সাঈদ আহমাদ খান নদভী
এটি ইসলামি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্যতম মৌলিক একটি আলোচনা। মুসলিম রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকদের সঙ্গে ন্যায়, সদ্ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসলামি রাষ্ট্রের দায়িত্ব, যতক্ষণ না তারা ইসলাম, মুসলিম ও রাষ্ট্র বিরোধি কোনো কর্মকাণ্ড না করবে এবং এবং ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ- বিদ্রোহে লিপ্ত না হবে। সেই সাথে রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু বিধর্মীগণ ইসলামি আইনের আওতাধীন হবেন।
নিচে কুরআন, হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম ও ফোকাহায়ে কেরামের বক্তব্যের আলোকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
প্রথমত: কুরআনের নির্দেশনা
১. ন্যায়বিচার ও সহাবস্থান
قال الله تعالى:
﴿لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ أَنْ تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ، إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ﴾ (الممتحنة: ٨)
অর্থ: আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে ও ন্যায়বিচার করতে, যারা তোমাদের ধর্মের ব্যাপারে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়নি। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।
(সুরা মুমতাহিনা: ৮)
এ আয়াত থেকে বুঝা যায়— অমুসলিম নাগরিকদের সঙ্গে ন্যায়, সদ্ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসলামি রাষ্ট্রের দায়িত্ব, যতক্ষণ না তারা ইসলাম, মুসলিম ও রাষ্ট্র বিরোধি কোনো কর্মকাণ্ড না করবে।
২. অঙ্গীকার রক্ষা
قال الله تعالى:
﴿وَإِنْ أَحَدٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّىٰ يَسْمَعَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ أَبْلِغْهُ مَأْمَنَهُ﴾ (التوبة: ٦)
অর্থ: যদি কোনো মুশরিক তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তবে তুমি তাকে আশ্রয় দাও— যতক্ষণ না সে আল্লাহর বাণী শুনে। এরপর তাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দাও।
(সুরা তাওবা: ৬)
ইসলাম শত্রুকেও জীবনের নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের অধিকার দেয়; যখন সে নিজের ভুল থেকে ফিরে আসে, কিংবা আশ্রয় কামনা করে।
এমনিভাবে যে সব সংখ্যালঘুরা মুসলিম রাষ্ট্রে আগে থেকেই বসবাস করে, কিংবা নিরাপত্তা (ভিসা) নিয়ে প্রবেশ করে, ইসলাম তাদের নিরাপত্তার বিষয়েও সজাগ দৃষ্টি রাখে।
৩. বিনয়াবনত জিজিয়া প্রদান
জিজিয়া সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ
(التوبة: الآية ٢٩)
অর্থ:“তোমরা যুদ্ধ করো তাদের সঙ্গে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না, এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. যা হারাম করেছেন তা হারাম বলে মনে করে না, এবং সত্য ধর্ম গ্রহণ করে না — তাদের মধ্যে যারা কিতাবপ্রাপ্ত — যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে জিজিয়া প্রদান করে এবং তারা বিনয়াবনত (অধীনস্থ) থাকে।”
(সুরা তাওবা: আয়াত ২৯)
এই আয়াতটি সুরা তাওবার একটি বিখ্যাত আয়াত, যা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে অমুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্ক ও জিজিয়া প্রদানের বিধান সম্পর্কে আলোচনা করে। নিচে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
আয়াতের প্রেক্ষাপট (سبب النزول):
এই আয়াতটি নাজিল হয় হিজরি ৯ সালে, যখন রাসুলুল্লাহ ﷺ রোমান (বাইজেন্টাইন) খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে তাবুক অভিযানে রওনা হন।
এ সময় কিতাবধারীদের (ইহুদি ও খ্রিষ্টান) সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয় —
যারা ইসলামি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিতে চায় কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করে না, তারা জিজিয়া প্রদান করবে, এর বিনিময়ে তাদের জীবন ও সম্পদ নিরাপদ থাকবে।
জিজিয়া (الجزية) কী:
“জিজিয়া” অর্থ: এক ধরনের রাষ্ট্রীয় কর, যা অমুসলিম নাগরিকরা ইসলামি রাষ্ট্রে নিরাপদভাবে বসবাসের অধিকার দেওয়ার বিনিময়ে প্রদান করা হয়।
এটি যুদ্ধের বিনিময় নয়, বরং নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রতীক।
মুসলমানদের উপর যেমন যাকাত বাধ্যতামূলক, তেমনি অমুসলিম নাগরিকদের উপর জিজিয়া।
এখানে “وَهُمْ صَاغِرُونَ” এর ব্যাখ্যা জানা দরকার:
তো “وهم صاغرون” -এর অর্থ:
“তারা বিনয়াবনত থাকবে, অর্থাৎ ইসলামি রাষ্ট্রের আইনের অধীনে থাকবে।”
তাফসির ইবনে কাছির রহ. বলেন:
يقول تعالى أمره بقتال أهل الكتاب، حتى يُسلموا أو يُعطوا الجزية عن يدٍ وهم صاغرون.
