শায়খ আবু তাসনিম
এক হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা নিজে সুন্দর। তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। তাই আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভালোবাসার দাবি হলো, বান্দা নিজেও সুন্দরের পথ ধরে চলবে। নিজের জীবনটা পরিপাটি করে রাখবে। এতে একদিকে আল্লাহর তায়ালার প্রতি ভালোবাসার দাবি পূরণ হলো, অপরদিকে ব্যক্তিগত জীবনেও সুখ-সমৃদ্ধি লাভ করা যায়। মুমিনের এই আত্মসমর্পণ কুরআনের ভাষায় এমন, ‘আমার নামাজ, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগত্গুলোর প্রতিপালক আল্লাহর উদ্দেশ্য।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬২)
সৌন্দর্যের নানা দিক আছে। কিছু সৌন্দর্য বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন কুফর ও শিরক থেকে বিরত থাকার বান্দার সৌন্দর্য। তাই যে কুফর ও শিরক থেকে পবিত্র থাকে, সে সুন্দর। কিন্তু যে কুফর কিংবা শিরকে লিপ্ত, সে সুন্দর নয়। কারণ, পৃথিবীতে অকৃতজ্ঞতাকে কেউ সুন্দর বলে না। বরং কৃতজ্ঞরাই সুন্দর হিসেবে বরিত। যে অকৃতজ্ঞ ও অসুন্দর, তার জন্য এ অবস্থায় রবের দরবারের হাজিরী শোভনীয় নয়। সেজন্য নানা ক্ষেত্রে কাফের ও মুশরিক মুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার নির্দেশ শরীয়তে এসেছে। যেমন দেশে অনাবৃষ্টি দেখা দিলে ইস্তেস্কার নামাজ পড়তে হয়। সেখানে কাফের-মুশরিককে নেয়া যাবে না। পবিত্র কাবা চত্বরেও কাফের-মুশরিকদের প্রবেশ নিষেধ। সেজন্য আদর্শ ও বিশ্বাসগত সৌন্দর্যও ব্যক্তিকে অর্জন করতে হবে। এটি মানবজীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।
আকিদার পর ইবাদতেও বান্দাকে সৌন্দর্যের পরিচয় দিতে হয়। সেজন্য আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যখনই তোমরা নামাজ পড়তে যাও, তখনই সৌন্দর্য ধারণ করো। (সূরা আরাফ, আয়াত : ৩১)। যেসব স্থানে সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দিতে হয়, তার একটি মাত্র উদাহরণ এখানে দেয়া হয়েছে। এছাড়া যেকোনো ইবাদতেই সৌন্দর্য অবলম্বন সবিশেষ কাম্য। কারণ, আল্লাহ তায়ালা হলেন রাজাধিরাজ। আমরা সামনে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সামনে যেতে কতটা সৌন্দর্য অবলম্বন করি, তাহলে আল্লাহ তায়ালার কাছে যখন আর্জি পেশ করবে, তখন তো আরো বেশি সৌন্দর্য অবলম্বন করা চাই। সেজন্য সালাফের আমলে দেখা গেছে, তারা ভোররাতে যখন তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন, গোসল করে, সুগন্ধি মেখে তারপর তাহাজ্জুদ পড়তেন।
এছাড়া মুমিনকে পোশাকেও সৌন্দর্যের পরিচয় দিতে হয়। কারণ, আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে যে নেয়ামত দান করেছেন, তার বেশ-ভূষায় তা প্রকাশ পাওয়া তিনি পছন্দ করেন। একবার এক ব্যক্তি রাসূলের দরবারে অসুন্দর পোশাকে এলেন। (তার এরচেয়ে সুন্দর পোশাক পরার মতো সাধ্য আছে।) তখন নবীজি সা. বললেন, তোমার কি মাল নেই? জবাবে ওই ব্যক্তি বললেন, সবধরনের মালই আছে। তখন নবীজি সা. বললেন, তাহলে তুমি এর বহিঃপ্রকাশ করো। বান্দার প্রতি নেয়মতের সুন্দর বহিঃপ্রকাশ আল্লাহ আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৫ : ২৩২)
মুমিনকে নিজের একান্ত জীবনেও পবিত্রতা ও সৌন্দর্য রক্ষা করে চলতে হয়। সেজন্য শরীরের অতিরিক্ত পশমগুলো পরিষ্কার করা, মোছ বড় হলে খাটো করা বা চেষে ফেলা, নখ বড় হলে কেটে ফেলা ইত্যাকার বিধানাবলী প্রবর্তিত হয়েছে। এছাড়া নারীদের পিরিয়ডের সময় সতর্ক থাকা, স্বামী-স্ত্রী সুলভ আচরণ থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি বিধানও সৌন্দর্য রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ থেকে এসেছে।
কাজেও সৌন্দর্য মেনে চলতে হয়। অশ্লীলতা, কলুষতা, নোংরামি ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজ পরিহার করে চলতে হয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফল হও।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯০)
আল্লাহ সবার জীবনকে সুন্দর ও মনোরম এবং পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে দিন। আমিন।




