ভিসা বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশই ভারতের

ভিসা বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশই ভারতের

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশই ভারতের। সম্প্রতি আমেরিকান ইমিগ্রেশন লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইএলএ)-এর এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ভিসা বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশই ভারতের

সংগঠনটি জানিয়েছে, তাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে বাতিল করা ৩২৭টি ভিসার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভিসা।

‘আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিবাসন প্রয়োগের পদক্ষেপের সুযোগ’ শীর্ষক এক ব্রিফিংয়ে এআইএলএ বলেছে, এসব শিক্ষার্থীর ৫০ শতাংশ ভারতের, ১৪ শতাংশ চীনে এবং অন্যদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল ও বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) গত চার মাস ধরে বিদেশী শিক্ষার্থীদের তথ্য এবং তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে আসছে। কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী, এই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে অপরাধমূলক ইতিহাস কিংবা বিক্ষোভে অংশগ্রহণের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন শিক্ষার্থীরাও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন।

২০২৫ সালের মার্চ মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ‘ক্যাচ অ্যান্ড রিভোক’ নামক একটি প্রোগ্রাম চালু করেন। এর মাধ্যমে ভিসাধারী শিক্ষার্থীদের স্ক্রিনিং এবং শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রোগ্রামের আওতায় শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাব কিংবা ফিলিস্তিন ও হামাসের প্রতি সহানুভূতির প্রমাণ খোঁজা হচ্ছে।

মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের আওতাধীন স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেম (সেভিস) এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও বিনিময় প্রোগ্রামের অংশগ্রহণকারীদের নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

আইসিই-এর একটি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই সেভিস সিস্টেমে ৪ হাজার ৭৩৬ জন আন্তর্জাতিক ছাত্রের ভিসাব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই এফ-১ ভিসাধারী।

এআইএলএ এই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলোকে ‘অভূতপূর্ব’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা বলেছে, এর ফলে বেশ কিছু আইনি প্রশ্ন উঠে আসছে, যা ভবিষ্যতে আদালতের বিচারাধীন হতে পারে।

বাতিল হওয়া ৩২৭টি ভিসা মামলার মধ্যে ৫০ শতাংশই ওপিটি প্রোগ্রামের অধীনে যুক্ত ছিলেন। এফ-১ ভিসাধারীরা এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ১২ মাস পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ পান। কিন্তু ভিসা বাতিল হওয়ায় তাদের সেই অধিকারও বাতিল হয়েছে।

এই ভিসা প্রত্যাহারের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, মিশিগান ও অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিবৃতি ও কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের শেষ থেকে মার্কিন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় প্রায় ১ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বা আইনি মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে।

আইনি মর্যাদা হারানো শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ভারত ও চীন থেকে এসেছে। তারা একত্রে মার্কিন কলেজগুলোর অর্ধেকের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এসব বহিষ্কারের ঘটনা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

এদিকে, ভারত সরকারও এই বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, আমরা জানি যে বেশ কয়েকজন ভারতীয় শিক্ষার্থী তাদের এফ-১ ভিসার অবস্থা সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসনের থেকে বার্তা পেয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আমাদের দূতাবাস ও কনস্যুলেট শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করছে।’

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এবং নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে যারা পড়াশোনার পাশাপাশি কর্মজীবনের সুযোগ খুঁজছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে।

সূত্র : এনডিটিভি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top