রাখাইন মানবিক করিডর

রাখাইন মানবিক করিডর : তীব্র প্রতিক্রিয়ায় নতুন ব্যাখ্যা সরকারের

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে রাখাইনে মানবিক করিডর নিয়ে সাম্প্রতিক নীতিগত সম্মতি ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং হেফাজতে ইসলামসহ একাধিক দল প্রশ্ন তুলেছে, কী ভিত্তিতে এবং কোন প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

রাখাইন মানবিক করিডর : কোন দল কী বলছে

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, সরকারের উচিত ছিল রাখাইন মানবিক করিডর ইস্যুতে দেশের সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলতে পারে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, মানবিক সহায়তার বিরোধিতা না করলেও তা হওয়া উচিত জনগণের সর্বসম্মতিতে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সামাজিক মাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, রাখাইন করিডর নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার নয় এবং এতে নিরাপত্তা ইস্যু জড়িত থাকতে পারে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা একে অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে বলে মত দিয়েছেন। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেছেন, এই করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারে, যা দেশপ্রেমিকদের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।

রাখাইন মানবিক করিডর : তীব্র প্রতিক্রিয়ায় নতুন ব্যাখ্যা সরকারের

প্রথমদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, রাখাইনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে একটি হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজ বা করিডরের বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে, কিছু শর্ত সাপেক্ষে। তবে পরবর্তীতে সরকারের অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন আসে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, সরকার জাতিসংঘ কিংবা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে ‘করিডর’ ইস্যুতে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেনি। যদি জাতিসংঘ রাখাইনে সহায়তা পাঠাতে চায়, তাহলে বাংলাদেশ কেবল নিজেদের ভূখণ্ডে লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে রাজি।

প্রেস সচিবের ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ মিয়ানমারের সীমানায় প্রবেশ করবে না এবং যতটুকু সহায়তা দেওয়া হবে, তা হবে কেবল বাংলাদেশের ভেতর থেকেই। এছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সরকার আলোচনার ডাক দিলে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন, তবে আগে জানতে হবে করিডর দিতে হলে কী শর্তে ও কী লাভে তা হচ্ছে।

এই রাখাইন মানবিক করিডর নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত গত বছরের ডিসেম্বরে এক সেমিনারে, যেখানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের ধারণা দেন। এরপর ফরটিফাই রাইটস ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে মানবিক করিডরের প্রস্তাব দেওয়া হয়। খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, রাখাইনে সহায়তা পৌঁছানোর একমাত্র কার্যকর পথ হচ্ছে বাংলাদেশ, কারণ অঞ্চলটির উপকূল এখনও মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

তিনি আরও জানান, জাতিসংঘ আরাকান আর্মি ও বাংলাদেশকে আলোচনায় বসিয়েছে, এবং বাংলাদেশ পৃথকভাবে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও আলোচনা চালাচ্ছে। পরে তাকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বও দেওয়া হয়।

এই প্রসঙ্গে বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই কিছু পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশকে রাখাইনে একটি মানবিক করিডর দিতে আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু ভৌগোলিক ও কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশে রাজনৈতিক সরকারগুলো এতদিন তাতে সাড়া দেয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্ত ঘিরে তাই নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, যেখানে জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

সূত্র : বিবিসি

রাখাইনের জন্য মানবিক করিডর বাংলাদেশের জন্য কেমন ঝুঁকি তৈরি করতে পারে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top