হেফাজত, আল্লামা শফি, আহমদ শফি

নাস্তিকদের উত্থান ঠেকাতে হেফাজতের পদক্ষেপ (পর্ব-৯)

(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)

ক্রমান্বয়ে যখন নাস্তিকরা ইসলামকে আঘাত করতে থাকে, এবং বাড়তে থাকা তাদের ঔদ্ধত্য, তখন এই বিষয়টি শংকিত করে তুলে বাংলাদেশের মুসলমানদের। ১৪ ফেব্রুয়ারি উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারির বার্ষিক মাহফিলে একযোগে সব বক্তাগণ শাহবাগের ঔদ্ধত্য আচরণের প্রতিবাদ জানান।

মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে জামিয়ার মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, ‘জাতির আবেগ-অনুভূতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নাস্তিক ও ইসলামের দুশমনরা তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করে ইসলামের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। দেশব্যাপী বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা, ব্যভিচার ছড়িয়ে দিয়ে মুসলমানদের ঈমান-আমল ও সভ্যতা-সংস্কৃতি ধ্বংসে নতুন আরেক ষড়যন্ত্র শুরু করছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার হাজারবার হোক, তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই, কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে আলেমসমাজ, মাদ্রাসা, দাড়ি-টুপি, পর্দা তথা দ্বীন-ইসলামের বিরুদ্ধে যে কোন ষড়যন্ত্রে এদেশের আলেমসমাজ ও তৌহিদী জনতা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না।’ তিনি সরকারের প্রতি অবিলম্বে ইসলাম, মুসলমান, নামাযী, দাড়ি-টুপিধারীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত সকল অপতৎপরতা বন্ধের আহবান জানান।

সম্মেলনে হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, সংবিধান সংশোধন করে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি সংযোজনের পর থেকে নাস্তিকরা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে একের পর এক যেভাবে দুঃসাহস দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক মসজিদে হামলা ও ভাংচুর চালাচ্ছে, আমাদের প্রাণের স্পন্দন হযরত মুহাম্মদ সা.-এর বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে, বয়োবৃদ্ধ দাড়ি-টুপীধারীদের ওপর উঠতি তরুণরা যেভাবে বর্বর আচরণ করছে, তাতে আমরা হতভম্ব ও বিস্মিত না হয়ে পারছি না। নাস্তিক-মুরতাদ ও ক্ষমতাসীন মহলের ইসলাম বিদ্বেষী এ আচরণের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

চট্টগ্রাম বাবুনগর মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, কলেজ পড়ুয়া এক তরুণ পুলিশের সামনে একজন বয়স্ক মুরুব্বিকে দাড়ি ধরে যেভাবে মারধর করেছে, এরকম অবস্থা সমাজে আরও ঘটতে থাকলে জমিনে সরাসরি আল্লাহর গযব নেমে আসবে।

চট্টগ্রাম হাইলধর মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা আব্দুল মালেক হালিম বলেন, চরম ইসলাম বিদ্বেষী শাহরিয়ার কবীর, ফতোয়া নিষিদ্ধকারী বিচারপতি গোলাম রববানী, ধর্মহীন শিক্ষানীতির অন্যতম প্রবক্তা জাফর ইকবাল গং এবং মহানবী সা. সম্পর্কে অশ্লীল ও অত্যন্ত ঘৃণ্যভাবে কটূক্তি ও গালিগালাজকারী আসিফ মহিউদ্দীনসহ আরও অনেক নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীরা তাদের নীল-নকশা বাস্তবায়নে এদেশকে ইসলাম শূন্য করার শপথ নিয়ে সরলমনা তরুণ প্রজন্মকে বিভিন্ন এজেন্সীর মাধ্যমে প্ররোচনা দিয়ে তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করে বিপদগামী করার ঘৃণ্য মানসে শাহবাগের নাটকের খলনায়ক বনেছে।

এই মাহফিলের পর শাহবাগের নাস্তিক্যবাদ-বিরোধী প্রতিবাদ আগুনের ফুলকির মতো ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী বলেন, ‘এই মাহফিলে লক্ষ মানুষের সামনে প্রমাণসহ শাহবাগ আন্দোলনের নাস্তিক লিডারদের গোঁমর ফাঁস করেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। তারপর থেকেই সারাদেশে জাগরণ শুরু হয়।’
মাওলানা মুঈনুদ্দিন রুহি বলেন, ‘হাটহাজারি মাদরাসার বার্ষিক মাহফিল চলাকালীন, ১৪ ফেব্রুয়ারি সবাই বৈঠকে বসেন। বেঠকে শাহবাগের নাস্তিকদের আস্ফালনের প্রতিবাদ জানানোর কৌশল ও পন্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়।’

