নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়ন,

হিজাব মানুষের জন্য নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য

রেবেকা জামান বিভা

আমি যখন হিজাব করা শুরু করি, তখনও পর্দার পরিপূর্ণ বুঝ ছিল না। খুব অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, যখন দেখি প্রবাসে থাকা স্বত্তেও অনেক মেয়েরাই কি সুন্দর পর্দা (হিজাব) করে চলে। আবার আমাদের মধ্যে অনেকে আছি, যারা পর্দা করি কিন্তু বিদেশ এ ঘুরতে গেলে পর্দা করি না। আসলে পর্দা কি শুধু দেশের মানুষ এর জন্য করছি আমরা?

অনেকে যারা দেশে থাকলে গায়ে ওড়না দেই ঠিক মত, বিদেশ ভ্রমন এ গেলে ওড়না গায়ে দেই না। ওড়না কি শুধুই রাস্তার লোকদের জন্য করি আমরা? ওড়না ছাড়া ছবি তুলে সেটা যে পাবলিকলি পোস্ট করি, সেখানে কি আমাদের পর্দার দরকার নেই?

আমি যখন পর্দা করা শুরু করি, পরিবারের অনেকেই তা পছন্দ করেন নি। আবার বাইরের অনেক মানুষ খুব উৎসাহ দিয়েছিল। আমার এক বোন আমাকে একবার বলেছিলো (আমি তখনো হিজাব শুরু করিনি), তুমিতো দেখি বাইরে গেলে গায়ে ঠিক মত ওড়না দাও, কিন্তু ছবি তে ওড়না ছাড়া ছবি তুলো এইটা তো সবাই দেখে। জিনিস টা আমার মাথায় কাজ করলো আলহামদুলিল্লাহ। সাথে সাথে ছবি গুলা ক্রপ করে শুধু আমার ফেইস টা রেখে ছবি গুলা স্টোর করে রাখলাম, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ (সুবঃ) তা’আলা আমার মত এই গুনাহগার বান্দাকে সেই বুঝটুকু তখন দিয়েছিলেন।
হিজাব করলেও হিজাব ছাড়া ছবি পোষ্ট করতাম ফেইসবুকে। এইগুলা সব শয়তান আমাকে দিয়ে করালো। আস্তাগফিরুল্লাহ!

ফেইসবুক এর আমার অনেক ফ্রেন্ডরা যারা হিজাব করেন, তারা অনেকেই হিজাব পরা ছাড়া নিজের কোন ছবিই পোষ্ট করেন না। খুব inspired হলাম তাদের দেখে। আমিও তাই ফেইসবুজে আমার হিজাব ছাড়া সব ছবি প্রাইভেসি দিয়ে দিলাম।

আমার অনেক ফ্রেন্ড তো নিজের কোন ছবিই দেন না ফেইসবুকে। আরো অনুপ্রাণিত হয়ে আল্লাহকে ভালবেসে আমিও তাই করলাম।

একজন আপুকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম, “আপু, হিজাব করা শুরু করে আবার ছেড়ে দিলেন যে”। আপুর উত্তর, হিজাব করলে নাকি উনার কান-ঘাড় ব্যথা করে।

এভাবেই শয়তান আল্লাহর পথে চলায় নানান বাধা সৃষ্টি করবে। তাই আমাদের সর্বদা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।

আমি যখন হুট করে বিয়ের কয়েক মাস আগে হিজাব শুরু করি, পরিবারের অনেকেই তা পছন্দ করে নি। ভিজা চুলে হিজাব করলে চুল পড়ে যাবে, এই বয়সে হিজাব করার দরকার কি..আরো নানান কথা। হিজাব শুরু করার কিছুদিন পর থেকে খুব মাথা ব্যথা হতে থাকে, সাথে দাঁতে ব্যথা। ভাবলাম, দাঁতে ক্যাভিটিস হল নাকি। ডেন্টিস্ট এর কাছে যেয়ে আলহামদুলিল্লাহ দাঁতে কোনো সমস্যা পাই নি। শুধু উনি বললেন, ভিজা চুলে যেনো হিজাব না করি।

