রাখাইন রাজ্যে একটি স্বাধীন রোহিঙ্গা রাষ্ট্র গঠনের জন্য বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমারের সরকার।
রোববার ঢাকায় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকে জামায়াত এই প্রস্তাব দেয়। তবে এ বিষয়ে চীন কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
জামায়াত প্রতিনিধি দলের নেতা নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ‘অমানবিক পরিস্থিতির’ মধ্যে রয়েছে। তাদের এই দৈন্য-দশা থেকে উত্তরণের জন্য মানবিক সহায়তা কোনো সমাধান নয়।
তাহের বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে একটি স্বাধীন আরাকান রাজ্য গঠনের প্রস্তাব করেছি, যাতে তাদের প্রত্যাবাসন এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করা যায়।’
তিনি বলেন, মিয়ানমারের জান্তার সাথে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে জামায়াত চীনের সমর্থন চেয়েছিল। তাহের জানান, সিপিসি প্রতিনিধিরা চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দেবেন।
এই প্রস্তাবটি মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করেছে বলে সরকার জানিয়েছে। একইসঙ্গে, তারা অভিযোগ করেছে যে জামায়াত রাজনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যে সিপিসির সাথে যোগাযোগ করছে।
মিয়ানমার সরকার বলেছে, ‘বাঙালি’ শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমার বারবার তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ‘বাঙালি’ শব্দটি সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে উল্লেখ করার জন্য ব্যবহার করে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী এবং জান্তার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিয়মিতভাবে কুনমিংয়ে মুসলিম শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করার জন্য মিলিত হন।
সরকার বলেছে, প্রত্যাবাসনের আগে শরণার্থীদের যাচাই এবং নিবন্ধন করার নীতি তাদের রয়েছে এবং প্রত্যাবর্তনকারীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, জামায়াতের প্রস্তাবটি মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করার পাশাপাশি রাজনৈতিক লাভের জন্য বিষয়টিকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা।
আর্জেন্টিনার একটি আদালত এই বছর ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে জান্তা নেতা মিন অং হ্লাইং এবং আরো ২৩ জন সামরিক কর্মকর্তার গ্রেফতারের জন্য পরোয়ানা জারি করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর মিন অং হ্লাইংয়ের গ্রেফতারি পরোয়ানার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন।
মার্চ মাসে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের একজন সাংসদ চিনল্যান্ড কাউন্সিল পরিদর্শন করেন, যা চিন রাজ্যের একটি শাসনবিরোধী গোষ্ঠী এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোকে তাদের ভাগ করা জাতিগত পরিচয়ের কথা উল্লেখ করে ভারতে যোগদানের আহ্বান জানান।
প্রতিবেশী মণিপুর রাজ্যের আরেকজন সাংসদ ভারতের নিম্নকক্ষে সাগাইং অঞ্চলের কাবাও উপত্যকা পুনরুদ্ধারের প্রস্তাবে ভাষণ দেন। নয়াদিল্লিকে এর প্রত্যাবর্তনের সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করার বা মিয়ানমার থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের আহ্বান জানান।
জান্তার মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন জবাবে বিদেশী রাজনীতিবিদদের ‘স্বার্থপরতা’ থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করেন, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে। তিনি মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধার আহ্বান জানান।
২০০১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের সাথে তার সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ আরাকান সেনাবাহিনীর কাছে হারিয়েছে এবং চিন রাজ্য ও সাগাইং অঞ্চলের সীমান্ত শাসনবিরোধী গোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি চীনা সীমান্তের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন থাই সীমান্তের বেশিরভাগ অংশ দখল করে আছে।
সূত্র : ইরাবতি