হেফাজতে ইসলামের খোলাচিঠি এবং ১৩ দফা

১৫ ফেব্রুয়ারি আকস্মিকভাবে নিহত হয় ইসলাম এবং মহানবিকে নিয়ে কটূক্তি করে লেখালেখি করা ব্লগার রাজিব ওরফে থাবা বাবা। তার মৃত্যুর পর ইসলামকে আক্রমণ করে শাহবাগের আস্ফালন আরও বেড়ে যায়। এদিকে দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় থাবা বাবার লেখাগুলো প্রকাশের ফলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সর্বত্র। বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানায়। শুরু হয় সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং। ২২ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে হেফাজতে ইসলাম এবং সমমনা ১২টি ইসলামী দলের পক্ষে প্রথম বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশি বাধায় তা পণ্ড হয়ে যায়।

এ সময় জাতির উদ্দেশ্যে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফির পক্ষ থেকে একটি খোলা চিঠি দেয়া হয়।
খোলা চিঠি

এই খোলা চিঠিটি আল্লামা আহমদ শফী রহ. ২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তা দৈনিক আমার দেশ-এর প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপানো হয়। এই চিঠিতে ২০১৩ সালে গড়ে উঠা শাহবাগ আন্দোলনে নানা ধরণের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। এতে কাদিয়ানী সম্পৃক্ততা এবং এর অন্তরালে ইসলাম অবমাননাকারী একটি অনলাইন চক্রকে দায়ী করা হয়। এর পেছনে শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুন, জাফর ইকবাল, গোলাম রব্বানী, অজয় রায় প্রমুখের নাস্তিক পৃষ্ঠপোষকতাকেও দায়ী করা হয়। তাদের এই ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে দাবি জানানো হয় এবং এর প্রতিবাদে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। চিঠিটি প্রকাশের পর দেশব্যাপী ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। চিঠিটির পত্রিকায় প্রকাশিত হুবহু ভাষ্য আমরা এখানে তুলে দিচ্ছি,

‘সরকার ও দেশবাসীর প্রতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর খোলা চিঠি

শাহবাগে ইসলাম বিদ্বেষের প্রতিবাদে গর্জে উঠুন

প্রিয় দেশবাসী! আসসালামু আলাইকুম
আপনারা জানেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও আত্মসংশোধনমূলক সংগঠন। মূলত এটি সর্বজনীন অরাজনৈতিক একটি প্লাটফরম। মুসলমানদের ঈমান-আকীদা, সভ্যতা-সংস্কৃতি, ইসলামের বিধান ও প্রতীকসমূহের হেফাজত সম্পর্কে মুসলমানদের সচেতন করে তোলা এবং ধর্মীয় ইস্যুতে সামাজিক আন্দোলন অব্যাহত রাখা হেফাজত ইসলামের প্রধান লক্ষ্য।

বাংলাদেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার পরিচালক, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাকুল মাদারিস) এর চেয়ারম্যান, দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শীর্ষ আলিম পীরে কামেল শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বর্তমান আমীর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলাম মুসলমানদের ঈমান-আকীদা ও তাহযীব-তামাদ্দুন সংরক্ষণে সর্বাত্মক ও নিরাপষ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই সংগঠন কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি বা কারো সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধে জড়ায়নি: আগামীতে এর রাজনৈতিক কোনো এজেন্ডা নেই।

শাহবাগ চত্বরে টানা বার দিন পর্যন্ত চলমান গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে এবং সেখানকার জাগরণ মঞ্চের নানা রকম ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড গভীর পর্যবেক্ষণের পর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। সর্বস্তরের মুসলমানদেরকে সে সম্পর্কে অবগত ও সচেতন করার লক্ষ্যে এই খোলা চিঠি।
শাহবাগে যেসব ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে
০১. অগ্নিপূজক ও পৌত্তলিকদের অনুকরণে মুসলমানদের সন্তান-সন্ততিদের দ্বারা মোমবাতি প্রজ্বলন
০২. নামাজের সময়সহ দিন-রাত অনবরত মাইকে গান-বাজনা।
০৩. কথিত জাগরণ মঞ্চের মূল উদ্যোক্তা আসিফ মহিউদ্দীনসহ স্বঘোষিত নাস্তিকদের ব্লগে আল্লাহ ও রাসূল (সা.) তথা ইসলাম সম্পর্কে চরম অবমাননাকার ব্লগ লেখা ও জঘন্য মন্তব্য।
০৪. নারী-পুরুষের উদ্দাম নৃত্য, অবাধ যৌনাচার, অশ্লীলতা, মদ, গাজা সেবন ইত্যাদি অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড
০৫. পবিত্র মক্কা-মদিনার ইমাম ও খতিবদের বিশেষ পোশাক কো’বা পরিয়ে ফাঁসির অভিনয়।
০৬. শাহবাগ চত্বরের মঞ্চ থেকে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক ও দেশের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে হত্যার হুমকি ও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ।
০৭. দাড়ি-টুপি পরিহিত ব্যক্তির গলায় রশি বেঁধে রাসূলের সুন্নাত ও ইসলামের প্রতীকসমূহের অবমাননা।
০৮. কোমলমতি, কচি-কাঁচা শিশুদের ‘…. ধরে ধরে জবাই কর’ ইত্যাদি অপরাধ প্রবণতামূলক স্লোগান শিক্ষা দেয়া
০৯. বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের আবহমান ইসলামি সংস্কৃতির বিপরীতে ভারতীয় অপসংস্কৃতির নেতিবাচক প্রদর্শনী।
১০. সব ধরনের ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের উস্কানি দিয়ে দেশকে অনিবার্য সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়া
১১. গভীর রাত পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থানকারী তরুণ-তরুণীদের অবাধ মান্যমাধি ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে ফেইসবুক, ব্লগসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় ।
১২. সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য হুমকি দেয়া সত্ত্বেও শাহবাগ চত্ত্বর নিয়ে এক শ্রেণীর একটি দেশ মহত ছিল। গণমাধ্যমে দৃষ্টিকটূ ও সীমা ছাড়ানো মাতামাতি।
১৩. রাজধানীর বারডেম ও বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের রোগীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও রাস্তা বন্ধ করারঅমানবিক পদক্ষেপ।
১৪. স্বঘোষিত নাস্তিক ব্লগারদের ইসলাম অবমাননার প্রমাণ/ প্রতিবেদন তুলে ধরে নেয়া পোস্ট / লেখা প্রকাশ করার কারণে সম্প্রতি নিরপেক্ষ অনেক ইসলামী ব্লগ সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেয়া।