পর্দা করা স্বত্তেও ফেইসবুকে হিজাব ছাড়া ছবি দিলে পরপুরুষ যারা আমাদের ফেইসবুকে আছেন, তারা তো ঠিকই দেখছেন, খুব মজা করেই দেখছেন। অনেকের কাছেই হয়তো খুব খারাপ শুনাচ্ছে আমার কথা। তবে বাস্তব সত্যি এটাই। ছেলেরা মেয়েদের ছবি যে ইচ্ছা করে দেখে, তা না। শয়তানের প্ররোচনায় এসে দেখে, আল্লাহ মাফ করুন।
আমারতো ভালোই লাগে সুন্দর মেয়ে দেখলে, সুন্দর সাজুগুজু করলে। কিন্তু, সেই সাজ যখন ননমাহরাম অনেকে দেখছে, তখন আমার ভেতর কষ্ট লাগে। তাই অনেককেই আমি পর্দার ব্যাপারে ম্যাসেজ দেই।

আর আমরা অনেকেই হিজাব করেও বিভিন্ন occasion এ হিজাব ছাড়া নানান অনুষ্ঠানে যাই। নিজেই না হয় চিন্তা করি, রিক্সা করে গেলে হিজাব করছি, হেঁটে কোথাও গেলে হিজাব করছি। কিন্তু, গাড়িতে কোনো ননমাহরাম আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেলে, বিয়ের অনুষ্ঠান এ হিজাব করছি না। হিজাব টা তাহলে কার জন্য করছি?

হিজাব তো আল্লাহ নির্দেশ, নন মাহরাম সকলের সামনেই এই পর্দা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ। কাজিন, খালু, ফুফা, দুলাভাই থেকে শুরু করে রাস্তার সব লোক একজন মেয়ের জন্য ননমাহরাম।
অনেক বাবা-মা বলেন, “বয়স হলে হিজাব করবে, এখন তো ও ছেলে-মানুষ”।

কুরআনে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আন-নুর এর ৩১ নম্বর আয়াতে নারীদের পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা প্রত্যেক সাবালিকা মেয়ের জন্য পর্দা করা ফরজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
(সুরা আন নুর, আয়াত ৩১) “ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও”।

একজন নারী বেপর্দায় চলাফেরা করলে কেবল সেই গুনাহগার হয় না, বরং এতে যদি তার বাবা-মা, ভাই কিংবা স্বামীর সম্মতি থাকে তবে তারাও গুনাহগার হবেন। পারিবারিক শিক্ষা তো আমরা পরিবার থেকে পেয়েই থাকি, কিন্তু ইসলামী শিক্ষা ক’জন পরিবার থেকে পায়! তবে, কেউ পরিবার থেকে যদি সেই শিক্ষা নাও পায়, এই অজুহাতে সে কি মাফ পেয়ে যাবে। বুখারী শরিফের হাদীসে এসেছে, জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরজ। মূলত যেসব কাজ আমাদের জন্য ফরজ সেগুলোর ব্যাপারে যথাযথ জ্ঞনার্জন করাও আমাদের জন্য ফরজ। কোন বণ যদি মনে মনে ঈচ্ছা পোষণ করে যে সে পর্দা করবে, তার উচিত এই বিষয়ে সঠিকভাবে জানা। কীভাবে পর্দা করবে? কতটুকু ঢাকবে? পর্দা শর্ত সবকিছু।
আমার এই লেখা পড়ে কারো যদি পর্দার ব্যাপারে বুঝ আসে, সেটাই আমার লেখার সার্থকতা আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকলকে পর্দার সঠিক বুঝ দান করুক। আমীন। (ঈর্ষৎ পরিমার্জিত)

নারী কথনের ফেসবুক পোস্ট থেকে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top