ইরান, ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, নেতানিয়াহু, পারমাণবিক কর্মসূচি,

মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, ইরানের উপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার পটভূমিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে ট্রাম্প প্রকাশ্যে কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে ইসরাইলের সামরিক হামলার সময় তার বক্তব্যে দৃশ্যমান হয়েছে একধরনের দ্ব্যর্থতা ও পরোক্ষ সমর্থন।

গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প একটি ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা একটি কূটনৈতিক সমাধানের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ এর ঠিক ১৪ ঘণ্টা পর ইসরাইল ইরানে হামলা শুরু করে। তখন ট্রাম্প আরেকটি পোস্টে জানান, তিনি ইরানকে একটি চুক্তির জন্য ৬০ দিনের সময়সীমা দিয়েছিলেন, যেটি ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে।

রোববার পর্যন্ত ট্রাম্প বলছিলেন, ‘ইসরাইল এবং ইরানের একটি চুক্তি করা উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সহায়তায় তা করবে। কিন্তু সোমবার, কানাডায় গ্রুপ অফ সেভেন শীর্ষ সম্মেলন ত্যাগ করার মুহূর্তে তিনি বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না এবং ‘সকলের অবিলম্বে তেহরান ত্যাগ করা উচিত!’

যদিও ট্রাম্প পরবর্তীতে অস্বীকার করে বলেন যে তিনি যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে ফিরে এসেছেন, তার ভাষ্য ছিল অদ্ভুতভাবে অস্পষ্ট, ‘এটি এর চেয়েও বড় কিছুর জন্য।’

এই অস্পষ্টতা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সমিতির কেলসি ডেভেনপোর্ট বলেন, কূটনীতি যখন কার্যকর হচ্ছিল, তখন ট্রাম্প সামরিক শক্তি ব্যবহারের বিরোধিতা করেছিলেন এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর চাপে পিছু হটেন। তার মতে, ইসরাইল হয়তো মনে করেছিল সফল কূটনীতি তাদের স্বার্থে আঘাত হানবে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড নেফিউ বলেন, চুক্তির পথে ট্রাম্পের পদক্ষেপই ইসরাইলকে উদ্বিগ্ন করেছিল। তবে স্কটল্যান্ডের অধ্যাপক আলী আনসারি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র হামলার নির্দিষ্ট সময় না জানলেও হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন ছিল এবং হয়তো অনুমোদনও করেছে।

নাতাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনার উপর ইসরাইলি হামলার মাধ্যমে সাময়িক সফলতা এলেও ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করতে হলে মার্কিন সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে। যেমন ডেভেনপোর্ট উল্লেখ করেন, বিশাল ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ বোমার ব্যবহার ইসরাইলের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এই অস্ত্র ওয়াশিংটন এখনো ইসরাইলকে দেয়নি।

বারবারা স্লাভিনও বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করতে ইসরাইলের মার্কিন অস্ত্রের প্রয়োজন হবে।

ট্রাম্পের অবস্থানও ইঙ্গিতপূর্ণ। ‘তিনি বিজয়ীদের পাশে থাকতে পছন্দ করেন’ বলে মত দিয়েছেন একাধিক বিশ্লেষক। সেই প্রেক্ষিতে, ইসরাইলের প্রাথমিক সাফল্য হয়তো তাকে সরাসরি জড়ানোর জন্য প্রলুব্ধ করছে।

ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তার সামরিক প্রস্তুতি বাড়িয়েছে। মধ্য আকাশে জ্বালানি ভরার বিমান পাঠানো হয়েছে, ইউএসএস নিমিৎজ বিমানবাহী রণতরীকে মোতায়েন করা হয়েছে এবং নতুন যুদ্ধবিমানও পাঠানো হচ্ছে।

তবে ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, সামরিক পথ কেবল উত্তেজনা বাড়াবে। নেফিউ মনে করেন, ২০১৮ সালে ট্রাম্প যখন ইসরাইলের চাপে জেসিপিওএ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন, তখন থেকেই সামরিক উত্তেজনার পথ তৈরি হয়।

২০১৫ সালের জেসিপিওএ ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কূটনৈতিক চুক্তি। কিন্তু সেটি বাতিল হওয়ার পর ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ২০ শতাংশ এবং পরে ৮৩.৭ শতাংশে উন্নীত করে।

নেতানিয়াহুর শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের আহ্বান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। ডেভেনপোর্ট বলেন, শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন কোনো টেকসই সমাধান নয়। এর ফলে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের ঝুঁকি আরো বাড়তে পারে।

সবশেষে বলা যায়, ট্রাম্প প্রকাশ্যে কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে থাকলেও তার ভাষ্য, সময়চিত্র এবং সামরিক প্রস্তুতি মার্কিন সম্পৃক্ততার বাস্তবতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে। আর ইসরাইলের আক্রমণ সফল হলে ট্রাম্পের সরাসরি অংশগ্রহণের সম্ভাবনাও অস্বীকার করা যাচ্ছে না।

সূত্র : আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top