রবিউল আওয়াল : কোন আমল করব, কোন আমল করব না

শায়খ আবু তাসনিম

রবিউল আওয়াল একটি বরকতময় মাস। এ মাসে আল্লাহর রাসূল সা. পৃথিবীতে আগমন করেছেন। তাই রাসূল সা. এর ভালোবাসায় উজ্জীবিত হয়ে এ মাসে বিশেষ আমল করা যায়। রাসূল সা. এর প্রতি ভালোবাসার দাবি, তার আনীত দ্বীন যথাযথভাবে মান্য করা। নিজের জীবনে তার বাস্তবায়ন করা। এমনিভাবে যেসব তাঁর আনীত দ্বীনের অন্তর্গত নয়, তা থেকে বিরত থাকা। সমাজকেও তা থেকে পবিত্র করা। সেজন্য মুমিনমাত্রই জানা থাকা উচিৎ যে কোন আমল রাসূল সা. এর প্রতি ভালোবাসার দলীল। আর কোন আমল রাসূল সা. এর প্রতি ভালোবাসার নামে ভণ্ডামির প্রমাণ।

এ বিষয়ে আল্লাহর রাসূল সা. নিজেই দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এক হাদিসে এসেছে, আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, যে আমাদের দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন নতুন আমলের উদ্ভব করলো, তার ওই আমল পরিত্যাজ্য। (মুসলিম)। এখন কোন আমল দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত আর কোন আমল দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তার জন্য রাসূল সা. মানদণ্ড দিয়েছেন। বিভিন্ন হাদিসে সে দিকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এক হাদিসে রাসূল সা. বলেন, আমি তোমাদের মাঝে দুটি বিষয় রেখে গেলাম। তোমরা যতদিন এই দুটি বিষয় আকড়ে ধরে রাখবে, ততদিন তোমরা গোমরাহ হবে না। একটি হলো, কিতাবুল্লাহ অপরটি হলো সুন্নাতে রাসূল।

অপর হাদিসে নবীজি সা. বলেন, তোমাদের জন্য আবশ্যক হলো আমার সুন্নত এবং খুলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নত আঁকড়ে ধরা। এবং তা খুব শক্তভাবে মাঢ়ির দাঁত দিয়ে আকড়ে ধরো। নব্য আবিস্কৃত আমল থেকে তোমরা সতর্ক থাকো। শোনো, প্রত্যেক নব্য আবিস্কৃত আমলই বিদআত।

এক হাদিসে নবীজি সা. বলেন, আমার সাহাবীরা হলো আকাশের তারার মতো। তাদের যাকে তোমরা অনুসরণ করবে, তার মাধ্যমেই তোমরা সঠিক পথের দিশা পাবে।

ভিন্ন এক হাদিসে রাসূল সা. বলেন, (আমল অনুসরণের ক্ষেত্রে) সর্বোত্তম মানুষ হলো আমার সময়ের মানুষ (সাহাবায়ে কেরাম)। এরপর যারা তাদেরকে দেখবে, তারা সর্বোত্তম বিবেচিত হবে। এরপর তাদেরকে যারা দেখবে, তারা সর্বোত্তম বিবেচিত হবে।

এই চারটি হাদিসে চার ধরনের মানদণ্ড উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো, কুরআন ও সুন্নাহ, সুন্নাতে খুলাফা ও সুন্নতে সাহাবা এবং তাবেয়ীন ও তাবয়ে তাবেয়ীনের আমল। এই চার মানদণ্ডে যে আমল উত্তীর্ণ হবে, সেই আমলের রঙে জীবনকে রাঙানো যাবে। কিন্তু যে আমল এই চার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হবে না, ওই আমলে জীবন রাঙানো যাবে না।

সুতরাং এই চার জায়গায় যেই আমলের উপস্থিতি রয়েছে কিংবা তার অনুরূপ আমলের সন্ধান পাওয়া যায়, ওই আমলটি করা যাবে। কিন্তু যেই আমলের উপস্থিতি কিংবা তার অনুরূপের সন্ধান এই চার স্থানে পাওয়া যাবে না, ওই আমল করা যাবে না।

রবিউল আওয়াল মাসে তাই রাসূল সা. এর প্রতি মোহাব্বাত প্রকাশ করতে গিয়ে কেবল এমন আমলই করা যাবে উপস্থিতি কিংবা তার অনুরূপের সন্ধান এই চার স্থানে পাওয়া যাবে। সে হিসেবে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা যাবে না। কারণ, এই চার স্থানে এর উল্লেখ নেই। এমনিভাবে মিলাদ-কিয়াম করা যাবে না।

এক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত নানা আমল করা যেতে পারে। যেমন এক হাদিসে নবীজি সা. বলেছেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমলনামা আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয়। সুতরাং রোজা অবস্থায় আমার আমলনামা উপস্থাপন করা হোক, এটা আমি পছন্দ করি।’ তিরমিজী: ৭৪৭

এছাড়াও প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিজের তিনটি রোজা রাখার কথা এসেছে হাদিসে। এর প্রতি যত্নশীল হওয়া যেতে পারে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন, সারা বছর ধরে সিয়াম পালনের সমান।’ সহিহ বুখারী, ১১৫৯, ১৯৭৫

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যথাযথভাবে আমল করার তাওফিক দান করেন। আমিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top