টুডেনিউজ ডেস্ক
২০ ডিসেম্বর ২০২৪। দামেস্কে নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে এক অনুসন্ধানী বৈঠক শেষে মার্কিন দূত বারবারা লিফ জানান, তিনি শারাকে একজন বাস্তববাদী হিসেবে দেখেছেন। তার মতে, শারার বক্তব্য ছিল মধ্যপন্থী ও বাস্তবসম্মত। লিফ মনে করেন, সিরিয়ানদের সামনে এখন দেশ পুনর্গঠনের এক বিরল সুযোগ এসেছে। তিনি শারাকে জানান, তার নামে ওয়াশিংটনের ঘোষিত ১০ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার বাতিল করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পরদিনই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা এক অভিনন্দন বার্তা পাঠান। সেখানে তিনি ট্রাম্পকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরানো নেতা হিসেবে প্রশংসা করেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপ ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে তিনি আগ্রহী। তবে মার্কিন প্রশাসন বার্তাটির জবাব দেয়নি। ২৯ জানুয়ারি থেকে শারার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্সিকে ঘিরে ওয়াশিংটন কিছুটা দ্বিধা ও অস্পষ্টতা প্রকাশ করে।
এই সংকোচের পেছনে ছিল সিরিয়া-নীতি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিধা এবং ইসরাইলের দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তারা, বিশেষ করে তুলসি গ্যাবার্ড ও সেবাস্তিয়ান কুর্গা, এ নীতির নেতৃত্বে ছিলেন। কুর্গা হায়াত তাহরির আল-শামের অতীত কর্মকাণ্ড ও জিহাদি সম্পৃক্ততা তুলে ধরে নতুন সিরীয় সরকারের সঙ্গে যেকোনো সম্পৃক্ততা প্রত্যাখ্যান করেন।
আটটি শর্ত
১৮ মার্চ ব্রাসেলসে সিরিয়া দাতা সম্মেলনের ফাঁকে, উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাতাশা ফ্রান্সেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শেইবানীর হাতে একটি শর্তপত্র তুলে দেন। শর্তগুলোর মধ্যে ছিল,
১. সব ফিলিস্তিনি দল ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা।
২. ওয়াশিংটনের নিরাপত্তা-হুমকি বিবেচিত ব্যক্তিদের টার্গেট করার অনুমতি।
৩. ইরানি বিপ্লবী গার্ড ও হিজবুল্লাহকে উগ্রবাদী হিসেবে স্বীকৃতি।
৪. রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।
৫. বিদেশিদের সেনা নেতৃত্বে না রাখার নিশ্চয়তা।
৬. আইএসবিরোধী লড়াইয়ে জোটের সঙ্গে প্রকাশ্য প্রতিশ্রুতি।
৭. নিখোঁজ আমেরিকানদের সন্ধানে কমিটি গঠন।
৮. আল-হাওল শিবির থেকে আইএস পরিবার গ্রহণের অঙ্গীকার।
এই শর্তাবলী নতুন প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগের ভিত্তি। মার্কো রুবিও ও সিআইএ এতে সমর্থন দেন। তাদের মতে, এতে ইরান দুর্বল হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফিরবে।
শর্তগুলোর অধিকাংশই দামেস্কের স্থিতিশীলতা প্রচেষ্টার সঙ্গে মেলে। ব্যতিক্রম দুটি- ফিলিস্তিনি দল নিষিদ্ধ করা এবং সেনা নেতৃত্বে বিদেশিদের নিষেধাজ্ঞা। সিরিয়ার প্রতিক্রিয়া আসে ১৪ এপ্রিল। এক চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেইবানি জানান, ফিলিস্তিনি দল তদারকির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সিরিয়ার ভূখণ্ডে স্বাধীন সশস্ত্র দলকে কাজ করতে দেয়া হবে না। এছাড়া ইসরাইলকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে না দেয়ার প্রতিশ্রুতি এবং রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে অগ্রগতির কথাও বলা হয়।
তবে বিদেশি সেনা-নেতৃত্বে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে অগ্রগতি সীমিত। দামেস্ক প্রতিশ্রুতি দেয়, আর কোনো বিদেশি সেনা নেতৃত্বে থাকবে না। একই সঙ্গে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের উগ্রবাদবিরোধী অভিযানে অংশ নেয়া বা জোট বাহিনীর চলাচলে স্বাধীনতা নিয়ে আপত্তি জানায়।