কাদিয়ানী সম্পৃক্ততা

যুদ্ধাপরাধের বিচার মূলত রাজনৈতিক ইস্যু হওয়ায় আমরা সে সম্পর্কে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দিই নাই। কিন্তু অনুসন্ধানে আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচারের নেপথ্যে কাদিয়ানীদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছি। একই মঞ্চে ঘাদানিক নেতা, নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষী শাহরিয়ার কবীর এবং আহমদিয়া মুসলিম জামাতের (কাদিয়ানী) নায়েবে আমীর আবদুল আওয়াল খান পাশাপাশি বসে অনুষ্ঠান করেছে। বর্তমান যুদ্ধাপরাধের বিচারের পেছনে কাদিয়ানীরাও পরোক্ষভাবে বামপন্থী ও সরকারি সমর্থনে সক্রিয় রয়েছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শাহবাগ চত্বর থেকে ১১ জন কাদিয়ানী যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। বামপন্থী শাহরিয়ার কবীরের মতো মুশরিক ও মুরতাদরা একদিকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, আর অন্যদিকে কাদিয়ানীদের মতো মুরতাদ সংগঠনকে সাথে নিয়ে ইসলাম বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। তাদের এ অবস্থান সম্পূর্ণ স্ববিরোধী।

অন্তরালে ইসলাম অবমাননাকারী ‘অনলাইন চক্র

মুক্তমনা একটি চরম ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের ওয়েবসাইট। এ ওয়েবসাইটে ইসলাম ও মহানবী (স.) সম্পর্কে কটূক্তি ও নানা ধরনের অবমাননাকর পোস্ট দেওয়া হয়। শাহবাগ আন্দোলনকে কে করে এ ওয়েবসাইটটি এখন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মুক্তমনার বিভিন্ন পেইজে ‘বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে মুক্তমনা’, ‘আগামী নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক দলের অংশগ্রহণ বাতিল কর-মুক্তমনা’ এ ধরনের ইসলাম বিরোধী নানা স্লোগান বড় করে লেখা রয়েছে। আর মুক্তমনাকে যাবতীয় সাহায্য ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এই পতিত সংগঠনটি মুক্তমনা ওয়েবসাইটকে ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের কারণে ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক- ২০০৭’ পুরস্কার প্রদান করেছিল। মুক্তমনার ই-বুকে অবিশ্বাসের দর্শন, বিবর্তনের পথ ধরে, সমকামিতা, যে সত্য বলা হয়নি, ইসলাম ও শরিয়া প্রভৃতি বই পাওয়া যায় যেগুলো ইসলাম, কোরআন ও মহানবী (স.)-এর চরিত্র সম্পর্কে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ ও অশ্লীল কটূক্তিতে ভরা। সেই মুক্তমনার সাথে সংশ্লিষ্ট মুরতাদ নাস্তিকরাই বর্তমান শাহবাগ নাটকের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। শাহবাগের পেছনে যেসব ব্লগার ও অ্যাক্টিভিটিস্ট রয়েছে তাদের মধ্যে রাজীব আহমেদ একজন। ব্লগে ‘থাবা বাবা’ ছদ্মনামে থাকা তার পোস্টগুলোতে সে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে ‘মোহাম্মক’ বলে ব্যঙ্গ করেছে। মোহাম্মকের সফেদ লুঙ্গী, টিলা ও কুলুখ, সিজদা, মদ ও মোহাম্মকসহ অসংখ্য এমন সব অশ্লীল পোস্ট পাওয়া যায় যেগুলো মহানবী (স.)-এর বিরুদ্ধে মার্কিন ও ইউরোপীয় ব্যঙ্গচিত্রকেও হার মানায়।

