রেনিসা

মৈত্রী যাত্রাকে প্রত্যাখ্যান সচেতন নারী সমাজের প্ল্যাটফর্ম রেনিসা

আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য মৈত্রী যাত্রাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন নারীদের অধিকার বিষয়ে সচেতন প্ল্যাটফর্ম রেনিসা। তারা নিজেদের ফেসবুক পেইজের এক পোস্টে এই ঘোষণা দেয়।

ফেসবুক পোস্টে রেনিসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রেনিসা প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে আমরা, মুসলিম মেয়েরা, “নারীর ডাকে মৈত্রীর যাত্রা” শীর্ষক ধর্ম, পরিবার ও সমাজবিরোধী এই আহ্বানকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে মেয়েদের মর্যাদা, সামাজিক ভারসাম্য এবং পারিবারিক বন্ধনের পক্ষে অবস্থান করছি।

তারা উল্লেখ করেছে, নারী সংস্কার কমিশন প্রতিবেদনটি এক কথায় অবাস্তব, অযৌক্তিক এবং ইসলামবিরোধী। বলতে কুণ্ঠা নেই যে, সেকুল্যার নারীবাদীরা খুব ভালো করেই লেগে পড়েছে পশ্চিমা সংস্কৃতি কে ধারন করার জন্য এবং ইসলামি শারীয়াহ যতটুকু আছে তা মুছে ফেলার জন্য। ইসলাম মেয়েদের মর্যাদা রক্ষা করে—তাকে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহযাত্রী হিসেবে দেখে।

বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে রেনিসার পেইজে জানানো হয়েছে,

১. নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবসমূহ বনাম ধর্ম ও সমাজ:
এই কমিশনের কিছু প্রস্তাব (যেমন: উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান ভাগ, পতিতাবৃত্তিকে স্বীকৃতি, বৈবাহিক ধর্ষণ আইন) আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, পারিবারিক বন্ধন এবং সামাজিক নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এসব বাস্তবায়িত হলে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে, ধর্মীয় ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং পরিবারব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।

২. উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান ভাগ – ন্যায্য নাকি পক্ষপাতমূলক দাবি?
ইসলামে মহিলারা সম্পত্তি পায়, কিন্তু তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেই। অন্যদিকে, পুরুষদের অর্থ উপার্জন ও পরিবারের খরচ বহনের দায়িত্ব রয়েছে। ফলে দায়িত্ববিহীন অধিকার দাবি করা ন্যায়বিচার নয়; বরং এটি এক ধরনের অবিচার। সমান ভাগ সবসময় ন্যায়বিচার নয়। ইসলামে মহিলা ও পুরুষের দায়িত্ব ভিন্ন হওয়ায় উত্তরাধিকারেও ভিন্নতা রয়েছে।

৩. যৌনকর্মীদের স্বীকৃতি – মর্যাদা নয়, সমাজ ধ্বংসের রাস্তায় পা ফেলা:
পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মানেই দেহব্যবসাকে বৈধতা দেওয়া, যা ধর্মীয়ভাবে হারাম এবং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ। এটি মেয়েদের মানুষ নয়, ভোগ্যপণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে—যা তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে। পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়া মেয়েদের সম্মানহানির শামিল।

৪. বৈবাহিক ধর্ষণ আইন – পারিবারিক সম্পর্ককে অপরাধে পরিণত করার আশঙ্কা:
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভালোবাসা, দায়িত্ব এবং বোঝাপড়ার ভিত্তিতে গঠিত। এই সম্পর্কের মধ্যে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ এনে ‘ধর্ষণ’ তকমা দিলে পারিবারিক শান্তি ভেঙে পড়বে এবং স্বামী-স্ত্রীর মাঝে অবিশ্বাস সৃষ্টি হবে। সমস্যা থাকলে ইসলাম বিচারের সুযোগ দেয়, তবে সম্পর্ককে ‘ধর্ষণ’ শব্দ দিয়ে বিকৃত করে না।

৫. মেয়েদেরকে শুধু ‘স্বাধীন ভোক্তা’ হিসেবে তুলে ধরা – বিভ্রান্তিকর নারীবাদ:
এই সংস্কারে মেয়েদের প্রকৃত পরিচয়—মা, স্ত্রী, কন্যা—কে গৌণ করে, তাকে কেবল আত্মকেন্দ্রিক একজন ‘স্বাধীন ভোক্তা’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা—এসব বাস্তব সমস্যা উপেক্ষিত।

৬. লিঙ্গ বৈচিত্র্যর সমতার নামে সমকামিকে প্রতিষ্ঠিত করার কুচক্রান্ত:
আজকের বিশ্বে ‘লিঙ্গ বৈচিত্র্য’, ‘সমতা’ এবং ‘অধিকার’ শব্দগুলোকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, যেন প্রতিটি বিকৃতি বা প্রথাবিরোধী আচরণও স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য। এই ‘স্বীকৃতি’র পিছনে আছে এক সুপরিকল্পিত সাংস্কৃতিক আগ্রাসন-যার মূল উদ্দেশ্য পরিবার, ধর্ম এবং নৈতিকতা নামক মানবসভ্যতার মূলভিত্তিগুলোকে ধ্বংস করা। একজন মুসলিম নারী হিসেবে, আমরা এই ‘লিঙ্গ বৈচিত্র্যের নামে সমকামিতার স্বীকৃতি’কে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top