যদিও আপত্তি ছিল, চিঠিটিকে ওয়াশিংটনে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। এর কয়েকদিন পর ইসলামিক জিহাদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে দামেস্ক। এই পদক্ষেপ ছিল শেইবানীর জাতিসংঘ সফরের প্রস্তুতির অংশ, যেখানে তার মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কাছে ট্রাম্পের দাবি
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পথ সুগম হয়। শেষমেশ ১৩ মে ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। সিরিয়ার জনগণ উল্লাসে ফেটে পড়ে।
এর পরদিনই ট্রাম্প, শারা, মোহাম্মদ বিন সালমান ও অনলাইনে এরদোয়ানের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে মিলিত হন। হোয়াইট হাউস জানায়, শারার প্রতি মুগ্ধ ট্রাম্প সেখানে পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেন, যা রয়টার্সে প্রকাশিত হয়েছে।
ইসরাইলের সাথে আব্রাহাম চুক্তিতে যোগদান।
সকল বিদেশী উগ্রবাদীদের সিরিয়া ত্যাগের দাবি।
ফিলিস্তিনি উগ্রবাদীদের নির্বাসন।
আইসিসের প্রত্যাবর্তন রোধে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা।
উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার আইসিস আটক কেন্দ্রগুলির দায়িত্ব গ্রহণ।
এটি স্পষ্ট, আমেরিকানদের কিছু দাবি বদলে গেছে এবং আগের চেয়ে সাহসী হয়েছে। মনে হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট শারার কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র কিছু প্রতিশ্রুতি চেয়েছিল—যা আমেরিকা ও ইসরাইল উভয়ের জন্য কৌশলগত ছিল। বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং দামেস্কের অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ওঠে।
নতুন দাবিগুলোর একটি অংশ এসেছে ফিলিস্তিনি দলগুলোর বিষয়ে দামেস্কের আপত্তিকর বা অনিশ্চিত অবস্থানের কারণে। আরেকটি অংশ ইরানকে ঠেকানো এবং উগ্রবাদবিরোধী প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত। তৃতীয় এবং সবচেয়ে বিপজ্জনক দাবি হলো, ইসরাইলের সাথে শান্তিচুক্তি।
ফিলিস্তিনি দলগুলোকে বহিষ্কারের দাবি
মার্কিন প্রস্তাব ফিলিস্তিনি দল, বিশেষত হামাস, ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্টের প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছে। নিষিদ্ধ না করে বহিষ্কারের পথই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। আমেরিকা চায়, সিরিয়ার মাটিতে এসব দল রাজনৈতিক বা সামরিকভাবে সক্রিয় না থাকুক।
যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনে শারার অঙ্গীকার দরকার। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কঠিন। ফিলিস্তিনি ইস্যু সিরীয় জনতার চেতনার অংশ। শারা নিজেও স্বাধীনতার আগে বহুবার এটি বলেছেন। এটি শুধু একটি আরব বা ইসলামী নয়, বৈশ্বিক মানবিক ইস্যু।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকারী দলগুলো থেকে ফিলিস্তিন ইস্যুকে আলাদা করা কঠিন। শারার বিকল্প সীমিত। বিপর্যয় এড়াতে তাকে আবার আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে একত্র হতে হবে। তুরস্ক ও কাতার সম্ভবত এখানেই বড় ভূমিকা নেবে। তারা এই দলগুলোর নেতাদের আতিথ্য দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনেক নেতা দামেস্ক ছেড়েছেন। কেউ ইসরাইলি হামলায়, কেউ রাজনৈতিক চাপে। দামেস্কের বোঝা হয়ে ওঠা এড়াতেও তাদের এই পদক্ষেপ। অনেক দল এখনও লেবাননে কিছু কর্মকাণ্ড চালাতে পারছে। এতে কৌশল বজায় রাখা ও ফিলিস্তিনের কাছাকাছি থাকা সম্ভব হচ্ছে।
আব্রাহাম চুক্তিতে যোগদান