ব্লগার আরিফুর রহমান ইংল্যান্ডে থাকেন, বর্তমানে লিখছেন ওয়ার ও বিভিন্ন ‘নিক’ নামে (সামহোয়্যার ইন ব্লগ)। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্রাটেজি ফোরামের নেতা। আরেকজন নাস্তিক ব্লগার নিঝুম মজুমদারের সাথে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দেন। শাহবাগ আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা আসিফ মহীউদ্দিন এখন বাংলাদেশের উদীয়মান নাস্তিক হুমায়ূন আজাদ। শাহবাগ নাটকের অন্তরালে তৎপর তথাকথিত অনলাইন অ্যাক্টিভিটিস্টদের মধ্যে অন্যতম হলো চরম ইসলাম বিদ্বেষী প্রসিদ্ধ ব্লগ সামহোয়্যার ইন-এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্লগাররা।

শাহবাগ চত্বরে নাস্তিক পৃষ্ঠপোষকতা

খোলা চিঠিতে শাহবাগ আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে বলা হয়েছে, ‘শাহবাগের তথাকথিত জাগরণ মঞ্চে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন ইসলাম ও দেশবিরোধী অসংখ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবীর, বিশিষ্ট বাম বুদ্ধিজীবী মুনতাসীর মামুন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মূর্তি স্থাপনের নেপথ্য নায়ক জাফর ইকবাল, ফতোয়া নিষিদ্ধের রায় প্রদানকারী সাবেক বিচারপতি গোলাম রব্বানী, হিন্দু নাস্তিক অজয় রায়, বাম ঘরানার চিহ্নিত কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ, ইসলামবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন ও সংবিধান থেকে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ বাক্যটি বাদ দেয়ার নেপথ্যে সক্রিয় ব্যক্তিরাই শাহবাগ নাটকের পৃষ্ঠপোষক ও মূল কুশীলব।’

সরকারের প্রতি আমাদের দাবী

এই চিঠিতে সরকারের প্রতি ৪টি দাবি জানানো হয়। যথা,

১. সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে চলমান সব আন্দোলনের প্রতি যেভাবে ব্যাপক সহানুভূতি প্রদর্শন করছে অনুরূপভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ইসলাম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. আল্লাহ, রাসূল, কুরআন, দাড়ি-টুপি, পর্দা-হিজাব প্রভৃতি ইসলাম প্রতীক অবমাননার মাধ্যমে বিরাজিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. প্রকাশ্য রাজপথে দাড়ি-টুপিধারী পথচারীকে অপমান করার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক অবিলম্বে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় তাওহীদি জনতার গণজমায়েত, সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং ও গণঅবস্থানের গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে হবে। কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির যেকোনো কর্মসূচীতে কোনো বাধা দেয়া যাবে না। অন্যথায় দেশের লাখো মুসলিম জনতা সকল বাধা অতিক্রম করে ঈমান-আক্বীদা ও ধর্মীয় প্রতীকসমূহের মর্যাদা রক্ষায় সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান

চিঠির শেষে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘দেশের সর্বস্তরের মুমিন-মুসলমান জনগণের উদ্দেশে আমরা বলতে চাই শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক দৃষ্টিতে বিচার না করে; বিশেষ কোনো দল বা গোষ্ঠীর পক্ষে বা বিপক্ষে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে সরলীকরণে না গিয়ে, এর অর্ন্তর্নিহিত রূপ ও চরিত্র অনুধাবন করুন। শাহবাগ চত্বরের কথিত জাগরণ মঞ্চের বিগত দুই সপ্তাহের কার্যক্রমকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে পরিষ্কার হয়ে গেছে-এটা মোটেও স্বাধীনতার স্বপক্ষ-বিপক্ষের লড়াই নয়। এবং দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে নিজের ঈমান, আক্বীদা-বিশ্বাস ও ইসলামের প্রতীকসমূহের হেফাজতের পক্ষে সোচ্চার ও জোরালো ভূমিকা রাখুন। নাস্তিক, মুরতাদ ও ইসলামবিরোধী অপশক্তির আস্ফালনের বিরুদ্ধে সারা দেশে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলুন।’

