শায়খ আবু তাসনিম
ইসলাম নারীদের ব্যাপারে খুবই সংবেদনশীল। তাদের প্রতি এত শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা আর কোনো ধর্মে নেই। ইসলাম ধর্মের অনুসারী নারীরা পরিবারে রাজরানীর মতো থাকে। তাদের যাবতীয় ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পুরুষের উপর থাকে। বিয়ের আগ পর্যন্ত দায়িত্ব বাবার উপর থাকে। আর বিয়ের পরে ওই দায়িত্ব স্বামীর উপর বর্তায়।
নারীর প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের দায়িত্বও পুরুষের। সেজন্য বাজার থেকে এনে স্ত্রীর হাতে তুলেও স্বামীর দায়িত্ব। তাই নারীকে প্রয়োজনীয় কিছু কিনতে বাইরেও বের হতে হয় না। তবে প্রয়োজনে নারী যদি বাইরে বের হয়, তার মর্যাদা পূর্ণমাত্রায় রক্ষা করার লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনা রাখা হয়।
ইসলাম বলে, নারী ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বোরকা দিয়ে পুরো শরীর ঢেকে বের হবে। চেহারার উপর এমনভাবে নেকাব দেবে, যেন তা পর্দাও হয়ে যায়, রাস্তাও দেখা যায়। এতে পাপিষ্ঠদের অশ্লীল ও লোলুপ দৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের (সর্বাঙ্গ আচ্ছাদনকারী পোশাক) একটা অংশ নিজেদের ওপর ঝুলিয়ে দেয়। যেন তাদেরকে (স্বাধীন নারী হিসেবে) চেনা সহজতর হয়। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৯)
ইসলাম নারীদের ঘন বুননের পোশাক পরিধান করার নির্দেশ দেয় এবং স্বচ্ছ ও চিকন কাপড় পরতে নিষেধ করে। কারণ, এতে শরীরের সুকুমার্য আরো গভীরভাবে ফুটে ওঠে। ফলে অশ্লীল দৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব হয় না। তাই নবীজি সা. এ ধরনের পোশাক পরতে নিষেধ করেছেন। এমনকি যারা এ ধরনের পোশাক পরিধান করে, তাদেরকে অভিশাপ দিতে বলেছেন। এ হাদিসে এসেছে, নবীজি সা. বলেন, ‘শেষ যুগে আমার উম্মতের এমন কিছু নারী আসবে, যারা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ। … তোমরা তাদেরকে অভিশাপ করো। কেননা তারা অভিশাপেরই উপযুক্ত।’ সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১২৮
বোরকা চমকদার ও কারুকার্যখচিত না হওয়া উচিত। কেননা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নিরাপত্তার খাতিরে নারীকে নিজের সজ্জা ও সৌন্দর্য আবৃত করে বের হতে হয়। সুতরাং বোরকার কাপড় খুব সুন্দর ও ফুল দ্বারা ডিজাইন করা না হওয়া চাই। বরং বোরকা একেবারে সাদাসিদা হওয়া চাই। আর তা এতটুকু বড় হওয়া চাই যে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীর আবৃত থাকে। এ বিষয়ে উসামা বিন জায়েদ রা.-এর একটি ঘটনা প্রাসঙ্গিক হবে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. আমাকে একটি মোটা মিসরীয় পোশাক হাদিয়া দিলেন। পোশাকটি আমি আমার স্ত্রীকে পরতে দিলাম। পরে রাসূল সা. আমাকে বললেন : তুমি মিসরীয় পোশাকটি পরছ না কেন? আমি বললাম, আমি সেটা আমার স্ত্রীকে দিয়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, তাকে বলবে, যেন এই পোশাকের নিচে একটি শেমিজ পরে। কেননা আমার আশঙ্কা হচ্ছে, এই পোশাক তার হাড্ডির আকৃতি ফুটিয়ে তুলবে। (আল আহাদিসুল মুখতারা : ১/৪৪১)
বোরকার উপরে বা ভেতরের পোশাকে বা শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার না করা চাই। হাঁ, যদি এমন কিছু ব্যবহার করা হয়, যার সুবাস ছড়ায় না, তাহলে সমস্যা নেই। যে সুগন্ধি বাইরে ছড়ায় তা ব্যবহার করে বাইরে যাওয়া ঠিক হয়। এতে নারীর প্রতি মাদকতা অশ্লীল দৃষ্টিকে টেনে আনে। সেজন্য এমন খোশবু লাগিয়ে বাইরে বের হওয়া জায়েয নয়। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের নারীকে ব্যভিচারিনী বলে আখ্যা দিয়েছেন। জামে তিরমিযী, হাদীস ২৭৮৬
যখন বাইরের প্রয়োজনীয় কাজ করে দেয়ার মতো কোনো পুরুষ ঘরে না থাকে, তখন নারী বাইরে গমন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে তার সম্মান রক্ষা করে চলার জন্য ইসলাম এসব নির্দেশনা দিয়েছে। সেজন্য কোনো নারী যদি এই বিষয়গুলো রক্ষা করে চলে, তবে তার আভিজাত্য পূর্ণরূপে রক্ষিত হবে। ইভটিজিংসহ বখাটেদের যাবতীয় উত্যক্তপনা থেকে বেঁচে যাবে। সেজন্য নারীকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্যের সাথে উন্নত স্বভাব-চরিত্র ও সংযমী জীবন যাপনে দায়বদ্ধ হবে হবে। প্রকৃতির চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে নীতি-নৈতিকতা, ঈমানদারী বিসর্জন দেয়া যাবে না।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, জামিয়াতুদ দাওয়াহ আল মাদানিয়া ঢাকা