হোয়াইট হাউসের মতে, প্রথম দাবি ছিল আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষর। এতে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পূর্ণ শান্তি ও কূটনৈতিক সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। উভয় পক্ষের ভূখণ্ড যেন একে অপরকে আক্রমণের জন্য ব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করারও কথা রয়েছে।
সাক্ষাতে শারা ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দেন। তবে হোয়াইট হাউস বলেছে, ট্রাম্প দাবি করেছেন—শারা আব্রাহাম চুক্তিতে যোগদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং ইতিবাচক সাড়া জানিয়েছেন।
তবে চুক্তির পথে বেশ কিছু বাধা আছে। শারা একজন অনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তাই এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার নেই। নির্বাচিত সংসদের অনুমতি প্রয়োজন। তাছাড়া অধিকৃত অঞ্চল ত্যাগের ক্ষমতাও তার নেই, যা জনসমর্থনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গোলান হাইটস ইস্যু আগের সরকারের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। তবুও চুক্তির প্রতিশ্রুতি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বাস্তবায়নের আগে শারাকে দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে এবং ধারাবাহিক সাফল্যের মাধ্যমে বৈধতা অর্জন করতে হবে।
রাজনীতিতে অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়সীমা ছাড়াই প্রতিশ্রুতি দেওয়া শারাকে কৌশল গ্রহণে সুযোগ দেয়। আমেরিকানরাও জানে, এটি রাতারাতি সম্ভব নয়; এমনকি যদি শারা রাজিও থাকেন। কিছু বাস্তব কারণ আছে, যার ফলে এই প্রতিশ্রুতি আপাতত শুধু একটি প্রবণতা হিসেবেই গ্রহণযোগ্য—যার উদ্দেশ্য ভূখণ্ড অন্য পক্ষকে লক্ষ্যবস্তু করতে না দেওয়া।
সম্ভবত ট্রাম্পের এই আগ্রহের কারণ ছিল সিরিয়ার ওপর ইসরাইলি হামলা বন্ধ করা। সিরিয়া বহুবার এ নিয়ে আপত্তি তুলেছে। মিত্ররাও এই দাবি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পুনরাবৃত্ত করেছে। তারা জানে, নেতানিয়াহুকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমেরিকার আছে—বিশেষ করে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন এবং নেতানিয়াহু সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবধান স্পষ্ট হওয়ায়।
উগ্রবাদী গোষ্ঠী হিসেবে মনোনীত গোষ্ঠীগুলো
সকল বিদেশী উগ্রবাদীর সিরিয়া ত্যাগ—এই ট্রাম্পীয় আহ্বান মূলত সিরিয়ার বাইরের গোষ্ঠী ও উগ্রবাদী তালিকাভুক্ত উপদলগুলিকে উদ্দেশ করে। এর মধ্যে আইএসআইএস, ইরানি বিপ্লবী গার্ডের ঘনিষ্ঠ উপদল এবং মার্কিন উগ্রবাদী তালিকাভুক্ত জিহাদি সংগঠনগুলো রয়েছে।
সিরিয়ায় যেসব বিদেশি গোষ্ঠী উগ্রবাদী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ, তারা সাধারণত সিরিয়াবাসীর প্রতি, বিশেষ করে নতুন নেতৃত্বের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। এসব গোষ্ঠীর উপস্থিতি রোধে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমি এখানে আইসিস, শিয়া মিলিশিয়া, বিপ্লবী গার্ড ও হিজবুল্লাহর কথা বলছি। তবে সমস্যা মূলত কিছু ব্যক্তিগত ও ছোট গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত, যাদের কেউ কেউ আসাদ-বিরোধী অভিযানে অংশ নিয়েছিল।
হায়াত তাহরির আল-শামে থাকা প্রায় ২,৫০০ বিদেশির সবাইকে উগ্রবাদী বলা হয়নি। এদের অধিকাংশ চীনা উইঘুর (তুর্কিস্তানি), যারা ২০২০ সালে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। তাদের নাগরিকত্ব, পুনর্বাসন ও সমাজে একীভূত করার চিন্তা করা হচ্ছে। কারণ, অনেকেই সিরিয়ানদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ, পরিবার গড়েছেন এবং আগ্রাসন প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন।