খোলা চিঠি প্রকাশে নাস্তিকদের প্রতিক্রিয়া

এই খোলা চিঠি প্রকাশের পর সুশীল মিডিয়া এই খোলা চিঠি নিয়ে নোংরা হৈচৈ শুরু করে। একাত্তর টিভিতে প্রচারিত পলাশ রহমানের ডকুমেন্টারি ‘হেফাজতনামা’য় বলা হয়, ‘খোলা চিঠিটি আহমদ শফির নয়। বরং আমার দেশ পত্রিকার অফিসে চিঠিটি লিখে আহমদ শফির নামে চালিয়ে দেয়া হয়।’ আসলেই কি তাই? এ বিষয়ে মাওলানা মুঈনুদ্দিন রুহি বলেন, ‘খোলা চিঠিটি একদম নিরেট। আল্লামা আহমদ শফি এই চিঠি লেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনজনকে। আমি, মাসিক মুঈনুল ইসলামের সম্পাদক মাওলানা মুনির এবং হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদি। আমরা এই তিনজন পরামর্শ করে চিঠিটি লিখেছি। আল্লামা আহমদ শফি চিঠিতে নিজে সাইন করেছেন। এরপর কোনো পত্রিকা এতে একটি শব্দও যুক্ত করেনি।’

এভাবেই সুশীল মিডিয়া মিথ্যাচার করে থামিয়ে দিতে চেয়েছে হেফাজতে ইসলামের অগ্রযাত্রা। কিন্তু ততদিনে মানুষ জাগতে শুরু করেছে। চারদিকে শুরু হয়েছে হেফাজতের শানে রিসালাত সম্মেলন। বিভিন্ন জেলার আলেমগণ হেফাজতের কেন্দ্রীয় অফিসে ফোন করে স্বেচ্ছায় শানে রিসালাত সম্মেলনের প্রোগ্রাম নিচ্ছেন। চট্টগ্রাম-ভিত্তিক হেফাজতে ইসলাম হয়ে উঠছে পুরো বাংলাদেশের। অঘোষিতভাবেই হেফাজতে ইসলাম নাস্তিক্যবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে আসনে উঠে আসে। মানুষের আস্থা ও ভরসার জায়গায় পরিণত হয়।

৯ মার্চ হাটহাজারি মাদরাসায় ওলামা সম্মেলনের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। সম্মেলনে সরকারের কাছে ১৩ দফা পেশ করা হয়। এই ১৩ দফা রচনা করেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুঈনুদ্দিন রুহি। তিনি বলেন, ‘আমাকে দেয়া হয়েছিল দফা লেখার দায়িত্ব। সম্মেলনের আগের দিন রাত ৩টায় দফাগুলো লেখা শেষ হয়। টাইপ এবং প্রিন্টিং করেন মাসিক মুঈনুল ইসলামের সম্পাদক মাওলানা মুনির। তিনি আমাকে বললেন, ‘দাবি বেশি হয়ে গেলো না?’ আমি বললাম, ‘যেহেতু ২০১৩ সালে আন্দোলন করছি, তাই ১৩ দফা দেয়া হয়েছে। ’

হেফাজতের ১৩ দফা দাবি ও তার ব্যাখ্যা

৯ মার্চ হাটাহাজারি মাদরাসার সম্মেলনে এই ১৩ দফা দাবি পেশ করা হয়। পরে এ নিয়ে নানা মহলে আলোচনা উঠে। যেকারণে দফাগুলোর ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন হয়। তখন হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি নিরসনে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ১৩ দফা দাবির এই ব্যাখ্যা প্রকাশ করেন। ব্যাখ্যাটি দেশের জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা এখানে প্রসিদ্ধ অনলাইন পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (এপ্রিল ২৩, ২০১৩) থেকে উদ্ধৃত করছি।

ধারা ও তারা ব্যাখ্যা
১। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে।
ব্যাখ্যা : বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এ দেশের জনসংখ্যার ৯০ ভাগই মুসলমান। আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস মুসলমানদের ঈমানের প্রধান বিষয়। ধর্মপ্রাণ জনগণের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন হিসেবেই সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসকে সংবিধানের প্রধান মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বামপন্থীদের প্রভাবাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার কার মতামতের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে সংবিধান সংশোধন করে। সর্বশেষ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মূলনীতি থেকে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দিয়ে তদস্থলে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি যুক্ত করে। সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে একতরফাভাবে এ কাজটি করে দেশকে ধর্মহীনতার দিকে নিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করেছে। এ কারণেই সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতিটি পুনঃস্থাপনের জন্য এ দেশের তৌহিদী জনতা দল-মত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে রাজপথে নেমেছে। হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত যৌক্তিক কারণেই দেশের মানুষের ইমান, আকিদা ও চিন্তা-চেতনার সঙ্গে জড়িত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে তাদের প্রধান দাবি হিসেবে পেশ করেছে।
ইতোমধ্যে ৬ এপ্রিল লংমার্চের মাধ্যমে সারা দেশের কোটি কোটি মানুষ এই দাবির প্রতি একাত্দতা প্রকাশ করেছে। সরকারি প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ঢাকার মহাসমাবেশে জড়ো হওয়া লাখ লাখ তৌহিদী জনতার সঙ্গে সারা দেশের মানুষ এই দাবিসহ ১৩ দফা দাবির প্রতি একাত্দতা ঘোষণা করেছে। এটি এখন এ দেশের তৌহিদী জনতার প্রাণের দাবি। এ দাবি অত্যন্ত পরিষ্কার এবং যৌক্তিক।

২। আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর কোনো ধর্ম কিংবা দেশ-সমাজে ধর্ম অবমাননাকে স্বীকৃতি দেয়নি। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার কোনো অধিকার কারও নেই। তারপরও একশ্রেণীর ধর্মান্ধ, ধর্মদ্রোহী নাস্তিক মুরতাদ ধর্ম অবমাননা করে থাকে এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকে। এ জন্য পৃথিবীর বহু দেশে ধর্ম অবমাননার কঠোর শাস্তির বিধান সংবলিত আইন রয়েছে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও এক শ্রেণীর ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক মুরতাদ ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ক্রমাগতভাবে ইসলামের ওপর আঘাত করে আসছে। এই ধর্ম অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রতিকারে এ দেশের আলেম-উলামাসহ তৌহিদী জনতা তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন করার পাশাপাশি ধর্ম অবমাননার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে আইন পাসের দাবি জানিয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু কোনো সরকারই গুরুত্বপূর্ণ ও ন্যায্য এই দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। সর্বশেষ শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্লগারদের ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে চরম অবমাননা ও কটূক্তির খবর জনসমক্ষে আসে। তার আগে সর্বোচ্চ আদালত ব্লগারদের ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও বর্তমান সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের একাধিক বাণীতে নাস্তিক মুরতাদদের ন্যায্য শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। এ শাস্তি কার্যক্রম বহাল করার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র কিংবা শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের দরকার নেই। শরিয়তের যেসব বিধানমতে মুসলিম সমাজে বিয়ে হয়, তালাক হয়, সম্পদ বণ্টন হয়, সেসব প্রচলিত ধারায় এই আইন বাস্তবায়ন করা যায়।

৩। তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কতিপয় ব্লগার, নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপতৎপরতা ও প্রচারণা বন্ধ করতে হবে এবং যেসব নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তি-সংগঠন যে কোনো মাধ্যমে আল্লাহ-রাসূল (সা.), ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করত দেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, তাদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ব্যাখ্যা : তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্লগার এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যারা মুক্ত চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার আড়ালে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, প্রিয় নবী রাসূল (সা.), পবিত্র কোরআন ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে জঘন্য কুৎসা ও অবমাননায় জড়িত, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ছাড়াও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে এবং সভ্যতা-ভব্যতা ও গণতন্ত্রের কোনো মাপকাঠিতেই এমন কুৎসা ও অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না। ধর্ম-অবমাননাবিরোধী আইনের আওতায় এসব ব্লগারের সবাইকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দাবি করছি আমরা। কারণ এদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে, দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে দ্বিগুণ উৎসাহে এ ধরনের হীন তৎপরতা অব্যাহত রেখে দেশকে চরম বিশৃঙ্খলা ও গণঅসন্তোষের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা দেশের স্বাধীনতা, সুশৃঙ্খলা ও আইনি কাঠামোর জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে।

৪। দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নারী জাতির সার্বিক উন্নতির বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে তাদের নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মস্থল, সম্মানজনক জীবিকা এবং কর্মজীবী নারীদের ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে-বাইরে ও কর্মস্থলে নারীদের ইজ্জত-আব্রু ও যৌন হয়রানি থেকে বেঁচে থাকার সহায়ক হিসেবে পোশাক ও বেশভূষায় শালীনতা প্রকাশ ও হিজাব পালনে উদ্বুব্ধকরণসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং একই লক্ষ্যে নারী-পুরুষের সব ধরনের বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে অবাধ ও অশালীন মেলামেশা, নারী-নির্যাতন, যৌন হয়রানি, নারীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার সহিংসতা, যৌতুকপ্রথাসহ যাবতীয় নারী নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
ব্যাখ্যা : তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাস্তিক্যবাদী ব্লগাররা শুধু আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেই থামেনি, সঙ্গে সঙ্গে আবহমান বাংলার রক্ষণশীল সামাজিক অনুশাসন এবং সংস্কৃতির ওপরও আঘাত করে অনেক কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যে করে ফেলেছে। বিয়ে-বহিভর্ূত ও ঘনিষ্ঠ অনাত্দীয় নারী-পুরুষের দৃষ্টিকটু বিচরণ ও রাস্তায় একসঙ্গে; এমনকি একই তাঁবুতে অবস্থান করে রাতযাপনের মতো অনৈসলামিক, অনৈতিক, অসামাজিক ও এ দেশের আবহমান কৃষ্টি-কালচার-সংস্কৃতিবিরোধী কাজ প্রকাশ্যে ঘটছে শাহবাগে। ধর্মীয় অনুভূতি ছাড়াও যা পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতীয় সাংস্কৃতিক দৃষ্টিতেও কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