أي عن قهرٍ وغلبةٍ، وهم أذلاء مهانون.
ولهذا لا يجوز إعزازُ أهل الذمة ولا رفعُهم على المسلمين، بل هم أذلاء تحت حكم الإسلام.
— تفسير ابن كثير (ج ٤، ص ٣٥٠)
অর্থ: আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিচ্ছেন— আহলে কিতাবদের সঙ্গে যুদ্ধ করো, যতক্ষণ না তারা ইসলাম গ্রহণ করে বা নিজেদের হাতে জিজিয়া প্রদান করে এবং তারা বিনয়াবনত থাকে।
অর্থাৎ, জিজিয়া প্রদান করবে পরাজিত ও বিনয়াবনত অবস্থায়।
তাদের মর্যাদা মুসলমানদের চেয়ে উচ্চ করা যাবে না; বরং তারা ইসলামি আইনের অধীনে বিনয়াবনত অবস্থায় থাকবে।
(তাফসিরে ইবনে কাছির: ৪/ ৩৫০)
ইমাম তাবারি রহ. বলেন:
وقوله: “وهم صاغرون” يعني: وهم أذلاء مقهورون، يُجْرَى عليهم حكمُ الإسلام، فيؤدّون الجزية وهم صاغرون لحكمه.
وقال: الصَّغَارُ هو التذلُّل والخضوع لأحكام الإسلام.
— تفسير الطبري (ج ١٠، ص ١٦٨)
আল্লাহর কথা ‘وهم صاغرون’ -এর অর্থ হলো— তারা হবে বিনয়াবনত, পরাজিত, এবং ইসলামি শাসনের অধীনে থাকবে।
তারা জিজিয়া প্রদান করবে ইসলামের বিধানের অধীনতা প্রকাশ করে।
আর ‘صغار’ শব্দের অর্থ হলো, ইসলামি বিধানের প্রতি আনুগত্য ও বিনয় প্রকাশ করা।
(তাবারি: ১০/ ১৬৮)
কুরতুবি রহ. বলেন:
قوله تعالى: “حتى يعطوا الجزية عن يدٍ وهم صاغرون”
أي يعطوها عن قهرٍ، واليد هنا بمعنى القدرة، أي عن قدرةٍ وغلبةٍ من المسلمين، وهم صاغرون أي أذلاء خاضعون لحكم الإسلام.
وقيل: الصغار أن تُؤخذ منهم على رؤوسهم وهم قيام والمسلم جالس، تأديباً لهم.
— الجامع لأحكام القرآن للقرطبي (ج ٨، ص ١١٨)
অর্থ:“যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে জিজিয়া প্রদান করে এবং তারা বিনয়াবনত থাকে”— অর্থাৎ, তারা জিজিয়া দেবে মুসলমানদের শক্তি ও কর্তৃত্বের অধীনে।
‘হাত’ শব্দটি এখানে শক্তি ও কর্তৃত্বের প্রতীক।
আর ‘صاغرون’ মানে বিনয় ও অধীনতা।
কতিপয় আলেম বলেছেন, জিজিয়া গ্রহণের সময় মুসলিম পক্ষ বসে থাকবে আর তারা দাঁড়িয়ে থাকবে — এটি একটি আনুষ্ঠানিক বিনয় প্রকাশের পদ্ধতি।
(আহকামুল কুরআন, কুরতুবি: ৮/ ১১৮)
দ্বিতীয়ত: হাদিসের নির্দেশনা
১. জিম্মিদের প্রতি দয়া ও ন্যায়বিচার
قال النبي ﷺ:
مَن قتل معاهَدًا لم يرح رائحة الجنة.
