হামাস, ইসরাইল, আরব সংখ্যালঘু, নেসেট

হামাসকে সমর্থনের অভিযোগে ইসরাইলের একমাত্র আরব সাংসদকে অপসারণের দাবি

ইসরাইলের নেসেট (সংসদ) থেকে বামপন্থী হাদাশ-তা’ল দলের আরব সদস্য আয়মান আওদাকে অপসারণের দাবিকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন দেশটির বিশিষ্ট সাংবিধানিক ও ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ মোর্দেচাই ক্রেমনিটজার। তার মতে, এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে অন্যায় নয়। বরং ইসরাইলের আরব সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ ঘোষণার মতো।

আওদার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তি হিসেবে তার একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতি দেখানো হয়েছে, যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘অপহৃত এবং কারাবন্দী ব্যক্তিদের মুক্তি পেয়ে আমি খুশি। এরপরে উভয় জনগণকে দখলদারিত্বের জোয়াল থেকে মুক্ত করতে হবে। কারণ আমরা সবাই স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করেছি।’

নেসেটের প্রতিনিধি পরিষদ কমিটি এই বক্তব্যকে ‘ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি উগ্রবাদী সংগঠনের সশস্ত্র সংগ্রামের প্রতি সমর্থন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তারা এটিকে হামাসের প্রতি সমর্থন হিসেবে ধরেছে।

তবে ক্রেমনিটজার, যিনি জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ইমেরিটাস অধ্যাপক, হারেৎজ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলেন, ‘এই ব্যাখ্যা অযৌক্তিক, বোকামি ও লজ্জাজনক অপরাধ।’ তিনি মনে করেন, বন্দী বিনিময় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো আওদার বক্তব্যকে আইনগতভাবে উগ্রবাদের প্রতি সমর্থন হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায় না।

আওদার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হিসেবে তার অতীতের ‘গাজা জিতেছে এবং গাজা জিতবে’ বক্তব্যকেও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ক্রেমনিটজারের মতে, এটি কোনোভাবেই সশস্ত্র সংগ্রামের প্রকাশ্য সমর্থন নয়।

তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র ‘বিকৃত মস্তিষ্ক’ বিশ্বাস করতে পারে যে গাজার প্রতিটি বাসিন্দা এমনকি নবজাতক, শিশু বা ভ্রূণ পর্যন্ত হামাসের সমর্থক। তিনি বরং বর্তমান যুদ্ধের জন্য দায়ী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করেন, যিনি গাজা থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে উচ্ছেদের ‘দুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি’ গ্রহণ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মুখে পড়েছেন।

ক্রেমনিটজার নেসেটের অন্যান্য সদস্যদের প্রতিও তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এই বিতর্কে তাদের বক্তব্য বর্ণবাদে পূর্ণ, যা গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলকে সমর্থন করে। এর ফলে ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরো অমানবিক হয়ে উঠছে।

আওদাকে বহিষ্কারের পদক্ষেপকে তিনি আরব সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক দমননীতির অংশ হিসেবে দেখেন। এছাড়া তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে এটি আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে আরব দলগুলোর ওপর রাজনৈতিক বিধিনিষেধকে আরো কঠোর করার ইঙ্গিত হতে পারে। এর মধ্যে ভবিষ্যতে আরব দলগুলোকে কোনো সরকারি জোটে অন্তর্ভুক্ত না করার প্রচেষ্টাও থাকতে পারে।

তিনি বিরোধী দলগুলোর দিকেও আঙ্গুল তোলেন, যারা ক্ষমতাসীন জোটের সাথে হাত মিলিয়ে আওদাের অপসারণে সহায়তা করছে। তাদেরকে ‘বোকা’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এর রাজনৈতিক মূল্য তাদের দিতে হতে পারে।

ক্রেমনিটজারের মতে, আওদার সংসদীয় মেয়াদ শেষ করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। এটি ইসরাইলে আরব সংখ্যালঘুদের ওপর ‘লজ্জাজনক রাজনৈতিক নির্যাতন’ ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি আওদাকে অপসারণ করা হয়, তবে তা ইসরাইলি গণতন্ত্র ও সংসদের জন্য ‘লজ্জা ও অপমান’ হিসেবে দেখা হবে। আরব সমাজে এই সিদ্ধান্ত যুদ্ধ ঘোষণা না হলেও এক ধরণের ‘বিপজ্জনক উস্কানি’ হিসেবে প্রতিভাত হবে।

তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে ইসরাইলের তথাকথিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মৌলিক ধারণাগুলোর পুনঃমূল্যায়নের সময় এসেছে। তার মতে, একটি বৃহৎ সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে এবং কট্টরপন্থী সরকার তা কাজে লাগিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা চালাতে পারে।

সূত্র : হারেৎজ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top