সুমুদ কনভয়, গ্লোবাল মার্চ টু গাজা, মিসর

গাজা অভিমুখী সুমুদ কনভয়কে থামিয়ে দিলো মিসর

গাজায় অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে ‘গ্লোবাল মার্চ টু গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে আগত শত শত বিদেশী কর্মীর উপর কঠোরতা আরোপ করেছে মিসরীয় কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার মিসরের সির্তে শহরের গেটে সুমুদ কনভয় থামিয়ে দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিরাপত্তা অনুমোদনের অপেক্ষায় আরো বিদেশীদের আটক বা বহিষ্কার করা হয়। আয়োজক, নিরাপত্তা সূত্র এবং সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মিসরে প্রবেশকারী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কয়েক ডজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরো অনেকে বহিষ্কারের ঝুঁকিতে রয়েছে।

গাজায় ইসরাইলি অবরোধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে ৮০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। আয়োজকরা জানান, অংশগ্রহণকারীদের কায়রো থেকে বাসযোগে সিনাই উপদ্বীপ পেরিয়ে আল-আরিশ শহরে পৌঁছে রাফাহ সীমান্তের দিকে পদযাত্রা করার কথা ছিল। তবে মিসরীয় কর্তৃপক্ষ অনেককেই বিমানবন্দর ও হোটেল থেকে গ্রেফতার করে ফিরিয়ে দিয়েছে।

এজেন্সি ফ্রান্স প্রেস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গ্লোবাল মার্চ টু গাজার অন্তত ৪০ জনকে কায়রো থেকে ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে থামানো হয়েছে এবং তাদের পাসপোর্টও জব্দ করা হয়েছে। আয়োজকদের দাবি, তারা শান্তিপূর্ণভাবে মিসরের আইন মেনে চলেছে এবং কূটনৈতিক মিশনগুলোর সহায়তা কামনা করেছে।

গাজাগামী আন্তর্জাতিক এই পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন ৫০টি দেশের প্রায় ৪,০০০ মানুষ। তাদের মধ্যে মার্কিন, অস্ট্রেলিয়ান, ডাচ, ফরাসি, স্প্যানিশ, মরক্কো ও আলজেরীয় নাগরিক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন গ্লোবাল মার্চ টু গাজার মুখপাত্র সাইফ আবু কিশক।

রয়টার্স জানিয়েছে, মিসরীয় কর্তৃপক্ষ প্রবেশের নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে অন্তত ৭৩ জনকে ইস্তাম্বুলগামী বিমানে করে বহিষ্কার করেছে। আরো ১০০ জন বিমানবন্দরে আটকে আছেন। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য জানায়নি। তবে পূর্বে তারা বলেছিল, রাফা সীমান্তে যেতে হলে সরকারি অনুমোদন ও নিরাপত্তা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

এদিকে, লিবিয়ার সির্তে শহরের প্রবেশপথে ‘আল-সুমুদ’ কনভয়কে থামিয়ে দিয়েছে পূর্ব লিবিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী। গাজার পক্ষে বেনগাজিগামী এই কনভয়টি তিউনিসিয়া থেকে যাত্রা শুরু করে। এতে তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়াসহ অন্তত ১,৫০০ জন কর্মী ও সমর্থক রয়েছেন। তাদের সাথে ছিল প্রায় ২০টি বাস ও ৩৫০টি যানবাহন।

যৌথ কর্ম সমন্বয় কমিটির এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সির্তের নিরাপত্তা বাহিনী কনভয় থামিয়ে বলেছে, তাদের বেনগাজি কর্তৃপক্ষের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ফলে কনভয়ের পরিচালনা কমিটি সির্তের উপকণ্ঠে ক্যাম্প করে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বেনগাজি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগের শুভেচ্ছাবার্তার প্রতিফলন ঘটায় এবং এই শান্তিপূর্ণ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করে।

কনভয়টি গাজায় চলমান অবরোধ, অনাহার ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি মহৎ বার্তা বহন করছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, লিবিয়ার জনগণ গাজা ইস্যুতে পূর্ব-পশ্চিম বিভাজন করে না।

প্রসঙ্গত, ২ মার্চ থেকে ইসরাইল রাফাহ সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় গাজায় মানবিক পরিস্থিতি আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির প্রবেশ আটকে দিয়ে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর অবরোধ আরো কঠোর করেছে। ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১,৮২,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আরো ১১ হাজার মানুষ নিখোঁজ এবং লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই গণহত্যামূলক অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মামলাও চলছে।

সূত্র : আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top