(رواه البخاري، رقم: ٣١٦٦)
অর্থ: যে ব্যক্তি কোনো চুক্তিবদ্ধ (অমুসলিম) নাগরিককে হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না।
(বুখারি, হাদিস: ৩১৬৬)
এখানে“معاهد” বলতে মুসলিম রাষ্ট্রে চুক্তির ভিত্তিতে বসবাসকারী জিম্মি বা সংখ্যালঘু নাগরিককে বোঝানো হয়েছে।
২. সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি সতর্কতা
قال النبي ﷺ:
من آذى ذمِّيًا فقد آذاني، ومن آذاني فقد آذى الله
(رواه الطبراني في الأوسط، رقم: ٦٧٨٧)
অর্থ: যে ব্যক্তি কোনো জিম্মিকে কষ্ট দেয়, সে আমাকে কষ্ট দিল; আর যে আমাকে কষ্ট দেয়, সে আল্লাহকে কষ্ট দিল।
(তবারানি, হাদিস: ৬৭৮৭)
এসব হাদিস থেকে বুঝে আছে, জিম্মিদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা ইসলামী নৈতিকতার লঙ্ঘন।
তৃতীয়ত: সংখ্যালঘুদের অধিকার সম্পর্কে সাহাবাদের বক্তব্য
১. উমর ইবনুল খাত্তাব রা. জিম্মিদের জন্য “আমাননামা (عهد الأمان)” প্রদান করেছিলেন, যাতে বলা হয়েছে:
“তাদের প্রাণ, সম্পদ, ধর্ম, গির্জা ও উপাসনালয় নিরাপদ থাকবে।”
(কিতাবুল খারাজ, ইমাম আবু ইউসুফ: ১২৫)
খলিফা ওমর রা. মুসলিম সেনাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন:
“তোমরা জিম্মিদের ওপর অন্যায় করো না। তাদের থেকে শুধুমাত্র শরিয়তসম্মত খরাজ নাও, এবং তাদের রক্ষা করো।”
(আল আমওয়াল, ইবনে যানজওয়েহ: ২/ ৫৮৬)
খলিফা ওমর রা.-এর এই আদেশ ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকদের জীবন, সম্পদ ও ধর্মীয় স্বাধীনতার দৃষ্টান্ত।
২. খলিফা আলি রা. থেকে বর্ণনা করা হয়:
إنما بذلوا الجزية لتكون دماؤهم كدمائنا وأموالهم كأموالنا.
(نهج البلاغة، الخطبة: ٥٣)
অর্থ: তারা জিজিয়া প্রদান করেছে এই উদ্দেশ্যে— যেন তাদের রক্ত আমাদের রক্তের সমান মর্যাদাসম্পন্ন হয়, এবং তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মতোই সুরক্ষিত হয়।
(নাহজুল বালাগাহ: খুৎবা: ৫৩)
অর্থাৎ জিজিয়া কোনো অপমান নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা বিনিময়ে চুক্তির প্রতীক।
চতুর্থত: ফোকাহায়ে কেরামের মতামত
১. ইমাম আবু ইউসুফ রহ. বলেন:
“জিম্মিরা আমাদের জিম্মায় থাকলে, তাদের প্রতি অন্যায় বা অত্যাচার করা হারাম।”
(কিতাবুল খারাজ, আবু ইউসুফ: ১২৫)
২. ইমাম মালিক রহ. বলেন:
“যে ব্যক্তি জিম্মির উপর অন্যায় করবে, তার সাথে চুক্তি ভঙ্গ করবে, কিংবা তার থেকে জোরপূর্বক কিছু আদায় করবে— সে আল্লাহর কাছে দায়ী।”
(আর মুদাওয়্যানাতুল কুবরা: ২/ ২৪৬)
৩. ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন,
أهل الذمة لهم ما للمسلمين، وعليهم ما على المسلمين، إلا ما استثناه الدليل.
(الأم، ج٤، ص: ٢١٣)
অর্থ: জিম্মিদের অধিকার মুসলমানদের অধিকার সমান, তাদের উপরও রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা সমানহারে। তবে, শরিয়ত যা ইস্তেছনা করেছে।
(আল উম্ম লিল ইমাম আশ শাফেয়ি: ৪/ ২১৩)
ইমাম শাফেয়ি রহ. আরো বলেন:
“অমুসলিমরা ইসলামি রাষ্ট্রে বসবাস করবে ‘আহলুয্ যিম্মাহ’ বা যিম্মি হিসেবে। তারা তাদের ধর্মে স্বাধীন থাকবে, তবে ইসলামি রাষ্ট্রের আইন লঙ্ঘন করতে পারবে না।”
(আল উম্ম লিল ইমাম আশ শাফেয়ি: ৪/ ২১৩)
৪. ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন,
الإسلام أمر بالعدل والإحسان مع الكافر المسالم، ونهى عن ظلمه وبخسه حقه.
