মুফতি যুবায়ের আব্দুল্লাহ
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন মসজিদে প্রায় প্রতি ওয়াক্তেই একটি সাধারণ চিত্র লক্ষ্য করা যায়- নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে এক বা একাধিক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে পড়েন সাহায্যের আবেদন নিয়ে। বিভিন্ন জন নানান প্রয়োজন তুলে ধরে সাহায্যের আবেদন করেন। কিন্তু এদের প্রকৃত অবস্থা যাচাই করার সুযোগ থাকে না। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, তারা পেশাদার ভিক্ষুক, যারা এক মসজিদ থেকে আরেক মসজিদে ঘুরে বেড়ায়।
এদের মধ্যে অনেকে উচ্চস্বরে কথা বলেন, মুসল্লিদের ঘাড় ডিঙিয়ে চলাফেরা করেন, এমনকি মাসবুক মুসল্লিদের নামাজেও বিঘ্ন সৃষ্টি করেন। এতে ইবাদতের পরিবেশ ব্যাহত হয়, মুসল্লিরা নামাযে মনোযোগ হারান।
শরীয়তের দৃষ্টিতে এ বিষয়ের দিকনির্দেশনা কী?
যার কাছে প্রয়োজন পরিমাণ সম্পদ আছে তার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। একান্ত প্রয়োজন বা অনন্যোপায় অবস্থায় ভিক্ষা করা শরীয়তে সীমিত পরিসরে অনুমোদিত। তবে একে অভ্যাসে পরিণত করা ও পেশা বানিয়ে নেয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়। ইসলামে তা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠিন হুশিয়ারি এসেছে।
নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেছেন,
“لا تزال المسألة بأحدكم حتى يلقى الله تعالى وليس في وجهه مزعة لحم”
অর্থ : ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ভিক্ষা করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে যে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে তার মুখে গোশতের কোনো টুকরাও থাকবে না।’ (সহিহ মুসলিম : ১০৪০)
মসজিদে ভিক্ষা করার ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে। একান্ত প্রয়োজনে কেউ মসজিদে সাহায্যের আবেদন করলে সেক্ষেত্রে মসজিদের আদব ও মুসল্লিদের হক রক্ষা চলতে হবে। যেমন নামাজরত মুসল্লিদের সামনে দিয়ে চলাচল করা যাবে না; কাতারে মুসল্লিদের ঘাড় ডিঙিয়ে চলা যাবে না; মুসল্লিদের নামাজ, জিকির ও দোয়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এমন কোন কাজ করা যাবে না; উচ্চস্বরে কান্নাকাটি, আর্তনাদ বা এমন আচরণ করা যাবে না, যাতে মুসল্লিদের একাগ্রতা ও ইবাদতে বিঘ্ন ঘটে। রাদ্দুল মুহতার, ৫/৯১- ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৬/২৩৭
কিন্তু বাস্তবতা হলো, বর্তমানে বিভিন্ন মসজিদে নিয়মিতভাবে কিছু পেশাদার ভিক্ষুক নামাযের পর দাঁড়িয়ে উচ্চ আওয়াজে সাহায্য প্রার্থনা করে থাকে। এদের আচরণে অনেক সময় মুসল্লিদের নামায, তাসবীহ ও দোআয় ব্যাঘাত ঘটে। মাসবুক মুসল্লিরা একাগ্রতার সাথে নামায আদায় করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। বর্তমানে প্রায় মসজিদে পেশাদার ভিক্ষুকদের এ জাতীয় আচরণ প্রতিনিয়ত ঘটছে।
সুতরাং এ প্রেক্ষাপটে করণীয় হলো-
-কোনো ভিক্ষুক নামাজের পর দাঁড়ালে মার্জিতভাবে বসিয়ে দেয়া এবং পরবর্তীতে তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে দেয়া।
-যদি আশঙ্কা থাকে তাৎক্ষণিক বাধা দিলে বিশৃঙ্খলা হতে পারে, তাহলে পরে একাকী অবস্থায় তাকে নসিহত করা।
-মসজিদের ইমাম ও খতিবগণ জুমার খুতবা বা ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে মুসল্লিদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যাতে কেউ পেশাদার ভিক্ষুকদের ভিক্ষ না দেন। সালাফের অনেকেই মসজিদে সাহায্য চাওয়া অপছন্দ করতেন। এবং তাঁদের কেউ কেউ মসজিদে সাহায্যপ্রার্থী লোকদের দান করা পছন্দ করতেন না। (মাআলিমুস সুনান ১/১৪৩)
-যদি কারো প্রকৃত প্রয়োজন থাকে, তাহলে তাকে মসজিদের বাইরের নির্ধারিত স্থানে যেমন সিঁড়ির নিচে, বারান্দায় বা পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের আবেদন করতে পারবে।
মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা, মুসল্লিদের ইবাদতের পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং মসজিদকে পেশাদার ভিক্ষাবৃত্তির কেন্দ্র হয়ে উঠা থেকে রক্ষা করা সকল মুসলমানের দায়িত্ব। শরীয়তের দৃষ্টিতে এমন ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ এবং তা প্রতিরোধে মসজিদ কমিটি এবং সাধারণ মুসল্লিদের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল ও সুপরিকল্পিত অবস্থান গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে গৃহীত