জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী স্বৈরাচারমুক্ত ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন নাগরিক প্লাটফর্মের সমন্বয়ে একটি ‘নাগরিক কোয়ালিশন’ গঠন করা হয়েছে। সেখানে কোয়ালিশন গঠনে বৈষম্যপূর্ণ ও অমানবিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আজ ১১ মে (রোববার) সংগঠনটির কোয়ালিশন সদস্যদের তালিকা ভাইরাল হওয়ার পর গণমাধ্যমে এই অভিযোগ উঠে।
তারা অভিযোগ করেছেন যে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য স্টোকহোল্ডার ইসলামিস্টদের কোনো প্রতিনিধি সেখানে নেয়া হয়নি। অথচ যাদের উল্লেখযোগ্য অবদানই ছিল না, তাদেরকে বেশ ফলাও করে তাতে রাখা হয়েছে। এছাড়া এদেশের অন্তত ৯০ শতাংশ নাগরিক মুসলমান। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন জানতেও দরকার ছিল ইসলামপন্থীদের কোনো প্রতিনিধি। নানা সময় বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তাদের অন্তর্ভুক্তি থাকার পরও যখন ইসলামপন্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়নি, তাই মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অমানবিক উদ্যোগ বলে অভিযোগ জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্ববায়ক আশরাফ মাহদি তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, জুলাই ও পরবর্তী সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে রক্ত দিবে, দাবি আদায় করতে তীব্র তাপদাহে দিনের পর দিন রাজপথে পড়ে থাকবে মাদরাসার ছাত্র আর ইসলামী দলের নেতাকর্মীরা আর নাগরিকদের নিয়ে কোয়ালিশনের সময় তাদের জন্য কোন স্পেস থাকবে না। বিভিন্ন দল থেকে নাগরিক প্লাটফর্মের জন্য সদস্য নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হটাতে অসামান্য অবদান রাখা ইসলামী আন্দোলন, হেফাজত, অন্যান্য ইসলামী দল আর মাদরাসা ছাত্ররা এখনও নাগরিকদের কাতারে আসতে পারলো না। অথচ তারা বিগত আমলে সবচেয়ে বেশি জুলুমের শিকার। তাদের ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থান আর আওয়ামীলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের আন্দোলন কথা ভাবাও যায় নাই। এ বৈষম্যের তীব্র নিন্দা জানাই। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র আর সংস্কারের নামে কি কি হচ্ছে সবই আমরা নজরে রাখছি।
জাতীয় উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল করিম আবরার বলেন, জুলাই ও পরবর্তী সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে রক্ত দিবে, দাবী আদায় করতে তীব্র তাপদাহে দিনের পর দিন রাজপথে পড়ে থাকবে, মাদরাসার ছাত্র আর ইসলামী দলের নেতাকর্মীরা আর নাগরিকদের নিয়ে কোয়ালিশনের সময় তাদের জন্য কোন স্পেস থাকবে না। ইসলামী আন্দোলন, হেফাজত ইসলামীসহ অন্যান্য দলগুলো আর মাদরাসা ছাত্ররা বিগত আমলে সবচেয়ে বেশি জুলুমের শিকার, তাদের ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থান আর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের আন্দোলন কথা ভাবা?
বৈষম্যহীন রাষ্ট্র আর সংস্কারের নামে কি কি হচ্ছে সবই আমরা নজরে রাখছি। যেই আন্দোলনে বিএনপি’র কোন নাম গন্ধ ছিল না আজ তাদের নাম গুলোই বেশি ফোকাস করছে! সত্যি কথা বলতে এনসিপি এককভাবে যদি গত দুদিন আন্দোলন করতো, তাহলে হয়তো ১ থেকে ২ হাজার ছাত্রর বেশী আন্দোলনে লোক খুঁজে পাওয়া যেত না।
তিনি আরো বলেন, আজ ইসলামপন্থী দলগুলো তাদের এই আত্মত্যাগ এই কোরবানি, দরস গাহ মসজিদ ফেলে হাজারো ছাত্র তলাবা শিক্ষা অর্জনকে বাদ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল বিধায় আজ ঠুনকো করে এক বিজয়ী অর্জন করেছে নয়তো আজও সম্ভব হতো না।
উল্লেখ্য, সংগঠনটি দাবি করেছে, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে যাতে একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা যায়, সেই লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি নির্দলীয় নাগরিক সংগঠন সম্মিলিতভাবে এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে। আগামী দিনগুলোতে যেন এই দেশের নাগরিকেরা একটি উন্মুক্ত পরিবেশে গণতন্ত্র চর্চা করার সুযোগ পায়, কোনো ধরণের অগণতান্ত্রিক সংস্কৃতি যাতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও এর নাগরিকদের সম্ভবনা নষ্ট করতে না পারে, আমরা যাতে দ্রুত একটি জবাদিহিমূলক উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারি সেই আকাঙ্খা পূরণে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সাথে নাগরিক সমাজের পরিপূরক ভূমিকা পালন অত্যন্ত জরুরি। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিভিন্ন নাগরিক পাটফর্মের সমন্বয়ে ‘নাগরিক কোয়ালিশন’টি গঠন করা হয়েছে।