সিরিয়া, ট্রাম্প, আহমেদ আল শারা, সম্পাদকের বাছাই,

সিরিয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে যে শর্ত দিলেন ট্রাম্প

টুডেনিউজ ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দামেস্কের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের একদিন পর বুধবার রিয়াদে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা’র সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই বৈঠকটি উপসাগরীয় আরব নেতাদের একটি বৃহত্তর সমাবেশের আগে অনুষ্ঠিত হয়।

২০২৪ সালের শেষদিকে বাশার আল-আসাদের পতনের পর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আয়োজনে এই সাক্ষাৎ সিরিয়ার সাথে পশ্চিমা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ পুনঃসম্পর্ক স্থাপনের ইঙ্গিত দেয়।

দুই দশকেরও বেশি সময় পর এটি ছিল প্রথমবার কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে সিরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠক। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশ নেন বলে জানিয়েছে আনাদোলু সংস্থা।

ট্রাম্প সিরিয়াকে আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান এবং দামেস্ককে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বলেন, যা মার্কিন নেতৃত্বাধীন এক কূটনৈতিক উদ্যোগের অংশ।

২০২০ সালে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান এবং মরক্কোর মধ্যে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

এই চুক্তিগুলো মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতিতে বড় পরিবর্তন আনে। ইসরাইলকে স্বীকৃতি না দেয়ার অবস্থান পাল্টে দেয়। তবে এগুলো আরব বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।

সিরিয়া বরাবরই ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ প্রত্যাখ্যান করে আসছে, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখলকৃত গোলান হাইটস ও ইসরাইলি আগ্রাসনের কথা উল্লেখ করে।

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শিবানি ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারকে স্বাগত জানান এবং বলেন, ‘ট্রাম্প একটি ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি ও মার্কিন স্বার্থে বিজয় অর্জন করতে পারেন।’ তিনি কোন চুক্তির কথা বলেছেন তা স্পষ্ট নয়।

তবে শারা সম্প্রতি প্যারিসে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইসরাইলের সাথে পরোক্ষ আলোচনার কথা নিশ্চিত করেন।

মার্কিন কূটনৈতিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে জানায়, শারা রিয়াদে একটি প্রস্তাব নিয়ে যান, যাতে গোলান হাইটস সামরিকভাবে নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে—যা ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দেয়।

শারা আমেরিকান কোম্পানিগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব এবং তেল ও গ্যাস খাতে চুক্তির আগ্রহ জানান। বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সহায়তা কামনা করেন।

এছাড়া তিনি প্রতীকী অঙ্গীকার হিসেবে একটি বিশাল টাওয়ার নির্মাণ এবং এর নাম “ট্রাম্প টাওয়ার” রাখার ঘোষণা দেন।

সূত্র মতে, ওয়াশিংটন শারা’র প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে এবং ট্রাম্প এতে উৎসাহ প্রকাশ করেছেন।

আইএস আটক কেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ

উচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকে ট্রাম্প শারাকে আহ্বান জানান, উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) যোদ্ধাদের আটক কেন্দ্রগুলোর দায়িত্ব নিতে এবং যাদের তিনি ফিলিস্তিনি ‘উগ্রবাদী’ বলছেন, তাদের নির্বাসনে পাঠাতে।

২০০৫ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বিস্ফোরক পুঁতে রাখার অভিযোগে শারা পাঁচ বছরেরও বেশি সময় মার্কিন কারাগারে ছিলেন। পরে তিনি সিরিয়ায় ফিরে এসে আল-কায়েদার শাখা আল-নুসরা ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামে পরিচিত হয়।

২০২৪ সালের শেষদিকে এইচটিএস আসাদকে উৎখাত করলে শারা সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে আসেন। তার নেতৃত্ব এখন বহু দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখে।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসের প্রতি মার্কিন সমর্থন কমেছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শারা’র নেতৃত্বাধীন সরকার সিরিয়ার অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব হ্রাসে সক্রিয় হয়েছে।

এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দাবিতে সিরিয়ান কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের দুই সিনিয়র নেতাকে গ্রেফতার করে, যারা আগে আসাদ সরকারের মিত্র ছিল।

নতুন সরকার জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর আর সিরিয়ার ভেতরে সামরিক কার্যক্রম চালাতে দেয়া হবে না।

সূত্র : মিডল ইস্ট আই

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top