৫। নারীনীতি ও শিক্ষানীতির ইসলামবিরোধী ধারা ও বিষয়সমূহ বিলুপ্ত করতে হবে এবং শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলামের মৌলিক শিক্ষা মুসলিম ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে।
ব্যাখ্যা : ত্যাজ্য সম্পত্তিতে সমঅধিকারের আইনসহ নারীনীতির পবিত্র কোরআন-সুন্নাহবিরোধী ধারাগুলোই আমরা সংশোধনের দাবি করছি। এ ছাড়া জাতিসংঘ কর্তৃক বিতর্কিত সিডো সনদ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। আমরা নারী সমাজকে স্পষ্ট করে জানাতে চাই, ইসলাম সর্বোত্তম উপায়েই নারীদের মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার পক্ষে। আর বর্তমানের নাস্তিক্যবাদীরা নারীদের কেবল আলঙ্কারিক ও ভোগ্যপণ্য রূপেই বিবেচনা করে।
অন্যদিকে সরকার ঘোষিত শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে সংকোচিত করা হয়েছে। চলতি ২০১৩ সালের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্য বইসমূহে ইসলামের যে অপব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে, তা চরম অগ্রহণযোগ্য। এ ছাড়া কোমলমতি ছেলেমেয়ে শিশুদের ক্লাসে একসঙ্গে বসিয়ে যেভাবে যৌন শিক্ষা চালু করা হয়েছে, তা এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নৈতিকতা ও সুস্থ সামাজিক অনুশাসনকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ কারণে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ থেকেই আমরা দাবি জানিয়ে আসছি যে, শিক্ষার সব স্তরে সঠিক ধর্মশিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইসলাম সবসময় অন্যায়, অবিচার, ঘুষ-দুর্নীতি, মদ-জুয়া, মিথ্যা, খুন, ধর্ষণ, মারামারি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখে। সুতরাং সুস্থ মানসিকতাপূর্ণ আদর্শ নাগরিক গঠনে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প কিছু হতে পারে না।

৬। ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলনের নামে শিরিকী সংস্কৃতিসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা : দেশে ভাস্কর্যের নামে আবক্ষ নারী-পুরুষ বা জীবজন্তুর মূর্তি তৈরি ও ফুল দিয়ে সেসবকে সম্মান প্রদর্শনের রেওয়াজ যে হারে শুরু হয়েছে, তা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কখনো কাম্য হতে পারে না। ইসলামে স্পষ্টভাবে মূর্তি তৈরি ও সম্মান প্রদর্শনকে শিরক ও হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আমরা কখনো প্রাণহীন শিল্পকর্মের বিরোধী নই। বরং ইসলাম সৌন্দর্য ও জ্ঞান-উদ্দীপক শিল্পকর্মকে উৎসাহিত করে।
অপরদিকে মঙ্গলপ্রদীপ ও মোমবাতি প্রজ্বলন, অগি্নপূজক ও পশ্চিমাসংস্কৃতি। কথিত গণজাগরণ মঞ্চ থেকে এটাকে এ দেশে ঢালাওভাবে প্রচলনের জোর চেষ্টা চলছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে অগি্নপ্রজ্বলনের মতো পশ্চিমা ও বিজাতীয় এই সংস্কৃতির প্রচলন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

৭। রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা : বর্তমানে উপরোক্ত গণমাধ্যমে ইসলামী নিদর্শন নিয়ে হাসি-তামাশা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। খুনি, দাঙ্গাবাজ, সন্ত্রাসী ও দেশদ্রোহী চরিত্রে পাজামা-পাঞ্জাবি ও দাড়ি-টুপি চরিত্রধারীদের উপস্থাপন করা হয়, যা স্পষ্টতই ইসলাম ও মুসলমানদের ষড়যন্ত্রমূলক হেয় করা ছাড়া আর কিছু নয়। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এমন আচরণ কোনোভাবেই চলতে দেওয়া যায় না এবং এটা সুস্থ চিন্তার মতপ্রকাশও হতে পারে না।

৮। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসলি্লদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা : বর্তমানে রাজনৈতিক কারণে মসজিদ-মাদ্রাসায় অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন ধরনের হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। জুমার দিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের বিভিন্ন গেট বন্ধ রাখা, গুলিবর্ষণ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, তল্লাশির নামে হয়রানি, বুট জুতা নিয়ে পুলিশের মসজিদে প্রবেশসহ হরেক রকমের অবমাননা ও মুসলি্লদের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় ওয়াজ ও তাফসির মাহফিলে বাধাদান, মাইক খুলে নেওয়া ও অনুমতি না দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। ধর্মকর্ম পালনে এবং মসজিদে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে চাপিয়ে দেওয়া ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

