গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
শনিবার তেল আবিবে হাজার হাজার ইসরাইলি গাজায় যুদ্ধের অবসান ও বন্দীমুক্তি চুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই
নেতানিয়াহু শনিবার ফের ঘোষণা দিয়েছেন যে হামাসকে ধ্বংস করা, বন্দীদের মুক্তি এবং গাজাকে ইসরাইলের জন্য হুমকিমুক্ত না করা পর্যন্ত এই যুদ্ধ থামবে না। সেজন্য ইসরাইলের কাছে গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
এই অবস্থানে তিনি আরো একটি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেয়া হবে না।
তবে প্রধানমন্ত্রী এখন অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে রয়েছেন। কেবল বন্দীদের পরিবার বা সমর্থকরাই নয়, বরং রিজার্ভিস্ট ও অবসরপ্রাপ্ত সেনারাও প্রশ্ন তুলছেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া নিয়ে। নেতানিয়াহু বলেন, হামাস ইসরাইলের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, যেখানে অর্ধেক বন্দীকে মুক্তির প্রস্তাব ছিল।
এর আগের ৪৮ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ৯০ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরে মুওয়াসি এলাকার একটি শরণার্থী শিবিরে হামলায় নিহত হন অন্তত ১১ জন। সেখানে যুদ্ধবিধ্বস্ত বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ইসরাইল নিজেই এলাকাটিকে ‘মানবিক অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
ফিলিস্তিনিদের পক্ষে জিহাদ করা এখন পুরো মুসলিম উম্মাহের উপর ফরজ : মুফতি তাকি উসমানী
ইউরোপীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাফা শহরেও এক মা ও তার মেয়ে ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসাইরাতে একটি বেসামরিক দলের উপর হামলায় আরো একজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল-আওদা হাসপাতাল।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সপ্তাহান্তে তারা ৪০ জনের বেশি হামাস সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পৃথকভাবে জানানো হয়েছে, উত্তর গাজায় হামাসের অতর্কিত হামলায় ইসরাইলের এক সেনা নিহত হয়েছে। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধ পুনরায় শুরুর পর এই প্রথম কোনো সেনার মৃত্যু।
ইসরাইল এখন গাজাজুড়ে মানবিক অঞ্চল দখলের জন্য আক্রমণ তীব্র করার ঘোষণা দিয়েছে। হামাস বলছে, ইসরাইলি বাহিনীকে পুরো অঞ্চল ছেড়ে যেতে হবে।
গাজার অন্তত ৬ লাখ ২ হাজার শিশু ‘স্থায়ী পক্ষাঘাতের’ ঝুঁকিতে : মন্ত্রণালয়
এদিকে, ছয় সপ্তাহ ধরে চলা অবরোধে গাজায় খাদ্য ও ওষুধের প্রবেশ নিষিদ্ধ। জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুযায়ী, হাজার হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। অধিকাংশ মানুষ দিনে মাত্র একবেলা খাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মধ্যপ্রাচ্য অফিসের প্রধান ড. হানান বালখি আহ্বান জানিয়েছেন, নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবিকে অবরোধ প্রত্যাহারে ইসরাইলের ওপর চাপ দিতে। তিনি বলেন, আমি চাই তিনি যেন ভেতরে গিয়ে পরিস্থিতি সরাসরি দেখেন।
ফিলিস্তিনিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা পুরো উম্মাহর উপর ফরজ : বানুরি টাউন
প্রসঙ্গত, গাজা যুদ্ধ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হয়। এতে প্রায় ১,২০০ জন ইসরাইলি নিহত হয় এবং ২৫১ জন বন্দী হয়। বর্তমানে হামাসের কাছে ৫৯ জন বন্দী রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরাইলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত, অনেকেই বসবাস করছে তাঁবুতে কিংবা ধ্বংসস্তূপে।
ইসরাইলে প্রতি সপ্তাহেই বড় বড় বিক্ষোভ চলছে। জনগণ সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে, বন্দীদের ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে একটি চুক্তি করতে হবে। এর জন্য যদি যুদ্ধও বন্ধ করতে হয়, সেটিই যেন করা হয়।
সূত্র : এপি
ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অস্ত্র ধরা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ : ওয়ার্ল্ড ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্স