শায়খ ইবনুল কালাম
ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ হলো মৌখিক স্বীকৃতি। মুমিন হতে হলে এই মৌখিক স্বীকৃতি আবশ্যক। মনে মনে যেমন আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ ও রাসূল সা. এর রিসালাত স্বীকার করতে হবে। মৌখিকভাবেও তার স্বীকৃতি দিতে হবে। এমনিভাবে তাওহিদ ও রিসালাতের যে দাবিগুলো রয়েছে, সেগুলোও কাজে-কর্মে প্রকাশ করতে হবে। তবেই প্রকৃতি ঈমানদার হওয়া যাবে।
ঈমানে মৌখিক স্বীকৃতির প্রাসঙ্গিকতা এক হাদিসে বিবৃত হয়েছে। একবার রাবিয়া গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল ইসলাম গ্রহণ করেন। তাদেরকে নবীজি সা. জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জানো ঈমান কি? তখন তারা উত্তর দিলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। এরপর রাসূল সা. নিজেই বলে দিলেন যে ঈমান হলো এই সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। মোহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসূল। আর সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, রমজানের রোজা রাখা ও গণীমতের এক পঞ্চমাংশ প্রদান করা। সহিহ বুখারী, হাদিস : ৫৩
এই হাদিসে ঈমানের পরিচয়ে রাসূল সা. সাক্ষাদানের প্রসঙ্গটি তুলে এনেছেন। এর থেকে বুঝা যায়, ঈমানের জন্য মৌখিক স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া কুরআন শরীফে সাক্ষাদানের বিষয়টি মুমিনের বিশেষ সিফাত হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,
شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থ : আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং এ বিষয়ের সাক্ষ্য দেন এবং ফেরেশতাগণ ও জ্ঞানীগণও যে নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। যিনি ইনসাফের সাথে (বিশ্ব জগতের) নিয়ম-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়। তার ক্ষমতা পরিপূর্ণ এবং হিকমতও পরিপূর্ণ। সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮
এখানে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারের বিশেষ সিফাত হিসেবে সাক্ষ্যদানের বিশেষটি উল্লেখ করেছেন। মোটকথা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বুঝা যায় যে ঈমানের জন্য মৌখিক স্বীকৃতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন। তবে কখনো যদি নিজের বা পরিবারের কারো প্রাণের আশঙ্কা তৈরি হয় অথবা অঙ্গহানি করে দেয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে মৌখিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান থেকে বিরত থাকা যাবে। তবে শর্ত হলো, তখনো মন ঈমানে অবিচল থাকতে হবে। কেউ যদি স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে কুফরি কথাবার্তা বলে, তাহলে তার উপর আল্লাহ তায়ালার গজব নাজিল হবে। এই বিষয়টি কুরআন শরীফে সূরা নাহলের ১০৬ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।