ভারত বাংলাদেশ রেল প্রকল্প, ভারতপন্থী দল, ইসলামী দলগুলো, ভারত বিরোধী শক্তি, বিএনপি, জামায়াত, দুর্বল সরকার

ভারত বাংলাদেশ রেল প্রকল্প স্থগিত করা হলো কেন

সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশ রেল প্রকল্প স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়া দিল্লি। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চীন-পাকিস্তানের দিকে বাংলাদেশের নীতিগত ঝোঁক এই পদক্ষেপের পেছনের মূল কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, খুলনা-মোংলা রেল লিঙ্ক, ও ঢাকা-জয়দেবপুর রেল সম্প্রসারণ।

ভারত এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের বিকল্প সংযোগ তৈরি করতে চেয়েছিল, যা কৌশলগত নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ‘চিকেন’স নেক’ নামে পরিচিত একটি সংকীর্ণ করিডোরের উপর পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্ভরশীল, যা যুদ্ধ বা সংঘাতে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

কলকাতায় পাসপোর্ট কেলেঙ্কারিতে জড়িত আ.লীগের নেতাকর্মীরা, প্রশাসনে অস্বস্তি

ভারত বাংলাদেশ রেল প্রকল্প স্থগিত কেন

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনুস-এর চীন সফর এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে নতুন করে আগ্রহ ভারতের দৃষ্টিতে উদ্বেগের কারণ।

এই প্রেক্ষাপটে ভারত কৌশলগতভাবে রেল প্রকল্পে বিরতি দিয়ে বার্তা দিয়েছে। যদি আঞ্চলিক ভারসাম্য ও সহযোগিতা বিঘ্নিত হয়, তাহলে উন্নয়ন সহযোগিতাও প্রশ্নের মুখে পড়বে।

বাংলাদেশের নতুন বাঁধ নিয়ে ভারতে উদ্বেগ, সীমান্তে প্রতিনিধি দল

আখাউড়া-আগরতলা ও খুলনা-মোংলা রেল লিঙ্ক : ভারতীয় স্বার্থের কেন্দ্রবিন্দু

ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে উদ্বোধন করা আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্প ছিল আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধির অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল উদাহরণ। প্রকল্পটি চালু হলে আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা রুটে যাত্রার সময় ৩৬ ঘণ্টা থেকে কমে ১২ ঘণ্টা হতো।

অন্যদিকে, খুলনা-মোংলা রেল সংযোগ প্রকল্প ছিল ভারতের লাইনে অফ ক্রেডিট এর আওতায় বাস্তবায়িত একটি প্রধান অবকাঠামোগত উদ্যোগ। মোংলা বন্দরকে ব্রড-গেজ রেলের সঙ্গে যুক্ত করা এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট সহজতর করা।

বাংলাদেশ-সেভেন সিস্টার্স রেল প্রকল্প স্থগিত, সঙ্কটে ভারত

চীনের প্রসার এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ

চীনের রেল অবকাঠামোতে সম্ভাব্য বিনিয়োগের ঘোষণা এবং ৪.৪৫ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন পরিকল্পনা শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত জোটবদ্ধতার ইঙ্গিতও বহন করে। এটি ভারত বাংলাদেশ রেল সংযোগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ভারত বিকল্প সংযোগ রুট (যেমন নেপাল ও ভুটান হয়ে সংযোগ) খোঁজার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেবে। কিন্তু এসব রুটেও রয়েছে রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক জটিলতা।

বাংলাদেশের মঙ্গল কোন পথে, যা বললেন পিনাকী

বাংলাদেশ কি ভারসাম্য রাখতে পারবে?

বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ এখন কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা করা—ভারত ও চীনের মধ্যে এমন এক দ্বিধান্বিত অবস্থান যেখানে একটিকে অগ্রাধিকার দিলে অন্যটি ক্ষিপ্ত হতে পারে। ভারত রেল সংযোগ স্থগিত করে কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন থামায়নি, বরং কূটনৈতিকভাবে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে।

এই মুহূর্তে শান্তিপূর্ণ ও সুষম কূটনীতিই হতে পারে বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। একপাক্ষিক কৌশল নয়, দ্বিপাক্ষিক আস্থা পুনর্গঠনই হতে হবে অগ্রাধিকার।

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল : ভারতই কেন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-সেভেন সিস্টার্স রেল প্রকল্প স্থগিত করেছে ভারত। দুই দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস লাইনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-সেভেন সিস্টার্স রেল প্রকল্প স্থগিত করেছে ভারত। এছাড়া বাংলাদেশে চালু থাকা একাধিক রেল সংযোগ প্রকল্পে তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে। অনুমান অনুযায়ী, ভারত প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার রেল সংযোগ এবং নির্মাণ প্রকল্প স্থগিত করেছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে “রাজনৈতিক অস্থিরতা” ও “শ্রম সুরক্ষা”-র বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ-সেভেন সিস্টার্স রেল প্রকল্প স্থগিত করেছে ভারত। এই স্থগিতাদেশে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা ব্যাহত হয়েছে। অন্তত তিনটি চলমান প্রকল্প বন্ধ হয়েছে এবং আরও পাঁচটি প্রকল্পের জরিপ কাজ স্থগিত করা হয়েছে।

চীন সফরের আগে ভারত যেতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূস

এদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে দেয়া মন্তব্যের পরে ভারত বাংলাদেশকে দেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা হঠাৎ করে প্রত্যাহার করেছে।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড (সিবিআইসি) এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৯ জুন জারি করা সংশ্লিষ্ট সার্কুলারটি বাতিল করা হয়েছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছিল।

প্রত্যাহার করা এই সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ ভারতীয় স্থল শুল্ক স্টেশন (এলসিএস), সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে- বিশেষত নেপাল, ভুটান এবং মায়ানমারের মতো স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্রে- পণ্য রফতানি করতে পারতো। এর ফলে বাংলাদেশী রফতানিকারকদের জন্য একটি দ্রুত ও কার্যকর বাণিজ্যপথ উন্মুক্ত হয়েছিল।

সূত্র : এনডিটিভি

এক দশকেরও বেশি সময় পর হচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান রাজনৈতিক সংলাপ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top