৯। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইমান ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও ও খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মান্তরকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা : পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে পশ্চিমা খ্রিস্টান বিশ্ব সুগভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত; এটা এখন আর কারও কাছে গোপন বিষয় নয়। খ্রিস্টান মিশনারিসমূহের পার্বত্য এলাকায় ধর্মান্তরকরণ প্রক্রিয়া এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে, যা এ দেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতার জন্য মারাত্দক হুমকি সৃষ্টি করছে। এ ছাড়াও অনেকগুলো চিহ্নিত এনজিও দেশের শিক্ষায় অনগ্রসর ও অনুন্নত এলাকায় বেছে বেছে সাহায্য-সহযোগিতা ও শিক্ষাদানের আবরণে মুসলমান শিশু-কিশোর ও বয়স্কদের খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। আমাদের দাবি হলো, সরকার আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীসহ অন্যান্য তদারকি সংস্থার কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এসবের নিয়ন্ত্রণ করে সন্দেহভাজনদের দেশ থেকে বহিষ্কার করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে হুমকি মুক্ত রাখতে হবে।

১০। কাদিয়ানীদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা : কখনো শেষ নবী, কখনো ঈসা (আ.) এবং কখনো ইমাম মাহদির দাবিদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অনুসারী আহমদিয়ারা নিজেদের মুসলমান দাবি করে এ দেশের সরলমনা মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে কাদিয়ানী বা আহমদিয়া জামাতভুক্ত করে ইমানহারা করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক সরলমনা মুসলমানই ইমানহারা হচ্ছেন। কাদিয়ানী তথা আহমদিয়াদের এই ইমানবিধ্বংসী প্রতারণা বন্ধ করার জন্য বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশেও তাদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং তাদের প্রতারণাপূর্ণ সব অপতৎপরতা ও অপপ্রচার নিষিদ্ধ করতে হবে। এই দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।

১১। রাসূলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-উলামা, মাদ্রাসার ছাত্র, মসজিদের ইমাম-খতিব ও তৌহিদী জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা : দেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের যৌক্তিক ইমানি দাবিগুলোর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন রাসূলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-উলামা, মাদ্রাসা ছাত্র, মসজিদের ইমাম-খতিব এবং তৌহিদে বিশ্বাসী মুসলমান। কেবল ইসলামের কথা বলতে বা দাবি জানাতে গিয়ে তারা যে মিছিল সমাবেশ ও প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছে, তাতে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও গণহত্যা চালানো হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এদের ধর্মকর্ম পালনে হুমকি ও ভয়ভীতি দানের খবরও আসছে। একটা স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমনটা চলতে পারে না।

১২। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব আলেম-উলামা, মাদ্রাসার ছাত্র, ইমাম-খতিব ও তৌহিদী জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
ব্যাখ্যা : হেফাজতে ইসলামের ইমান-আকিদা ও ইসলামের ইজ্জত সংরক্ষণ, দেশের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন নিরাপদ রাখার চলমান আন্দোলনে অন্যায়ভাবে অনেক আলেম-উলামা, মাদ্রাসা ছাত্র, মসজিদের ইমাম-খতিব ও তৌহিদে বিশ্বাসী নিরীহ নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব আলেম-উলামা, মাদ্রাসা ছাত্র, ইমাম-খতিব ও তৌহিদী জনতাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

১৩। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
ব্যাখ্যা : আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে উজ্জ্বল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। বাংলাদেশে বহু সম্প্রদায়ের সম্প্রীতিমূলক অবস্থান বিশ্বের অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। বাংলাদেশের এই সুনামকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারী মহল এ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সহাবস্থানকে কলঙ্কিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত ও শাস্তিদান এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহের ন্যায্য অধিকার ও নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার দাবি জানাচ্ছি। (১৩ দফা ও তার ব্যাখ্যা এখানেই শেষ।)

চলবে…

হেফাজতে ইসলাম কেন গঠন করতে হলো (১ম পর্ব)
হেফাজতে ইসলাম কেন গঠন করতে হলো (পর্ব-২)
হেফাজতে ইসলাম কেন গঠন করতে হলো (পর্ব-৩)
যেভাবে হেফাজতের আবির্ভাব (পর্ব-৪)
হেফাজতে ইসলামের প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটি (পর্ব-৫)
ইনোসেন্স অফ মুসলিমস ও হেফাজতের হুব্বে রাসূল সমাবেশ (পর্ব-৬)
গণজাগরণ মঞ্চ : যেভাবে শুরু হয় শাহবাগ আন্দেলন (পর্ব-৭)
ভয়ঙ্কর ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারচক্র (পর্ব-৮)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top