(أحكام أهل الذمة، ج ١، ص: ٢٣)
অর্থ: ইসলাম শান্তিপ্রিয় অমুসলিমদের সঙ্গে ন্যায় ও সদ্ব্যবহার করতে আদেশ দিয়েছে, এবং তাদের প্রতি অন্যায় নিষিদ্ধ করেছে।
(আহকামু আহলিয যিম্মাহ: ১/ ২৩)
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহ. আরো বলেন:
“রাসুল ﷺ জিম্মিদের প্রতি ন্যায়বিচার ও সুরক্ষা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন, এবং তাদের সাথে সদ্ব্যবহারকে ঈমানের অংশ বলেছেন।”
(আহকামু আহলিয যিম্মাহ: ১/ ২৭)
পঞ্চমত: ফিকহের দৃষ্টিকোণ থেকে যিম্মিদের বাস্তব অধিকারসমূহ
ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী অমুসলিম নাগরিকদের অধিকারগুলো নিম্নরূপ:
১. জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা।
২. ধর্মীয় স্বাধীনতা ও চুক্তির ভিত্তিতে উপাসনালয় সংরক্ষণ।
৩. ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা।
৪. চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা।
৫. সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণের অধিকার।
৬. সামরিক সুরক্ষা – তারা রাষ্ট্রের কর (جِزْيَة) প্রদান করবে, বিনিময়ে রাষ্ট্র তাদের সুরক্ষা দিবে।
৭. অন্যায়- অপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে তারা ইসলামি আইনের অধীনে থাকবে।
লাহুম মা লানা-এর ব্যাখ্যা:
ফোকাহায়ে কেরামের একটি প্রসিদ্ধ বক্তব্য রয়েছে,
«لهم ما لنا وعليهم ما علينا»
অর্থ:“তাদের জন্য আমাদের মতোই অধিকার রয়েছে, এবং তাদের উপর আমাদের মতোই দায়িত্ব রয়েছে।”
কথাটির উৎস ও প্রেক্ষাপট:
১️. এটি সরাসরি কোনো সহিহ হাদিস নয়, কিন্তু এর অর্থ ও মর্ম পাওয়া যায় ইসলামি ফিকহ ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায়। বিশেষকরে যখন রাসুলুল্লাহ ﷺ মুসলমান ও অমুসলিমদের মধ্যে “সনাদুল মাদিনা (دستور المدينة)” বা “মদীনা সনদ” প্রণয়ন করেন, সেখানে অনুরূপ বাক্য এসেছে:
‘وَإِنَّ الْيَهُودَ الَّذِينَ يُتْبِعُونَنَا لَهُمْ النَّصْرُ وَالأُسْوَةُ، غَيْرُ مَظْلُومِينَ وَلا مُتَنَاصَرٍ عَلَيْهِمْ’
— (السيرة النبوية لابن هشام: ج٢، ص١٤٧)
অর্থ:“যে ইহুদিরা আমাদের অনুসরণ করবে, তাদের জন্য সাহায্য ও সমতা রয়েছে; তারা যেন অবিচারের শিকার না হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে কেউ একত্রিত না হয়।”
এটি “لهم ما لنا وعليهم ما علينا” এর মর্মার্থ বহন করে।
২️. ফিকহবিদগণ (যেমন: ইমাম মালিক, শাফেয়ি, ইবনু কুদামা, ইবনু তাইমিয়া, প্রভৃতিগণ) ইসলামি রাষ্ট্রে আহলে জিম্মা ও মুসলমানদের অধিকারে সমতা বোঝাতে এই বাক্যটি ব্যবহার করেছেন।
যেমন ইবনু তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন:
‘إن أهل الذمة لهم ما لنا وعليهم ما علينا، إلا ما استثناه الشرع’.
— الفتاوى الكبرى (ج٢، ص٣٧٤)
অর্থ:“আহলে যিম্মাদের জন্য আমাদের মতোই অধিকার রয়েছে এবং তাদের উপরও আমাদের মতোই দায়িত্ব রয়েছে — তবে শরিয়তে যে বিষয়গুলো ব্যতিক্রম করা হয়েছে, সেগুলো ছাড়া।”
(ফোতওয়া কুবরা: ২/ ৩৭৪)
মোটকথা, ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে মুসলিম রাষ্ট্রে অমুসলিম সংখ্যালঘুরা “أهل الذمة” (জিম্মি) বা “معاهد” (চুক্তিবদ্ধ নাগরিক) হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের পূর্ণ অধিকার রাখে।
তাদের জীবন, সম্পদ, ধর্ম, মর্যাদা— সব কিছুই মুসলিম রাষ্ট্রের আমানত।
যেমন ইমাম কুরতুবি বলেন:
“জিম্মিদের প্রতি অন্যায় করা, তাদেরকে অপমান করা বা কষ্ট দেওয়া— ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে; বরং তাদের অধিকার রক্ষা করা ফরজ।”
(আল জামে’ লি আহকামিল কুরআন: ৮/ ১২২)
লেখক : গবেষক আলেম