আল-শারারের পক্ষে তার কিছু অস্ত্রধারী সহযোদ্ধা, বিশেষত আরব ও বিদেশিদের ত্যাগ করা কঠিন। তবু তিনি তাদেরকে গোপনে অবস্থান নিতে বাধ্য করতে পারেন এবং সিরিয়ায় সক্রিয় না থাকার প্রতিশ্রুতি নিতে পারেন। এ ছাড়া, তিনি চাইলে তাদের নিজ দেশে লক্ষ্য স্থির করতে বলেন এবং নির্বাচিত উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোকে, যেমন চেচেনদের সিরিয়া ছাড়তে অনুরোধ করতে পারেন। এই গোষ্ঠীগুলোর অনেকেই আল-শারারের অবস্থানের সঙ্গে একমত নয়, ফলে তাদের বিদায় দাবি করা সহজ।
তিনি নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে তিনটি বিকল্প দিতে পারেন—রাজনৈতিক আশ্রয়, রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা কিংবা দেশত্যাগ। এটি আমেরিকানদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে, কারণ তারা জানে—রাজনীতিতে সব কিছু আক্ষরিকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। আট দফা দাবির জবাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদেশি নেতাদের সামরিক নেতৃত্বে না থাকার শর্ত শারিয়া-অনুযায়ী ব্যাখ্যা করায় তারা কিছুটা সন্তুষ্ট।
আইসিস ও কাসদের প্রসঙ্গ
আট দফার পঞ্চম দাবি এবং ট্রাম্পের আহ্বান, যেটিতে বলা হয়েছে—উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার আইসিস আটক কেন্দ্রগুলোর দায়িত্ব নিতে হবে। এটি মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসন ভেঙে ফেলার লক্ষণ বহন করে। এটি বাস্তবায়নের জন্য এসডিএফ নেতৃত্বের সঙ্গে সমঝোতা দরকার, যার একটি রূপরেখা রিপাবলিকান প্রাসাদে মাজলুম আবদি ও প্রেসিডেন্ট আল-শারারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে রয়েছে।
এখন প্রয়োজন মাটিতে বাস্তব পদক্ষেপ, বিশেষ করে তেল ও বাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর। যদিও এসডিএফ নেতৃত্বের প্রতিরোধ আছে, তারপরও এই প্রক্রিয়া চলছে। সম্ভবত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির বিলুপ্তি ত্বরান্বিত হবে এবং দামেস্কের হাতে আল-হাওল শিবিরসহ সব আটক কেন্দ্র ও উগ্রবাদী পরিবারের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আসবে।
দামেস্কের জন্য সব শর্ত প্রস্তুত। আটক কেন্দ্র হস্তান্তরের দাবি এসডিএফ-এর প্রতি একটি বার্তা এবং একই সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়নের চাপ। এ দাবি, একইসঙ্গে উগ্রবাদ মোকাবেলায় দামেস্ককে একটি দায়িত্বশীল অংশীদার হিসেবে তুলে ধরে। এর ফলে জোট বাহিনীর হামলার অনুমোদন এখন দামেস্কের সায় ছাড়া সম্ভব নয়। মার্কিন প্রশাসন বুঝতে পারছে—এই ইস্যু কতটা সংবেদনশীল এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বের স্থায়িত্ব মানেই সমগ্র অঞ্চলের স্থিতিশীলতা।
সম্ভাবনা
যেমন বলা হয়েছে, কিছু দাবি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকরযোগ্য, কিন্তু অধিকাংশ দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত। তাই তাদের ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করতে হবে, সরাসরি নয়। বরং লক্ষ্য অনুযায়ী নানা কৌশলে এগোতে হবে। তবে মার্কিন প্রশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো—দামেস্কের পক্ষ থেকে একটি আন্তরিক প্রতিশ্রুতি, যা আল-শারারকে বিশ্বাসযোগ্য মিত্রে পরিণত করবে।
দামেস্কের জন্য এটি একটি সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়—স্থিতিশীলতা, পশ্চিমা স্বীকৃতি এবং অতীত শাসনের নেতিবাচক উত্তরাধিকার থেকে বের হয়ে আসার পথ। বিলুপ্ত হায়াত তাহরির আল-শামের কট্টরপন্থীদের মাঝে মধ্যপন্থা ছড়াতে ও চরমপন্থা দমনেও এটি কাজে লাগতে পারে।
সূত্র : আল জাজিরা