে চাইবে না। বরং শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির পথেই চীন এগোবে—নিজের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যেই।
সূত্র : বিবিসি