মাসকড ইয়োথ মুভমেন্ট

মাসকড ইয়োথ মুভমেন্ট : সৌদি আরবে গণঅভ্যুত্থানের ডাক

সৌদি আরবে সদ্য উদ্ভূত একটি ছদ্মবেশী আন্দোলন দেশটির রাজনৈতিক কাঠামো এবং শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিরল ও স্পষ্ট প্রতিরোধের বার্তা দিচ্ছে। ‘মাসকড ইয়োথ মুভমেন্ট’ (মুখোশধারী যুব আন্দোলন) নামে এই প্লাটফর্মটি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত একাধিক ভিডিওর মাধ্যমে ক্রমেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে মুখোশ ও চোখ ঢাকা কিছু তরুণকে দেখা যাচ্ছে। তাদের কণ্ঠস্বর প্রযুক্তির মাধ্যমে বদলে ফেলা হয়েছে। তারা সরাসরি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচনা করেছেন এবং জীবনযাত্রার মান অবনতির কথা উল্লেখ করেছেন। সেইসাথে রাজ্যের অভ্যন্তরে অস্থিরতা এবং দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে যুবরাজের পতনেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

ভিডিওগুলো মূলত টিকটকের বেনামী অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছে। সেখান থেকে তা একাধিক প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওগুলোতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকারের দাবি এবং মেগা বিনোদন প্রকল্প ও বিলাসবহুল অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় ব্যয় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। যুব সম্প্রদায়ের ভাষ্যে উঠে এসেছে যে এসব খরচের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক সেবা ও অর্থনৈতিক চাহিদাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।

একজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘আজ আমরা আমাদের জাতির মুক্ত তরুণদের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী আন্দোলন প্রত্যক্ষ করছি, যারা সাহসের সাথে বৈধ অধিকারের জন্য তাদের কণ্ঠস্বর উচ্চকিত করছে। এটি আমাদের স্বাধীনতা এবং নিজস্ব ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার।’

আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কেউ কেউ বলেছেন, এই মুখোশধারীরা সেই কণ্ঠস্বরের প্রতিনিধিত্ব করছে, যাদের দীর্ঘদিন ধরে দমন করা হয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘যে দেশে কণ্ঠস্বর নিষিদ্ধ, সেখানে মুখোশধারী ব্যক্তি প্রত্যাখ্যানের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হন… মুখোশধারীর আড়ালে আরেকটি জন্মভূমি রয়েছে যা এখনো অস্তিত্বে আসেনি।’

তবে সব প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক নয়। সমালোচকরা #خونة\_الوطان (বাংলা অনুবাদে ‘#জাতির\_বিশ্বাসঘাতক’) হ্যাশট্যাগ চালু করেছেন। সেখানে এই মুখোশধারীদের বিদেশ থেকে পরিচালিত ভিন্নমতাবলম্বী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তাদের অভিযোগ, এই আন্দোলনের মাধ্যমে সৌদি সমাজকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে।

ভিডিও পোস্টকারীদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হওয়ার পর থেকে বেনামী অ্যাকাউন্ট থেকেও সমালোচনামূলক পোস্টের জন্য গ্রেফতার একটি সাধারণ চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সাইবার অপরাধ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতপ্রকাশকারীদের দীর্ঘ কারাদণ্ড ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে।

‘মাসকড ইয়োথ মুভমেন্ট’ নামের এই প্লাটফর্মটির প্রথম ভিডিও প্রকাশের পর থেকে নতুন নতুন ভিডিও এসে যুক্ত হচ্ছে। এতে সৌদি নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা এবং তথাকথিত সংস্কারমূলক প্রকল্পগুলোর নৈতিক ও অর্থনৈতিক মূল্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। ভিডিওগুলোতে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে যুবরাজ যদি তার নীতি পরিবর্তন না করেন তবে গণ-অভ্যুত্থান ঘটতে পারে।

এক ভিডিও বার্তায় স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, ‘এই বার্তা সরাসরি মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছে- আপনার পতন আপনার জনগণের হাতেই হবে।’

তবে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, তারা এই ভিডিওগুলোর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। তবুও এসব ভিডিও এবং এর প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে স্পষ্ট যে সৌদি আরবের তরুণ সমাজের একাংশ এখন রাষ্ট্রের নীতি ও দিকনির্দেশনার বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠছে। অবশ্য এখনো তা মুখোশ ও প্রযুক্তির আড়াল থেকেই পরিচালিত হয়ে আসছে। এ আন্দোলন একদিকে যেমন সামাজিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। অন্যদিকে এটি বর্তমান সৌদি রাজনীতির দমন-পীড়নের বাস্তব চিত্রও উন্মোচন করছে।

সূত্র : মিডল ইস্ট আই

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top