তুরস্ক সিরিয়ার তিয়াস বিমান ঘাঁটি (T4) নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে এবং সেখানে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে। পাশাপাশি, ঘাঁটিটির পুনর্গঠনের পরিকল্পনাও চলছে।
বাশার আল-আসাদের পতনের পর গত ডিসেম্বর থেকে আঙ্কারা ও দামেস্ক একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। এই চুক্তির আওতায় তুরস্ক সিরিয়ার নতুন সরকারকে বিমান কভার ও সামরিক নিরাপত্তা দেবে। কারণ দেশটির কার্যকর সামরিক বাহিনী নেই। যদিও তুর্কি কর্মকর্তারা সিরিয়ায় সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনাকে নাকচ করেছিলেন, আলোচনা এখনো চলছে।
ইসরায়েল তুরস্কের সামরিক উপস্থিতিকে হুমকি মনে করলেও, আঙ্কারা সিরিয়াকে স্থিতিশীল করতে এবং রাশিয়া ও ইরানের সরে যাওয়ার ফলে তৈরি হওয়া শক্তির শূন্যতা পূরণ করতে চায়। একইসাথে তুরস্ক ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই আরো জোরদার করতে চায়, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া থেকে সরে যাওয়ার শর্তগুলোর একটি।
মিডল ইস্ট আইকে দেয়া তথ্যানুসারে, তুরস্ক পালমিরার কাছে T4 বিমান ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেছে। সূত্র জানায়, “ঘাঁটির নিরাপত্তার জন্য T4-তে ‘হিসার’ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হবে।”
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর হলে, ঘাঁটিকে পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ করা হবে। নজরদারি ও সশস্ত্র ড্রোন মোতায়েনের পরিকল্পনাও রয়েছে, যার মধ্যে উন্নত আক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন থাকবে। তুরস্ক এই ঘাঁটি ব্যবহার করে আকাশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে এবং আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াই আরও কার্যকর করতে চায়।
আঙ্কারা এই ঘাঁটিতে জেট, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় সক্ষম একটি আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, তুর্কি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ড্রোনের উপস্থিতি ইসরায়েলের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইসরাইলের উদ্বেগ
আসাদের পতনের পর থেকে ইসরায়েল নিয়মিতভাবে সিরিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে, বিশেষ করে T4-এর আশপাশে। গত সপ্তাহে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী T4 ও পালমিরা বিমান ঘাঁটির রানওয়ে ও কৌশলগত স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
একজন ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, সিরিয়ায় কোনো তুর্কি বিমান ঘাঁটি আমাদের সামরিক কার্যক্রমের জন্য হুমকি হতে পারে, যা আমরা মেনে নেব না।
গাজায় সাম্প্রতিক যুদ্ধের পর তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, যা তাদের পুনর্মিলনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করেছে। সিরিয়ায় তুরস্কের বাড়তে থাকা প্রভাব ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং তারা এখন ইরানের চেয়ে তুরস্ককে বড় হুমকি হিসেবে দেখছে।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জেরুজালেম পোস্টকে জানিয়েছেন, “আমরা সম্প্রতি T4 ঘাঁটিতে হামলা করে বার্তা দিয়েছি, আমরা আমাদের আকাশসীমায় কোনো হুমকি বরদাশত করব না।”
মিডল ইস্ট আই সূত্র আরও জানিয়েছে, পুনর্গঠনের সময় আকাশসীমা সুরক্ষিত রাখতে আঙ্কারা T4 বা পালমিরায় অস্থায়ীভাবে রুশ-নির্মিত S-400 বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের কথা ভাবছে। তবে, এটি কার্যকর করতে রাশিয়ার অনুমতি প্রয়োজন।
এদিকে, S-400 কেনার কারণে তুরস্কের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে আঙ্কারা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা চলছে। ২০১৯ সালে এই কারণে তুরস্ককে F-35 যুদ্ধবিমান কর্মসূচি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান ফোনালাপে তুরস্কের এই কর্মসূচিতে পুনরায় যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে, মার্কিন আইন অনুযায়ী, তুরস্ককে S-400 ব্যবস্থা ত্যাগ করতে হবে।
তুর্কি কর্মকর্তারা প্রস্তাব দিয়েছেন, তারা S-400 ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করে সংরক্ষণ করবে বা তুরস্কের বাইরে তুর্কি-নিয়ন্ত্রিত ঘাঁটিতে স্থানান্তর করবে। তবে, ইসরায়েল এ সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছে, কারণ তারা মনে করে, তুরস্কের F-35 ব্যবহারের অনুমতি ইসরায়েলের কৌশলগত সামরিক সুবিধা কমিয়ে দেবে।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই